• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০১৯, ০২:২৪ পিএম

‘নারীদের কারিগরি শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে’

‘নারীদের কারিগরি শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে’
শামসুন নাহার হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল- ছবি: জাগরণ


দেশে দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশ থেকে লোক আনতে হয়। দক্ষ জনগোষ্ঠী থাকলে এমনটা হতো না। এজন্য কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভাবা প্রয়োজন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ৩৫০টি উপজেলায় নারীদের জন্যে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছেন। যেহেতু তার সরকারের আমলে নারীরা সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে কারিগরি শিক্ষার চাহিদাও তাদের মধ্যে বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ পুনর্মিলনীতে বক্তারা এসব কথা বলেন। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে আয়োজিত এই পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

হল অ্যালামনাইয়ের সভাপতি আভা দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সুপ্রিয়া সাহা। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হল অ্যালামনাইয়ের সাধারণ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যায়। এটা খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। অ্যালামনাইদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এই হলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে যে পথ দেখিয়েছেন, তা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। আপনারা পথ দেখিয়েছেন বলেই আজ মেয়েরা ছেলেদের চাইতেও অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাওয়ার জন্যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অবদান রয়েছে। শুধু আর্থিক সহযোগিতাই নয়, ছাত্রীদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আপনারা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে যার যার জায়গা থেকে তাদের পথ দেখাতে পারেন। নারী বান্ধব কর্মক্ষেত্র গঠনে আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩৫০টি উপজেলায় নারীদের জন্যে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছেন। যেহেতু তার সরকারের আমলে নারীরা সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে কারিগরি শিক্ষার চাহিদাও তাদের মধ্যে বাড়ছে।

এ কে আজাদ বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে ৩ বছর কাজ করছি। এ দায়িত্বের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো- বৃত্তির ইন্টার্ভিউ বোর্ডে কোনো শিক্ষার্থীকে বৃত্তি না দিতে পারা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কত কষ্ট করে, সেটা এই বৃত্তি প্রদান যারা করে তারাই জানে। শামসুন নাহার হলের যারা প্রাক্তন শিক্ষার্থী রয়েছেন, তারা প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও নিজেদের হলে গিয়ে আপনাদের উত্তরসূরিদের অবস্থা দেখে আসবেন। তারা যে কি কষ্টে থাকে, আপনারা বুঝতে পারবেন।

তিনি বলেন, অ্যালামনাইয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭৫০ শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে আড়াই হাজার টাকা করে বৃত্তি দেয়া হয়। হলের প্রাক্তন ছাত্রীরা যদি অল্প করে হলেও হলের মেয়েদের সাহায্য করেন, তাহলে আমাদের উপর চাপ কমবে। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তারাও উপকৃত হবে। তারা আপনাদের কাছ থেকে শিখতে পারবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে কারিগরি শিক্ষার দরকার। প্রতিবছর মাত্র আড়াই হাজার জন লোক বিসিএস ক্যাডার হয় আর ২৩ হাজার জন নন-ক্যাডার হয়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও চাকরির বাজার সীমিত। দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। অথচ দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশ থেকে লোক আনতে হয়। তাদের বেতন ভাতা হিসেবে ৬ বিলিয়ন অর্থ বিদেশে চলে যায়। যারা প্রবাসী, তারা প্রতিবছর ১৪ বিলিয়ন অর্থ দেশে পাঠায়। এই ১৪ বিলিয়নের মধ্যে ৬ বিলিয়নই আবার বিদেশে চলে যায়। দেশে দক্ষ জনগোষ্ঠী থাকলে এমনটা হতো না। এজন্য তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রীকে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভাবতে অনুরোধ করেন।

অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা বলেন, শামসুন নাহার হলের প্রাক্তন ছাত্রীরা সমাজের বিশিষ্ট জায়গায় রয়েছেন। বেগম রোকেয়ার আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে শামসুন নাহার যে অবদান রেখে গেছেন, তার সুফল আজ আমরা ভোগ করছি। তার দেখানো পথ চলে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শামসুন নাহার হলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই হলের সম্পদ। আপনারা যত এগিয়ে যাবেন, এই হল ততই এগিয়ে যাবে।

এর আগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পরে জাতীয় পতাকা ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলন, পায়রা অবমুক্তকরণ, বেলুন উড্ডয়ন ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন হয়। এরপর ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয় এবং অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দিনব্যাপী উৎসবে মেতে ওঠেন শামসুন নাহার হলের অ্যালামনাইবৃন্দ।

টিএফ