• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৬, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম

পুঁজিবাজারে ধস, দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা 

পুঁজিবাজারে ধস, দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা 

এক দিনে সূচকের পতন প্রায় দুই শতাংশ। ৩৮১টি কোম্পানির মধ্যে দর হারাল প্রায় সাড়ে তিনশ। শতাধিক কোম্পানির দর কমেছে এক দিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই। এমন দিনেও লেনদেন ছাড়াল হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ দম দামে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ, স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা বলেছেন, বাজারে কী হয়েছে, সেটি তারা বুঝতে পারছেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবিও শেয়ার বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে নিত্যপণ্যর দাম ক্রমেই বেড়ে চলার মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে বিনিয়োগকারীদের।

ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পুঁজিবাজারে যে ধস নামে, সেটি টানা কয়েক মাস চলার পর রোজার শেষ দিকে থাকার ইঙ্গিত দেয়। ঈদ শেষে বাজারে লেনদেন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তা এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। বাড়তে থাকে শেয়ারদর।

কিন্তু শুভ ইঙ্গিত দিয়ে গত সপ্তাহে আবার মুখ থুবড়ে পড়ে পুঁজিবাজার। টানা তিন দিনে পতন হয় ১৩২ পয়েন্ট। দুই দিনের সাপ্তাহিক বন্ধ শেষে বুদ্ধ পুর্ণিমার ছুটি শেষে সোমবার আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিল বিনিয়োগকারীদের। আগের তিন দিনে মিলিয়ে সূচক যত পড়েছিল, এক দিনেই পড়ল তার চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান এখন ৬ হাজার ৪৩০ পয়েন্ট, যা গত বছরের ২৯ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্ট।

তবে সে সময় পুঁজিবাজারে ছিল সুবাতাশ। প্রতি দিনই সূচক বাড়ছিল। এক পর্যায়ে তা সাত হাজার ছাড়িয়ে ১০ হাজারে পৌঁছবে বলে আশাবাদ তৈরি হয়।

তবে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বাজারে দর সংশোধন শুরু হয়, যা বছরের শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। নতুন বছর ২০২২ সালের শুরুতে বাজারে ঊর্ধ্বগতি ফেরার ইঙ্গিত দিলেও ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর আবার নামে ধস। শেয়ারদর কমতে থাকার পর লেনদেনও নেমে আসে তলানিতে।

এই যুদ্ধ প্রলম্বিত হতে থাকায় সারা বিশ্বই অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে খাদ্যপণ্যের বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশেও নানা গুজব ছড়ায়।

সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেনের এই চিত্রে ব্যাপকভাবে লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা 

সোমবারের বাজার দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের সমিতি বাংলাদেশ স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন-ডিবিএর সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক  বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর নানা ধরনের গুজবে পুঁজিবাজার টালমাটাল ছিল। কিন্তু তাই বলে এত বড় ধস কেন, সোট আমরা বুঝতে পারছি না। কী কারণে আকষ্মিক এত বড় ধস হলো, সেটা আমরা সত্যিই কেউ বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে সবাই বিক্রি করে বাজার থেকে চলে যাবে- এমন অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নয়, আইসিবিও শেয়ার বিক্রি করছে। যাদের সাপোর্ট দেয়ার কথা, তারাও যদি বিক্রি করে, তাহলে বাজারের এমন না হয়ে কী হবে?’

পুঁজিবাজারে এক দিনে এর চেয়ে বেশি দরপতন দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল। লকডাউন আতঙ্কে সেদিন ডিএসইতে সূচক কমেছিল ১৮১ পয়েন্ট।

পরের দিন থেকে করোনার কারণে বিধিনিষেধে যাওয়ার কথা ছিল দেশ। ২০২০ সালে সাধারণ ছুটির সময় পুঁজিবাজারে লেনদেন স্থগিত থাকে। সেবারও তাই হবে ভেবে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেছিল বিনিয়োগকারীরা। তবে এই পতনের দিনই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসে যে, লকডাউনেও লেনদেন চলবে। পর দিন থেকেই পুঁজিবাজারে শুরু হয় উত্থান।

আর এখন পুঁজিবাজারের সূচক ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সব খাতেই দরপতনের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩ কোম্পানির সবগুলো দর হারিয়েছে। সিমেন্ট, আবাসন, তথ্য প্রযুক্তি, ভ্রমণ ও অবসর, টেলিকমিউনিকেশন, কাগজ, পাট খাতেরও শতভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে।

এছাড়া বস্ত্র খাতে তিনটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ৫৬টি, সাধারণ বিমা খাতে একটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ৩৯টি, জীবন বিমা খাতে একটির দর বৃদ্ধি ও একটির দর ধরে রাখার বিপরীতে আরও ১১টি, প্রকৌশল খাতে তিনটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ৩৯টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতে তিনটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২৮টি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে দুটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২৮টি এবং বিবিধ খাতে একটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ১৩টি কোম্পনি।

ব্যাংক খাতে ৬টির দর বেড়েছে, আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে আরও ছয়টি আর কমেছে বাকি ২১টির দর। দুটি কোম্পানির দর কমেছে এক দিনে দর পতনের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশ। আরও শতাধিক কোম্পানির দর কমেছে আশেপাশে। সব মিলিয়ে ১৩০টি কোম্পানির দর কমেছে ৪ শতাংশের বেশি, আরও ৭৬টির দর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি, ৫৭টির দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি।

ইউএম