• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৭:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৭:১৯ পিএম

জেল জরিমানায়ও স্থিতিশীল হচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার 

জেল জরিমানায়ও স্থিতিশীল হচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার 
পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের স্তুপ - ফাইল ছবি

জেল জরিমানায়ও স্থিতিশীল হচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। বাজার সহনীয় রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে। তারপরও থামছে না পেঁয়াজের দাম বাড়া। 

জানা গেছে, চট্টগ্রামের চাকতাই পাইকারি বাজারেও দাম বাড়তি রয়েছে পেঁয়াজের। রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার ও কাপ্তান বাজারেও একই অবস্থা। পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যের কারণে জনমনে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। গত তিন মাসে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে ভালো কোনো খবর দিতে পারেননি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।
 
বাজার মনিটরিং হচ্ছে না, এমন অভিযাগ করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কোনোভাবেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গতকালের চেয়েও আজ দেশি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৯০ টাকায়। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ একদিনের ব্যাবধানে ৪০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিশরের বড় বড় আকারের পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সরেজমিন রাজধানীর কাপ্তান বাজার, শ্যামবাজার ও কারওয়ানবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

পেঁয়াজের এমন লাগামহীন দামে ক্ষোভ ক্রেতাদের মাঝে। পেঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন সে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে পেঁয়াজ কেনার পরেও দেশে কোন অজুহাতে এত দাম প্রশ্ন বাজারে আসা ক্রেতাদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান তাদের। বিক্রেতাদের দাবি, তাদের বেশি দামে কিনতে হয় বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে চলছে তেলেসমাতি। 

এদিকে জেল জরিমানায়ও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না পেঁয়াজের দাম। দুপুরে মাত্রাতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় শ্যামবাজারে ৩ দোকানকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানীর শ্যামবাজারের আড়তে মাত্রাতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা এবং পেঁয়াজের মূল্য তালিকা না টাঙানোয় তিন দোকানকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মকর্তার একটি দল। অভিযানের সময় দোকানগুলোতে পেঁয়াজের বিপুল মজুত থাকলেও পেঁয়াজ কেনার কোনো চালান দেখাতে পারেনি দোকানগুলো। এমন অভিযোগ রয়েছে একাধিক পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে। 

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে শ্যামবাজারের আড়তে অভিযান চালায় বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম। এ টিমে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজের বিপুল মজুত দেখা গেছে। কিন্তু দাম কমাচ্ছে না। বরং উচ্চ দামে বিক্রি করছে পেঁয়াজ। 

অভিযানে মেসার্স বাণিজ্যালয়, নিট বাণিজ্যালয়, সিকদার অ্যান্ড সন্স ও রফিক ট্রেডার্স নামে চারটি দোকানে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে রফিক ট্রেডার্স পাইকারি ১২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও পাশের বাকি দোকানগুলো পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। পরে রফিক ট্রেডার্স ছাড়া বাকি তিন দোকানকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, পেঁয়াজ মজুত করে বেশ কয়েকদিন ধরেই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আজ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানের শুরুতে নিট বাণিজ্যালয়ে আমরা পেঁয়াজের মজুত পেয়েছি। কিন্তু তারা এর কোনো চালান দেখাতে পারেনি। তারা ১৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। মেসার্স বাণিজ্যালয় পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। তারাও পেঁয়াজ কেনার চালান দেখাতে পারেনি। একই অভিযোগ রয়েছে সিকদার অ্যান্ড সন্সের বিরুদ্ধেও।

জব্বার মন্ডল জানান, দোকানগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য টাঙানো থাকলেও তাতে পেঁয়াজের দাম উল্লেখ নেই। এসব অসঙ্গতির কারণেই দোকানগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে।

নিট বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক মামুন বলেন, আমরা প্রতিদিনের পেঁয়াজ প্রতিদিন বিক্রি করি। চট্টগ্রাম থেকে পেঁয়াজ আসে আমাদের। সেখানে দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়।

কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে শ্যাম বাজার থেকে ১৭৫ টাকা কেজি করে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে এসেছি। বিক্রি করছি খুচরা ১৯০ টাকা এবং পাইকারিতে ১৮৫ টাকা করে। তিনি বলেন, গতকালকে বার্মার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১৪০ টাকা করে। আজকে শ্যামবাজারে বার্মার পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। তাই বাংলাদেশি নিয়ে এসেছি। পাইকারিতে শ্যমাবাজারেই ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, শ্যামবাজারে আজকে মিশরের পেঁয়াজও পাওয়া যায়নি। আজকে বাজারে পেঁয়াজের পরিমাণ খুব কম বলেও জানান এ পেঁয়াজ বিক্রেতা।

কাপ্তান বাজারের আরেক পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা বাবলু বলেন, মিশরের বড় বড় সাইজের পেঁয়াজ আজকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। আর বার্মা বিক্রি করছি ১৮০ টাকা কেজি। গতকালকের চেয়ে আজকে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সর্বশেষ প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি ট্রাক বসিয়ে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল সংস্থাটি।
জনপ্রতি এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছিলেন। আর ট্রাক সেলের ডিলার পাচ্ছিলেন প্রতি দিন এক টন করে পেঁয়াজ। অর্থাৎ দিনে একটি ট্রাক থেকে প্রায় এক হাজার পরিবারের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হচ্ছিল।তবে চলতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সপ্তাহিক ছুটির কারণে বিক্রি বন্ধ ছিল। রোববার ছিল সরকারি ছুটি। তাই এই তিন দিন টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ ছিল। তবে সোমবার বিক্রি হচ্ছে। এতে করে লাইনে দাড়িয়ে থেকে  পেঁয়াজ নেয়া মানুষের চাহিদা পুরণের চেয়ে ভোগান্তিই বেশি বলে মন্তব্য করেন অনেকে। 
অন্যদিকে আড়তে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, পেঁয়াজের সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে পেঁয়াজের গাড়ি আসতে না আসতেই যশোর-বরিশাল-খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজের গাড়ি চলে যাচ্ছে। ফলে আড়তে পেঁয়াজের সংকট থাকছে। এর মধ্যে কেউ কেউ মজুত করায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে। বাজার মনিটরিং করার কেউ নেই। এরফলে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে জনসাধারনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর দফতরে যান সাংবাদিকরা। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন, আর বাণিজ্য সচিব এ বিষয়ে গাণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন