• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০১৯, ০৮:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৪, ২০১৯, ০৮:২২ পিএম

‘দর্শন অনুরাগীদের দ্বান্দ্বিক জ্ঞানের চর্চা করতে হবে’

‘দর্শন অনুরাগীদের দ্বান্দ্বিক জ্ঞানের চর্চা করতে হবে’
বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী -ছবি : জাগরণ

‘আমাদের উপমহাদেশে দর্শনচর্চা ভাববাদের দ্বারা আচ্ছাদিত। সেখান থেকে আমরা বড়জোর উদারনীতিতে যেতে পারি। কিন্তু আমাদের বস্তুবাদীতে বিশ্বাস, ইতিহাস ও বস্তুবাদের ব্যাখ্যা- সেটা আজকে বাস্তব সত্য। ভাব ও বস্তুবাদের যে দ্বন্দ্ব সেটা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। এর জন্য দর্শন অনুরাগীদের দ্বান্দ্বিক জ্ঞানের চর্চা করতে হবে। সেই জ্ঞান বিশেষ পরিস্থিতির জ্ঞান, সারা বিশ্বের জ্ঞান। সেটি আমরা আহরণ করবো।’

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ ফিলসফিক্যাল সোসাইটির (বিপিএস) প্রথম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিপিএস-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও বিপিএস-এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দর্শনের জ্ঞানের মধ্যে কোনটি গ্রহণীয় আর কোনটি বর্জনীয় তা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে নির্নয় করবো। তাই গবেষণা, লেখা ও অনুবাদ খুবই দরকার। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক রচনাগুলো আমরা এখনও অনুবাদ করতে পারিনি। কাজেই অনুবাদের সঙ্গে আমাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও খুবই প্রয়োজন। এই জ্ঞানকে আহরণ করে আমরা সমাজ, দেশ ও পৃথিবীকে বদলাতে পারবো।

তিনি বলেন, দর্শনে ব্যক্তিগত সম্পদ, পুঁজিবাদ এবং ধর্ম ও ধর্মীয় উগ্রবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

বর্তমান দার্শনিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে বর্তমান অবস্থা, সেই অবস্থা যে কত খারাপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে মানুষ এমন বিপদে রয়েছে যা আগে কখনো পৃথিবী দেখেছি। আমরা একটা ক্রান্তিকালে এসেছি যে কালে ওই যে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিলো, সেই রেনেসাঁর শেষ প্রান্তের অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি। আজকে ইতিহাসকে নতুন জায়গায় যেতে হবে। নতুন জায়গায় না গেলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন, জঙ্গীবাদ, শোষণ, মাদক, যুদ্ধ, অধঃপতনসহ যে সকল বিপদ রয়েছে, সেগুলো থেকে আমরা মুক্তি পাবো না। সেজন্য নতুন যুগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন। সেই জায়গাতে দার্শনিকদের যে ভূমিকা, সেটা অত্যন্ত বড় ভূমিকা। দার্শনিকরা প্রশ্ন করেন, সংজ্ঞা দেন, পার্থক্য নিরূপণ করেন এবং বোঝাতে চান দৃশ্যমান কোনো কিছুর পেছনে গভীর কারণ বিদ্যমান।’

উপাচার্য আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘কোন বিষয়কে গভীরভাগে দেখা ও উপলব্ধি করার জন্য যে জ্ঞান দরকার দর্শন সেই শিক্ষা দেয়। যারা দর্শন অধ্যয়ন করেন তারা দর্শনের সামগ্রিকতা ও সার্বজনীনতা দেশ, সমাজ ও জাতিসত্তায় প্রতিফলন করে থাকেন। দিনব্যাপী উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহের বিষয়বস্তুগুলো আমাদের জীবনে ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং উদার নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ ও মানুষ গঠনে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে তিনটি অধিবেশনে বাংলাদেশ দর্শন, প্রায়োগিক দর্শন ও দর্শনের অন্যান্য শাখায় দেশের প্রথিতযশা পণ্ডিতবর্গ প্রবন্ধ উপস্থাপন, আলোচনা ও মত বিনিময় করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। 

এমআইআর/এসএমএম
 

আরও পড়ুন