• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ০৬:৪১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ০৬:৪২ পিএম

‘কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি ব্যাংক খাত’

‘কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি ব্যাংক খাত’
সিপিডির সংবাদ সম্মেলন ● সংগৃহীত

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)- এর বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতির বাঁক ফেরাতে হলে প্রয়োজন ব্যাংক খাত পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাস। এ জন্য সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংক কমিশন গঠন করা।

তিনি বলেন, জানতে পেরেছি ব্যাংক খাত নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হচ্ছে। আর ওই কমিশনের চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সরকারের এই উদ্যোগকে সমর্থন ও সাধুবাদ জানাই। 

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইনে আয়োজিত ব্যাংক কমিশন গঠন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সিপিডি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে নাগরিক সমাজ অসহায় আতঙ্ক নিয়ে ভয়ঙ্কর ও ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে। মন্দ ঋণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ব্যাংকের পুঁজি, নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও লাভে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমানত ও ঋণের সুদহার নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার প্রকাশ্য বরখেলাপ হচ্ছে। গুটি কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে ব্যাংক খাত। এ রকম সময়ে ব্যাংকিং কমিশন গঠন সরকারের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা বিচক্ষণতারও পরিচায়ক।

তিনি বলেন, ব্যাংক কমিশনকে স্বচ্ছ, সম্যক ও তথ্য নির্ভর মাপকাঠিতে ব্যাংক খাতের অবস্থা বিচার করতে হবে। চলমান পদক্ষেপের মূল্যায়ন করতে হবে। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে চলমান, বাস্তবচিত ও টেকসই সমাধান দিতে হবে। এজন্য দ্রুত কমিশন গঠন করতে হবে, যাতে কমিশন আগামী বাজেটের আগে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দিতে পারে।

প্রস্তাবিত কমিশনের কার্যক্রম, কার্যপরিধি ও পদ্ধতি নিয়েও কিছু সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। সুপারিশগুলো তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, লোকদেখানো কমিশন গঠন করে লাভ হবে না। প্রস্তাবিত কমিশন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য পরিবেশ, সুবিধা ও সুযোগ দিতে হবে। অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ ছাড়া সমর্থন থাকতে হবে। পাশাপাশি কমিশন যেসব সুপারিশ করবে সেগুলো বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি দরকার।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমছে না, যা বড় উদ্বেগের বিষয়। সুযোগ-সুবিধার পরও খেলাপি ঋণ না কমার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছেকৃত খেলাপি বেশি, যারা জনগণের অর্থ ফেরত দিতে চায় না। এতে ভালো গ্রাহকদের জন্য বৈষম্যও তৈরি হচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকিং কমিশন জরুরি। সরকার এমন উদ্যোগ নেয়ায় সিপিডি খুশি। 

সিপিডির এ নির্বাহী আরও বলেন, এমন মানুষকে ওই কমিশনে আনতে হবে, যাদের দক্ষতা, যোগ্যতা, বিচক্ষণতা ও সততা থাকবে। তারা যাতে নির্মোহভাবে কাজ করতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাদের রাজনৈতিক সমর্থন দিতে হবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তারা যে সুপারিশ করবেন, তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক উদ্যোগ থাকতে হবে।

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি করে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত সরকার এ জাতীয় উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও এটা করতে পারি।

তিনি বলেন, কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।

১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংক কমিশন গঠন করা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। ওইদিনই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অর্থমন্ত্রণালয়ে যান। এরপর খবর প্রকাশ হয়, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে প্রধান করে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগের প্রতিক্রিয়া জানাতেই সিপিডি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এসএমএম