• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৮:৩৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৮:৪৮ এএম

২ মাসেই সরকারের ব্যাংক ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা

২ মাসেই সরকারের ব্যাংক ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা

সরকারের ব্যাংক ঋণ

...............

● সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই 

● নানাভাবে টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক   

● মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা

..................................

নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ১১২ কোটি টাকা। এতে করে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে (জুন মাস শেষে) সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের আগস্ট শেষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে মাত্র দুই মাসে ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার ১১২ কোটি টাকা।

গত বছরের আগস্ট শেষে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৯৬ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত এক বছরে বেড়েছে ৩১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখো গেছে, জুলাই এবং আগস্ট মাসে সরকারের নেয়া মোট ঋণের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছে মাত্র ৯২৫ কোটি টাকা এবং বাকি ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা নিয়েছে তারল্য সঙ্কটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দৈনিক জাগরণকে বলেন, মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে কম ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু সরকারকে যে পরিমাণ ঋণ দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, সেটি দেয়া হলে বেসরকারি খাত এই পরিমাণ ঋণও পাবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় অর্ধেক ঋণ সরবরাহের কারণ হিসেবে ওই সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এক মাসে বড় অঙ্কের ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিত। বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতো। মূলত টাকার সঙ্কটের কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের যোগান দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরের আরও কয়েক মাস বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে নানাভাবে টাকার যোগান দেয়া হবে। ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের নগদ টাকার সঙ্কট না হয় সে জন্য রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর টাকার যোগান অব্যাহত রাখা হবে। একই সাথে সররকারের ঋণের যোগান দিলে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে সরকারের ঋণ আকারে টাকার যোগান দেয়া হলে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক টাকা বের করা হলে বাজারে সাড়ে সাত টাকার প্রভাব পড়ে। ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির কিছুটা চাপ বেড়ে গেলেও মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ব্যয় মেটাতে ব্যাংক খাতে ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা ৩০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। কারণ সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নেয়া হয়। ফলে ব্যাংক খাত থেকে কম ঋণ নিতে হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বড় অঙ্কের ঘাটতি বাজেট দেয়ায় প্রতি বছরই সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে বাড়ছে এসব ঋণের সুদ ব্যয়।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ঋণ নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিচর্যা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আর এতে কমে যাচ্ছে প্রকৃত উন্নয়ন ব্যয়। আবার স্থানীয় ব্যাংক থেকে অতিমাত্রায় ঋণ নেয়ায় ব্যাংকের প্রকৃত বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সরকার তার আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিনা সুদে চার হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই ৯১ মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের সম-পরিমাণ সুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়। এটাকে ব্যাংকিং ভাষায় ওভার ড্রাফট বা ওডি বলে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সরকার ব্যাংক থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়ায় তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, তারা সরকারের ঋণ দিয়ে যে পরিমাণ মুনাফা করছেন, আমানত সংগ্রহ করতে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। যেমন সরকার ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিলে সর্বোচ্চ মুনাফা দিচ্ছে ১০ টাকা। তবে যে ক্ষেত্রে ১০ টাকা দেয়া হচ্ছে তা দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ। কিন্তু আমানত সংগ্রহ করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ১০ টাকার ওপরে। এতে দেখা যাচ্ছে সরকারের ঋণ দিতে গিয়ে তাদের নিট লোকসান হচ্ছে। আর এ লোকসান সমন্বয় করা হচ্ছে বেসরকারি খাত থেকে তুলনামূলক বেশি সুদ নিয়ে।

এআই/এসএমএম

আরও পড়ুন