• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০, ০৯:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০, ০৯:৫৩ পিএম

করোনায় বহুমুখী সংকটে দেশের অর্থনীতি

করোনায় বহুমুখী সংকটে দেশের অর্থনীতি

করোনার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। বহুমুখী সংকটে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে সরকার বিভিন্ন মহলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে করোনা প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশের অর্থনীতি। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে  করোনাভাইরাসের প্রভাব যেন আসন্ন রমজানে না পড়ে সে জন্য এখনই আগাম সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া। বিশেষ করে রসুন, আদা, পেঁয়াজসহ আমদানি নির্ভর বিভিন্ন পণ্যের জন্য দ্রুত বিকল্প বাজার খোঁজার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

ভাইরাসের আক্রমণের পর ব্যাপকভাবে কমেছে চীন থেকে আমদানি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের হিসাবে, ফেব্রুয়ারির প্রথম আট দিনে আমদানি কমেছে প্রায় ৩৭ ভাগ। গত জানুয়ারিতে কমেছে প্রায় ২১ ভাগ। উদ্যোক্তারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও রফতানি দুদিকেই পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব।

মেশিন, কাপড়, কেমিক্যালসহ তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ অনেক কমেছে।

এনবিআরের হিসাবে, জানুয়ারিতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা পাওয়া পণ্য আমদানি হয় প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার টন। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ হাজার টন কম। সময়মত কাঁচামাল না আসায় রফতানি ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় উদ্যোক্তারা।

চীনের চলমান পরিস্থিতিতে বেড়েছে কাঁচামালের দামও।

এনবিআরের হিসাব মতে, ফেব্রুয়ারির আট দিনে চীন থেকে এসেছে প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার টন পণ্য। যা আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় প্রায় ৮১ হাজার টন কম। জানুয়ারিতে কমেছে এক লাখ ৭৮ হাজার টন, আমদানি হয় ছয় লাখ ৭৩ হাজার টন পণ্য।

তবে আশা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে চীনের কিছু ক্রয় আদেশ বাংলাদেশে আসতে পারে। কিন্তু কাঁচামালের ঘাটতির কারণে এ সুযোগ কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, তা নিয়ে শঙ্কায় উদ্যোক্তারা।

চামড়া রফতানিতে করোনার প্রভাব


করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে চামড়া শিল্পে। দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ৭০ শতাংশের ক্রেতা চীন। কিন্তু দেশটি এখন আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় ট্যানারিগুলোতে চামড়ার স্তূপ জমে গেছে। এখন এই চামড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। এ সংকট মোকাবেলায় দ্রুত বিকল্প বাজার খোঁজার তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

সাভার চামড়াশিল্প নগরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার চালু না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনছে না ইউরোপের ক্রেতারা। ফলে চীনে রফতানির ওপর নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশের চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের।

একক দেশ হিসেবে চীনে রফতানি হয় ৬৫ শতাংশ চামড়া ও চামড়াপণ্য। এখন করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেশের দ্বিতীয় এ রফতানি খাতের সামনে সংকট তৈরি করেছে। চীন থেকে যেসব ঋণপত্র, রফতানি আদেশ ও পণ্য সরবরাহ আদেশ পাওয়ার কথা তা আসেনি।

১০০ কনটেইনার চামড়াজাত পণ্য চীনে রফতানির অপেক্ষায় আছে। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির আশংকা করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই টানা কমছে রপ্তানি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য রফতানি হয়। গত অর্থবছরে তা আরও কমে প্রায় ১০২ কোটি ডলারে নেমেছে। তাই এ ক্ষেত্রে টিকে থাকতে নীতি-নির্ধারকদের সহায়তার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

চীনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে, রফতানির লক্ষ্য অর্জন দূরের কথা, রফনি অর্ধেকের বেশি কমে যাওয়ার আশংকা ট্যানারি মালিকদের।

রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে দেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত বেশিরভাগ চীনা নাগরিক ছুটিতে নিজ দেশে অবস্থান করছেন। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে তাদের কর্মস্থলে ফেরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন করোনাভাইরাস ঠেকানোকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী টানেল, ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পে কাজ করছেন ৪৩৮ চীনা নাগরিক। এর বাইরে চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত চীনার সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৭০। তাদের মধ্যে ২৫৭ জনই নববর্ষের ছুটিতে নিজ দেশে অবস্থান করছেন।

করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর পর ছুটিতে থাকা চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে আসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যারা বাংলাদেশে আছেন তাদের নিজ দেশে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারও পরিবারের সদস্য আক্রান্ত হওয়ার খবর না থাকলেও উৎকণ্ঠা কাটছে না তাদের।

কর্ণফুলী পানি সরবরাহের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (এক্সিকিউশন ইউনিট) উ উয়েবিং বলেন, ওয়াসার প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের কারও পরিবারই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। কারণ পারতপক্ষে পরিবারের সদস্যরা বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আর তাই এখনও কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তাছাড়া আমাদের সরকার এ বিষয়ে খুবই সচেতন। খুব দ্রুতই করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা এখনই বড় কোনও সমস্যা না দেখলেও কর্মরত অনেক চীনা ফিরতে না পারায় প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। সব কিছুর ওপরে আপাতত প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর নীতিকেই গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

চলমান প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে চান না চীনারা। স্বাভাবিক গতিতেই কাজ এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য তাদের।

কেডব্লিউএসপি-২-র প্রকল্প পরিচালক কিউ জিয়াওডিং বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চুক্তিবদ্ধ প্রকল্পের কাজে কোনওরূপ সমস্যা হবে না। চলমান প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আশা করা হচ্ছে সঠিক সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।

কারও সংক্রমণ শনাক্ত না হলেও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নানা প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে চট্টগ্রামে। এরইমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে বিশেষ ইউনিট।

ব্যাহত হবে উন্নয়ন প্রকল্প
করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে দেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত বেশিরভাগ চীনা নাগরিক ছুটিতে নিজ দেশে অবস্থান করছেন। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে তাদের কর্মস্থলে ফেরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন করোনাভাইরাস ঠেকানোকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী টানেল, ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পে কাজ করছেন ৪৩৮ চীনা নাগরিক। এর বাইরে চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত চীনার সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৭০। তাদের মধ্যে ২৫৭ জনই নববর্ষের ছুটিতে নিজ দেশে অবস্থান করছেন।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর পর ছুটিতে থাকা চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে আসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর যারা বাংলাদেশে আছেন তাদের নিজ দেশে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারো পরিবারের সদস্য আক্রান্ত হওয়ার খবর না থাকলেও উৎকণ্ঠা কাটছে না তাদের।

কর্ণফুলী পানি সরবরাহের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (এক্সিকিউশন ইউনিট) উ উয়েবিং বলেন, ওয়াসার প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের কারো পরিবারই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। কারণ পারতপক্ষে পরিবারের সদস্যরা বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আর তাই এখনো কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তাছাড়া আমাদের সরকার এবিষয়ে খুবই সচেতন। খুব দ্রুতই করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে সব ব্যবস্থা গ্রহন করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা এখনই বড় কোনো সমস্যা না দেখলেও কর্মরত অনেক চীনা ফিরতে না পারায় প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। আর সব কিছুর ওপরে আপাতত প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর নীতিকেই গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তবে চলমান প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে চান না চীনারা। স্বাভাবিক গতিতেই কাজ এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য তাদের।

কেডব্লিউএসপি-২-র প্রকল্প পরিচালক কিউ জিয়াওডিং বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চুক্তিবদ্ধ প্রকল্পের কাজে কোনরূপ সমস্যা হবে না। চলমান প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি সঠিক সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।

এসএমএম/ এমএইচবি

 

আরও পড়ুন