• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২০, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৫, ২০২০, ১০:০৪ পিএম

পেঁয়াজের ওপর থেকে ‘বদনজর’ কাটবে কবে?

পেঁয়াজের ওপর থেকে ‘বদনজর’ কাটবে কবে?
সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও অদৃশ্য কারণে আবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার- ছবি : জাগরণ

পেঁয়াজের ওপর থেকে কিছুতেই ফাড়া কাটছে না। নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু করায় দর স্বাভাবিক হয়ে আসছিল কিছুদিন আগে। কিন্তু আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে পেঁয়াজের বাজার।মুনাফালোভীদের ‘বদনজর’ লেগে ভরা মৌসুমে অস্থির হয়ে ওঠেছে পেঁয়াজের দর। যেখানে ২০১৮ সালে এই সময় পেঁয়াজের দর ছিল ২৫-৩০ টাকা। এ বছর বিকোচ্ছে ২০০টাকায়।

তিন-চার দিন ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০-৬০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। হঠাৎ করেই আবার কেনো এই দাম বৃদ্ধি। সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি বিক্রেতাদের মুখ থেকে।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, অসাধু চক্র বেশ মজাই পেয়ে গেছেন এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি নিয়ে দাম বাড়ানো খেলা খেলায়। পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর খেলা খেলে এরই মধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছে মুনাফালোভী চক্র। তা নাহলে কেনো, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দর এতো হবে। যেখানে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পেঁয়াজের দর স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিন-চারদিন আগেও দেশি ঝাড়া পেঁয়াজের দর ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। বর্তমান খুচরা বাজারে সেটা বিকোচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০টাকায়। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে চীন ও তুরস্কের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। তিন-চার দিনও আগে এই পেঁয়াজের দর ছিল ৭০-৭৫ টাকা।

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নতুন পেঁয়াজ সরবরাহ স্বাভাবিক। কিন্তু সরবরাহ ঘাটতির পুরনো অজুহাতকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ আবুল হোসেন বলেন, মোকাম থেকে বাড়তি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। এ বছর পেঁয়াজ বিক্রি করে তেমন একটা মজা পাচ্ছি না। মানুষ এখন হিসেব করে পেঁয়াজ কিনছেন। 

পেঁয়াজের দর-দাম নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। রাজধানীর বনশ্রী ‘ই’- ব্লকের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম জানান, আজ একদামে কিনি তো, কাল অন্যদামে কিনি। কিন্তু প্রতিবারই দামে হেরফের হয়। বুঝি না এই পণ্যটি নিয়ে কী খেলছে ব্যবসায়ীরা। যেহেতু আমরা সাধারণ মানুষ তাই আমাদের করার কিছুই নেই। বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে পণ্যটি কিনতে হচ্ছে। আগে যেখানে ৪-৫ কেজি কিনতাম। এখন এক-আধা কেজি কিনছি। 

ব্যবসায়ীদের মন্তব্য, সঙ্কটের সময় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করার কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ও তীব্র শীতের কারণে চাষীরা পেঁয়াজ তুলতে পারছে না। এসব কারণেও দাম বাড়ছে। 

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কমোডিটি ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজে আসা শুরু করলে পেঁয়াজের দর ১৮ টাকার নিচে চলে আসবে 

.......................................

শেখ মঈনুদ্দিন নামে এক ক্রেতা জানালেন, তিনদিন আগেও শাহজাহানপুর কাঁচাবাজার থেকে ১৫৫ টাকা দরে যে পেঁয়াজ কিনেছিলেন, রোববার (৫ জানুয়ারি) সে পেঁয়াজের দাম হাঁকা হয়েছে ১৯৫ টাকা। এই ক্রেতা আরও বলেন,শঙ্কা হচ্ছে পেঁয়াজ আবার কত দামে ওঠে যায় তা আল্লাহই জানেন। তবে সরকারের পরিকল্পনার অভাবেই সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কেনো হুট করে আবার দাম বাড়ছে জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের পাইকাররা বলেন, দেশি বলতে যে পেঁয়াজ বোঝায় তা এখনও আসেনি। যেগুলো আসছে সেগুলো ‘মুড়ি কাটা’ পেঁয়াজ। তবে এবার কম পরিমাণে আসছে। কারণ দাম বেশি থাকার কারণে কৃষকরা অপরিপক্ব অবস্থায় আগেই বিক্রি করে ফেলেছেন। এ কারণে পেঁয়াজের পরিমাণ কমে গেছে।

বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের পরিমাণ বেশি দেখা যায়নি। অল্পসংখ্যক বিক্রেতার কাছে চায়না ও তুরস্কের পেঁয়াজ দেখা গেছে। এর মধ্যে চায়না পেঁয়াজ ৬০ টাকা আর তুরস্কের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারভেদে।

কিছুদিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির এক সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ঘোষণা দেন- রমজানের বাজার সামাল দিতে বড় শিল্প গ্রুপগুলোর মাধ্যমে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এ ঘোষণা দেয়ার পরের দিন থেকেই পেঁয়াজের বাজারে আবার অস্থির হতে শুরু করে। যা রোববার (৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। 

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। 

চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। ওইদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ থেকে ১০০ টাকা। তবে গত তিন-চার দিনে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

গত বছর দেশি পেঁয়াজের প্রতি কেজির দাম উঠে যায় ২৫০ টাকায়। তড়িঘড়ি করে আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার সামাল দেয়ার চেষ্টা করে সরকার। নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরে মৌসুমের মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা সহনীয় হয়ে আসে। তবে স্বাভাবিক হয়নি বাজার।

পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা নিয়ে ভোক্তা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির তথ্য বলছে, নতুন করে কোনও ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহিত হচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম কৃষি বিভাগের তথ্য, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এক লাখ সাত হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দিয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় হয়েছে ৪২ হাজার ৭৬ টন। জেটিতে ভেড়া পাঁচটি জাহাজে আছে ৬৬৫ টন এবং বহির্নোঙরে চারটি জাহাজে আরও আছে প্রায় এক হাজার ৫০০ টন।

তবে আমদানিকারকদের বক্তব্য, লাগাতার লোকসানের কারণে নাকি অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। অনুমতি নিয়ে ‘ঋণপত্র’ খুলে আবার তা বাতিল করেছেন। ফলে বাজারে আমদানি কমে গেছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি কমে গেছে।

তবে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কমোডিটি ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজে আসা শুরু করলে পেঁয়াজের দর ১৮ টাকার নিচে চলে আসবে। 

এসএমএম

আরও পড়ুন