• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২১, ০১:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৯, ২০২১, ০১:০৪ পিএম

বিশের শিক্ষা হোক একুশের প্রত্যয়

বিশের শিক্ষা হোক একুশের প্রত্যয়

বিশকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববাসী। ২০২০ ছিল ব্যতিক্রমী একটি বছর। যে বছরজুড়ে ছিল মহামারির রাজত্ব। যা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ ছিল ক্যাম্পাস। অনলাইনে পড়াশোনা-ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল বছরজুড়েই। বছরটি অনেক কিছুই শিখিয়েছে। ২০২০-এর এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ২০২১- এ কী হবে আমাদের প্রত্যয়? কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

আত্মপ্রত্যয়ী হতে শিখেছি
রোকনুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাভাইরাস আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দেশের শ্রেণিবৈষম্যের প্রকটতা। তবু ঘরবন্দী এ দিনগুলোতে আমাদের মনোবল দৃঢ় রাখতে সবচেয়ে বেশি যেটা সাহায্য করেছে, তা হচ্ছে আমাদের আত্মবিশ্বাস। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে শুরু করে আশেপাশের মানুষদের নিয়েও ভাবার অবকাশ পেয়েছি আমরা। সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজেকে ও পরিবারকে সমর্থন যোগাতে যে আত্মপ্রত্যয় প্রয়োজন তা এ বছরে বেশ ভালো ভাবেই রপ্ত হয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রেরণাও পেয়েছি এ বছরে। পুরোনো বছরের এ শিক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন হবে নতুন বছরে, সেটাই প্রত্যাশা
 

বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলাতে হবে
ফারহানা লিয়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

“বিশের বিষে জর্জরিত হয়ে নতুন বছরে নতুন কিছু করার উদ্যম যেন লকডাউনে বন্দি এক সত্তা। অনেকেই বন্দিত্বকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি আবার অনেকেই ক্যাম্পাস, বন্ধু-আড্ডা ছেড়ে  চূড়ান্ত হতাশায় পৌঁছে গেছি। আসছে নতুন বছর ২০২১। নতুন বছরে নতুন ছকে কর্মপরিকল্পনা করে ২০২০ এর বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। বিশ্বায়নের এই সময়ে ২০২০ এ আমরা প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা আরো ভালোভাবে অনুধাবন করেছি। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে আরো সচেতন হতে হবে। ইতিবাচক মানসিকতা, একে অপরকে মানসিক সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে হতাশা নামক কালো অধ্যায় থেকে মুক্তি পেতে পারি খুব সহজেই।“
 

নতুন বছর হোক স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণের
রাজু আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

“প্রকৃতির ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি জানান দিচ্ছে নতুন বছরের আগমন। দিন যায় দিন আসে এভাবে করে একটি বছর কেটে গেল আমাদের জীবন থেকে। নতুন বছর মানে আমাদের বিগত দিনের গ্লানি মুছে দেশ ও জাতির নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন পূরণের বছর। নতুন করে অতীতকে স্মরণ করে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হই। বিগত বছের ভুলগুলো আলোতে রূপান্তরিত করার প্রত্যাশা। কিন্তু বিগত বছরটা মোটেও মসৃণ ছিলো না। অসুস্থ পৃথিবী কবে সুস্থ হবে, কবে আগের মতো মানুষ তার জীবনকে সহজভাবে ভাবতে পারবে। সমস্যা থাকবে, কিন্তু আমাদেরকে বসে থাকা যাবে না। নানার প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে। কাজ করতে হবে বেকারত্ব গুছাতে। টেকনোলজিকে কেন্দ্র করে গ্লোবাল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। সব বাধা ভেদাভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। গড়তে হবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। নতুন বছরে হোক এটাই স্বপ্ন এটাই প্রত্যাশা।

 

বিশের বিষে, একুশের প্রত্যয়
রওশন জাহান সুমাইয়া, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০২০ বছরটিকে বিষের সঙ্গে তুলনা করলেও হয়তবা কম হবে। কম বেশি সবার জীবনেই প্রভাব ফেলেছে এই বছরটি। কেউ হারিয়েছেন আপনজনকে, কেউবা প্রতিনিয়ত নিজের সাথেই লড়াই করে যাচ্ছে শুধুমাত্র এই ২০২০ সালটি পার করে নতুন আলোর আশা দেখবে বলে। ২০২০ বছর থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি। কিছু শিখেছি মানুষের সাথে হওয়া ঘটনা থেকে, কিছু শিখেছি নিজের সাথে হওয়া ঘটনা থেকে। শেখার আসলে কোন শেষ ছিলো না। একাকিত্বের সঙ্গে লড়াই করে  কিভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয় সেই শিক্ষা আমরা ২০২০ থেকেই পেয়েছি। অনেক মুখোশধারী মানুষকে চিনতে সাহায্য করেছে এই বছরটি। নিজেদের আরো ভালো মানুষে রূপান্তরের অনুপ্ররণা জুগিয়েছে বছরটি। ধর্ষণের চিত্র দেখে এই সমাজে টিকে থাকতে নিজেকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করতে হবে তা শিখেছি। শিখেছি জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতিই আসবে যেখানে আপনি আপনার প্রাপ্য জিনিস পাবেন না। কিন্তু হেরে গেলে চলবে না সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। পাছে লোকে কিছু বলবেই তা বলে হতাশ হওয়া যাবে না। নিজের কাজ দিয়েই তাদের উত্তর দিয়ে দিতে হবে। মানুষ শারীরিক গঠন নিয়ে কোনো কথা বললে, কটাক্ষ করলে তার প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে। কারণ অনেক সময় এইগুলাই হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এত মানুষের মৃত্যুর খবর আমাকে আরো বিনয়ী করে তুলেছে এবং মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা জুগিয়েছে। আমাদের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। ভালো আমলনামা ছাড়া মৃত্যুর পর আমরা আর কিছুই নিয়ে যেতে পারব না। জীবনে কি হব জানি না কিন্তু এমন একজন মানুষ হতে চাই যার মৃত্যু তে কোটি কোটি মানুষ কান্না করবে। যে মৃত্যুর পর ও জীবিত থাকবে কোটি কোটি মানুষ এর হৃদয়ে। মানবতার খাতিরে কাজ করতে চাই। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী হিসাবে দেখতে চাই। নারীরা কোনো অংশে কম নয় সেইটাই প্রমান করতে চাই। একমাত্র সন্তান হয়েও মা-বাবাকে গর্বিত করা যায়, তাদের খেয়াল রাখা যায় সেটা প্রমাণ করতে চাই।

 

বিগত দিনের শিক্ষা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবো
তানভীর হাসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাপ্তি, হতাশা, গ্লানি বা অবসাদের বছর ইত্যাদি যে নামেই ২০২০-কে অবহিত করি না কেন, কোনটায় বোধহয় নামান্তর করা ভুল হবে না। থাকুক প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি সবকিছুই কোন না কোন শিক্ষা বা অভিজ্ঞতা জানান দিয়ে যায়। তেমনি ২০২০ সালটাও বিষাদময় পরিস্থিতিতে কিভাবে থাকা যায় তা জানান দিয়ে গেল। প্রাপ্তির চেয়ে হারানোর বেদনাই ছিল বেশি। হারানোর দিকটা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে ক্যাম্পাসে থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় একটি বছর, বিভিন্ন প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের মৃত্যু সংবাদ, শিক্ষকদের সানিধ্যে সরাসরি পড়ালেখাসহ ক্যাম্পাসের বন্ধু ও বড়ভাইদের অনেককে হারানোর বেদনাটাও কম নয়। আর প্রাপ্তির দিকটা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে মা বাবাকে বড় হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি কাছে পাওয়া, বিরক্তিকর অনলাইন ক্লাস, মহামারী করোনা ভাইরাস, বিষাদময় কিছু দিনসহ এমন কঠিন ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা। নতুন বছরের প্রত্যয় থাকবে বিগতবছরের হারিয়ে যাওয়া বা প্রাপ্তির শেষ থেকে শুরু করে আবার সবাইকে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে একসাথে বাঁচতে শেখা।

প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ২০২০
রুকাইয়া মিজান মিমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০২০। এ যেন ভয় আর উৎকণ্ঠায় ছেয়ে যাওয়া অভিশপ্ত এক বছর। করোনাভাইরাসের প্রভাবে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির যেন ক্লান্তি নেই! তবু এই বছরে বাংলার প্রাপ্তির ঝুড়িটা একেবারে খালিও না। অনলাইনে ঘরে বসে ক্লাস করার মাধ্যমে সম্পূর্ণ এক নতুন প্রযুক্তি আয়ত্ত¡ীকরণ এই অভিশপ্ত সময়েই হয়েছে। করোনা যুদ্ধ মোকাবেলায় সরকারের ঘরে ঘরে খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ এবং অনলাইনে চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান যেন মেলে ধরেছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ বাস্তবতা। ২০২০ শিখিয়েছে শত প্রতিক‚লতার মাঝেও হার মানা বারণ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন সঙ্কটসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, গ্লোব বায়োটেকের ‘ব্যানকোভিড করোনা ভ্যাকসিন’ উৎপাদন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মানবসূচক উন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রণোদনা বাস্তবায়নের দ্বারাই ’২০ যেন আবারও শিখিয়ে গেল কিভাবে দুঃসময়কে জয় করতে হয়। জীবন যেখানে থেমে গেছে, সেখানে এই চলমান প্রকৃতিতে ২০২০ বুঝিয়ে দিল জীবনের অর্থ নিরন্তর ছুটে চলা না, মাঝে-মাঝে স্থিতিও জীবন। একটু সময় ধরে নিজেকে উপলব্ধি, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন গড়া, মানবিকতার মহিমা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব এ সবই নতুন করে যেন শিখিয়ে গেল ২০২০। তাই ২০২০ এর শেখা ও ’২১ এর প্রত্যয় হোক-ডিজিটাল বাংলাদেশে স্বনির্ভরতায়, ভালোবাসায় এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। সকল অশুভকে দূরে সরিয়ে আলোকিত হয়ে উঠুক ২০২১।