• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৯:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৯:৩০ পিএম

অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম

অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম

নারীরা এখন আর ঘরে বসে অলস সময় পার করে না। যুগ পরিবর্তনের হাওয়ায় তারা নিজেদের পরিবর্তন করে এখন অফিস-আদালত ও ঘর একই সঙ্গে সামাল দেন। তাই প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় ত্বকের যত্ন নেয়া সম্ভব হয় না। রোজ রোদে বের হওয়ার কারণে অনেকের গায়ের রঙ একটু চাপা অথবা তামাটে হয়ে যায়। আর এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সহজ সমাধান হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম। 

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রং ফর্সাকারী ক্রিমের পসরা সাজিয়ে রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা ধরনের অনলাইন প্রতিষ্ঠান। যারা লোভনীয় কথার ফুলঝুড়িতে এসব ক্রিম ব্যবহারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। চাহিদার কথা মাথায় রেখে পিছিয়ে নেই শহরের সুপার মার্কেটের প্রসাধনী দোকানগুলো। এমনকি পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত এসব নিম্নমানের ক্রিমে সয়লাব হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো- এসব নিত্য নতুন নিম্নমানের ক্রিম কি আসলেই কাজে দেয়? ত্বকের রঙ ফর্সা করে? রঙ ফর্সাকারী ক্রিম বলতে আমরা যেগুলোর কথা জানি এগুলোর বেশিরভাগেই রয়েছে ‘হাইড্রোকুইনান’। তাছাড়া ক্রিমে অতিরিক্ত পারদের ব্যবহার পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এসব ফর্সাকারী ক্রিমে বাজারে ছেয়ে গেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকিতে রয়েছে।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডোর এক গবেষণা এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পারদযুক্ত এসব পণ্য এসব বিক্রি বন্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। তবে আইনত নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পারদযুক্ত পণ্য সহজেই গ্রাহককে বাড়িতে পৌঁছে দিতে এখন বেশকিছু নামী-দামি অনলাইন তৎপর রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) লালমাটিয়ায় এসডোর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইনত নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পারদযুক্ত (যা একটি ভারী বস্তু এবং বিপজ্জনক নিউরোটক্সিন) ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম, এখনও বিভিন্ন দোকান ও অনলাইনে ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে। পারদ দূষণ রোধকারীর কাজে নিয়োজিত এনজিও জোটের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এটি প্রকাশিত হয়েছে। 

এতে বলা হয়, ১২টি দেশের ১৫৮টি পণ্যের মধ্যে ৯৫টি ক্রিমে নির্ধারিত সীমার ১ পিপিএম এর চেয়ে বেশি এবং প্রায় ৪০ থেকে ১,৩০,০০০ পিপিএম পর্যন্ত পারদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের দুই-তৃতীয়াংশ (৯৫ টির মধ্যে ৬৫ টি) অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। আর তা বিপণন করছে অ্যামাজন, ই-বে, দারাজ, ফ্লিপকার্ট এবং জুপিয়া।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, এসব বিপজ্জনক ও নিষিদ্ধ পণ্যগুলোতে উচ্চমাত্রায় পারদ উপস্থিত। মূলত যারা এই পণ্যগুলোকে বার বার ব্যবহার করছে ও তাদের সন্তানরা এই পারদ দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি উচ্চমাত্রার পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম এবং এই বিষ বাণিজ্য বন্ধের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একসাথে কাজ করার ব্যাপারেও মত দেন।

তিনি বলেন, সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারণে দোকানে প্রকাশ্যে উচ্চমাত্রার পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম বেচা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনলাইনে তা ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কারি যুক্ত পণ্য পরিবেশে ফেলা হয়, এগুলো ড্রেনের পানির সাথে সহজেই মিশে যায় এবং পরবর্তীতে নদী ও সাগরে গিয়ে জমা হয়। এই মার্কারি মানুষের দেহে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে প্রবেশ করে রক্তের কোষ গুলোর ক্ষতি করে।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সচিব এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, পারদযুক্ত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, পারদযুক্ত পণ্য ব্যবহারে যথেষ্ট পরিমাণ সচেতন হতে হবে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে পারদযুক্ত পণ্য অনলাইনে বিক্রি বন্ধে অবিলম্বে আইন প্রণয়নে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু জাফর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. আবুল হাসেম, বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা এম এম সৈয়দ ও এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা উপস্থিত ছিলেন। 

টিএস/একেএস

আরও পড়ুন