• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ১২:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ১২:০৩ পিএম

বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর

বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ঘটা করে ফোন করে খবর নিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু প্রায় পক্ষকাল পার হয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের একটা টাকাও আসেনি দিল্লি থেকে। এই অভিযোগ তুলে সোমবার (২ ডিসেম্বর) নতুন করে মোদি সরকারকে নিশানা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিধনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা এখনও পর্যন্ত কিছুই পাইনি। আমরা হিসাব দিয়েছি। কেন্দ্রীয় দলও এসেছিল। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি। আমরা তাদের ক্ষতি পরিমাণও জানিয়েছি।’ এরপরেই তিনি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন।

উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করার পর দিল্লি থেকে বিশেষ পর্যবেক্ষক দল এসে ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনাও করেছিল। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও।

আয়লা ঘূর্ণিঝড়েও দক্ষিণবঙ্গে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই একই জায়গাতেই ফের আঘাত হানে বুলবুল। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হয়। আয়লার সময় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। সে সময় দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বাবদ সে সময় মনমোহন সিং সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল সে সময় এক কথায় মনমোহন সরকার ১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেয়ায় প্রকাশ্যই তৃণমূলের একটা অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। ঘরোয়া আলোচনায় তাদের বক্তব্য ছিল, বাম সরকার ঠিকমতো মেরামতি ও পুনর্বাসনের কাজ করতে পারলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পেয়ে যাবে তারা।

এখন আবার বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিজেপি’ও ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে বিভিন্ন আশঙ্কার কথা বলতে শুরু করেছে। বিজেপি’র পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি বলেছেন, ত্রাণের টাকা লুঠ করতে পারে তৃণমূলের সর্বস্তরের কর্মীরা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতিতে সর্বতোভাবে ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার বদলে দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল রীতিমতো রাজনীতিও শুরু করে দিয়েছে।

প্রথমত তৃণমূল সরকার চায় কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিক। কারণ এই ধরনের বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, তারা এটাও চাইছে দিল্লি ত্রাণের টাকা দিলে তার রাজনৈতিক সুফল যেন বিজেপি হাইজ্যাক করে নিয়ে যেতে না পারে। এই টানাপোড়েনে বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতিতে এখনও গভীর জলে রয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সবং-এর তৃণমূল বিধাক গীতারানি ভুঁইয়া প্রশ্ন তোলেন, বুলবুলের ক্ষতির পরিমাণ কত? ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, বুলবুলের মোট ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা আসেনি বলেও জানান তিনি।

বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, আয়লার সময় সময় মনমোহন সিং সরকার যখন ত্রাণবাবদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে টাকা পাঠিয়েছিল, সে সময় তৃণমূলের মথুরাপুরের (দক্ষিণ ২৪ পরগনার) সাংসদ সি এম জাটুয়া প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ করেছিলেন। আয়লার ত্রাণ ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন তৃণমূলের নেতারা। অথচ বুলবুলের পর আমি নিজে সেখানে গিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গেও কথা বলেছি। বাম প্রতিনিধি দলের সকলেই তাদের বলেছিলেন, আপনার ভালো করে পর্যালোচনা করে রিপোর্ট পাঠান এবং দেখুন যাতে দ্রুত টাকা পাঠানো যায় এই দুর্গতদের জন্য। সব মিলিয়ে বুলবুলের দুর্গত মানুষরা চরম বিপদের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হলেও, কলকাতায় ত্রাণের অর্থ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জোরদার রাজনৈতিক চাপানউতোর।

একেএস

আরও পড়ুন