• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২০, ০৯:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৮, ২০২০, ১০:১৯ পিএম

অস্থির স্বর্ণের বাজার, বেচাকেনা অর্ধেকেরও কম 

অস্থির স্বর্ণের বাজার, বেচাকেনা অর্ধেকেরও কম 
সহসা দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই সোনার বাজারে-ছবি : বিবিসি বাংলা

লাগাতার দাম বাড়ায় কমে গেছে সোনার বেচাকেনা। গেলো বছরের তুলনায় বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। সহসা দাম কমার কোনও সম্ভাবনাও নেই। বরং আরও বাড়তে পারতে পারে। এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার, জানালেন দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

বিলাসি ও মূল্যবান ধাতু হিসেবে বছরজুড়ে চাহিদা থাকে সোনার। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই তিনমাসে বিয়ে-শাদির মৌসুম হওয়ার কারণে তুলনামূলক বাড়ে স্বর্ণালঙ্কারের বিক্রি। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। রাজধানীর স্বর্ণের দোকানগুলোতে তেমন একটা ক্রেতা নেই। যারা আসছেন, তারাও বাড়তি দামের সঙ্গে সমন্বয় করে কম পরিমাণে কিনছেন।

বাজুস সোনার দাম বাড়ালেও অপরিবর্তিত রেখেছে রুপার দর 

.......................

বিক্রি কমের কারণ হিসেবে দফায় দফায় দাম বাড়াকে চিহ্নিত করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বাজারে গেলো সেপ্টেম্বরে দাম একবার সামান্য কমলেও জুন থেকে লাগাতার বাড়ছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম।

আমিন জুয়েলার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মিত্তাফুর রহমান জিল্লু গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণত অন্যান্য সময় আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম এতোটা বাড়ে না। কিন্তু এবার অনেকটাই অস্থির। তাই বিক্রিও কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় অর্ধেকও নেই।

মার্কিন হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির হত্যাকাণ্ড সোনার বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ২০১৩ সালের এপ্রিলের পর বিশ্ববাজারে সর্বোচ্চ পৌঁছেছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম।

আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের পূর্ভাবাস, প্রতি আউন্স সোনার দাম ১ হাজার ৫৭৯ ডলার থেকে দাম বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ডলারে। বিশ্ববাজারের এই প্রভাব পড়বে দেশের বাজারেও, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক আউন্স স্বর্ণের বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৭২৭ দিরহামে। রুপা বিক্রি হয়েছে ৬৬ দিরহামে। 

যুক্তরাষ্ট্রে এক আউন্স স্বর্ণের দর ১ হাজার ৫৫৯ ডলার এবং রুপা ১৮ ডলার।

বাংলাদেশে এক আউন্স স্বর্ণের দর ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৪৪ টাকা এবং রুপা ১ হাজার ৫৩২ টাকা।

ভারতে এক আউন্স স্বর্ণ ১ লাখ ১১ হাজার ৮৮৩ রুপি এবং রুপা ১ হাজার ২৯৪ রুপি।

মালয়েশিয়ায় বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৩৮৬ রিঙ্গিত ও রুপা ৭৩ রিঙ্গিত।

দাম বেশি হওয়ায় সোনার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন দেশীয় ক্রেতারা। আবার দেশে সোনার গহনাসামগ্রীর প্রধান ক্রেতা উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন এখন বিকল্প হিসেবে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতে বিদেশ নির্ভরতার ওপর ঝুঁকে পড়ছেন। বিশেষ করে ভারত থেকে ব্যাপকভাবে সোনার অলঙ্কার আমদানি হচ্ছে।

দুবাই, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর চেয়ে ভারতে যাতায়াত সহজ এবং খরচ কম হওয়ায় এখন ভারতই হয়ে ওঠেছে দেশীয় সোনার চাহিদা পূরণের প্রধান বাজার। এতে মার খাচ্ছে দেশীয় পাকা সোনার বাজার।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার ভরি সোনার চাহিদা রয়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং ক্রেতা না পাওয়ায় তা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এ পরিস্থিতিকে দেশের স্বর্ণ শিল্পের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের বাজারে সোনার দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর সোনার দাম প্রতি ভরি ৭০ হাজার ছাড়িয়েছিল বাংলাদেশের বাজারে।

গেলো বছরের ১৮ ডিসেম্বর (বুধবার) ডলারের দাম বাড়ার কারণে মূল্যবান এই ধাতুটির দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি। তখন এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা করে বাড়িয়েছিল ব্যবসায়ীরা। তখন প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ আউন্স) সবচেয়ে ভালো মানের সোনার (২২ ক্যারেট) দর ৫৯ হাজার ১৯৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের দর ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের দর ৫১ হাজার ৮৪৬ টাকা নির্ধারণ হয়েছিল।

রোববার (৫ জানুয়ারি) থেকে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৫৮ হাজার ২৮ টাকায়।

স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে।

সনাতন পদ্ধতির সোনা পুরানো অলঙ্কার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে কত শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা মিলবে তার কোনও মানদণ্ড নেই।

অলঙ্কার তৈরিতে সোনার দরের সঙ্গে মজুরি ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যোগ করে দাম ঠিক করা হয়।

সোনার দাম বাড়ালেও রুপার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরন মালাকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, তেলের দাম বেড়েছে, ডলারেও ফল করেছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের খারাপ অবস্থা এবং চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নবায়ন না হওয়ার কারণে স্বর্ণের বাজার আগে থেকেই চড়া। নতুন করে বাড়ার পেছনে মার্কিন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হবার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি দায়ী বলে জানান তিনি।

ভবিষ্যতে যদি এই অবস্থা আরও খারাপ হয় তাহলে সোনার দাম আরও বেড়ে যেতে পারে জানালেন মালাকার।

মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে স্বর্ণের দাম কমবে কি— না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ডলারের দাম, তেলের দাম, শেয়ার বাজারের উঠা-নামাসহ নানা কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ে। দাম বাড়বে নাকি কমবে, আগাম কেউ বলতে পারবে না। 

এসএমএম

আরও পড়ুন