• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২১, ০২:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৭, ২০২১, ০৩:০৪ পিএম

লাগল আগুন সবুজ বনে!

লাগল আগুন সবুজ বনে!

‘সাড়া এল চঞ্চল দক্ষিণে, পলাশের কুঁড়ি একরাত্রে বর্ণবহ্নি জ্বালিল সমস্ত বন জুড়ি।’ চারপাশে সবুজের সমারোহ আর মাঝে মাঝে লালচে পলাশ আর শিমুলের আগুনে যেন ঝলসে যেতে থাকে পুরো সবুজ বন। এ আগুন সবুজ বন পুড়িয়ে ফেলতে না পারলেও সৌন্দর্যের দাপটে পুড়িয়ে ফেলার তীব্র ইচ্ছাও কম নয়। আগুনরাঙা পলাশ আর শিমুলে সেজেছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এর পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ মাত্রা যোগ করেছে বাহারি রঙের ফুল। চারদিকে যখন শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি আর রুক্ষতা সেখানে ফুলে ফুলে নতুন সাজে সেজেছে সৌন্দর্যের অপরূপ বরপুত্র খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

সবুজ বৃক্ষ আর সারি সারি লেকের আবরণে মোড়া ক্যাম্পাসে যেন বসন্ত নামে এক অন্য আবেশে। শীত শেষ হতেই গাছে গাছে নতুন কুড়ি আর নানান রংয়ের বাহারি ফুল জানিয়ে দেয় বসন্তের আগমনী বার্তা। শীতের আড়মোড়া ভেঙে রুক্ষতার ক্ষণ ঝেড়ে পলাশ আর শিউলি তার রক্তিম শুভেচ্ছায় যেন বরণ করে প্রকৃতিকে। শিউলি পলাশ আর সবুজের মিতালীতে যেন জাহাঙ্গীরনরগ বিশ্ববিদ্যালয় একটুকরো লাল সবুজের বাংলাদেশে রূপ নেয়। আর এসব দৃশ্য দেখতে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। তবে গত বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে মানুষের সমারোহ কম হলেও প্রকৃতি যেন তার বরকে বরণ করতে কোনো দ্বিধা রাখেনি। বরং বহু আয়োজনে বরণ করেছে নতুন ঋতুকে। এছাড়া নতুন মাত্রা যোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ফুলের বাগান করা হয়েছে, আবার রাস্তার ধারে, পথের ধরে সারি সারি ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই বিচিত্র সব ফুলের সমারোহ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সোজা শহীদ মিনার এর দিকে যেতে রাস্তার পথ ধরে সারি সারি ফুল গাছ দেখা যায়। হলুদ, কমলা রঙের গাদা ফুলে ছেয়ে আছে রাস্তাটি। এছাড়া বিভিন্ন হলগুলোর সামনে বিভিন্ন ফুলের কাজ লাগানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন, প্রশাসনিক ভবনসমূহ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ভেতর, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞানাগারের সামনে, বিবিএ অনুষদের ভেতরে, এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মওলানা ভাসানী, শহীদ রফিক-জব্বার, জাহানারা ইমাম, প্রীতিলতা, নওয়াব ফয়জুননেসা, শেখ হাসিনা হলের ভিতরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে গড়ে উঠেছে সুন্দর সুন্দর ফুলের বাগান।

এ সব বাগানে ফুটেছে নানান প্রকৃতির ফুল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— বিভিন্ন ধরনের গাদা, ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, শিউলী, কড়ুই, কামিনী, গন্ধরাজ, মহুয়া, জারুল, অলকানন্দা, কাঞ্চন, কসমস, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলি, ক্যাসিয়া রেনিজারা, জবাসহ নানা জাতের ফুল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফুল সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত। শত শত প্রজাতির দেশি ও বিদেশী ফুলে ছেয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন। স্থলে যেমন ফোটে নানা প্রকারের ফুল ঠিক তেমনই পানিতে ফোটে শাপলা ও লাল টুকটুকে পদ্ম। পদ্ম আর শাপলা ফুলের রঙে অপরূপ রঙ্গে ভরে থাকে লেকগুলো, সাথে অতিথি পাখির জলকেলি তৈরি করে নব উন্মাদনা। এছাড়া পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে শিউলি ফুলের গাছ অনেক দেখা যায়, রাস্তায় রাস্তায় গাছ থেকে শিউলি ফুল ঝরে পড়ে থাকে। সন্ধ্যার পর ছাতিমের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা থাকে পুরো ক্যাম্পাস। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে ফুলভর্তি বাগান বিলাস গাছটা ভবনটির সৌন্দর্য বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবনটির পাশেই রয়েছে ফুলের বাগান।

এসব ফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য হয়েই থাকে না বরং মনের অজান্তেই আমাদের জন্য হয়ে উঠে বহু উপকারী। যেমনটি বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও ফুলগুলো মানুষের মনকে ভালো রাখে। পরিবেশ সুন্দর রাখে এবং সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য ফুল গাছ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এইসব ফুল গাছ মানুষকে প্রকৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। সবচেয় বড় ব্যাপার হলো ফুল সৌন্দর্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এছাড়া পরিবেশের সাথে ফুলগুলোর নির্ভরতা একটা মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে যা পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, বিস্তার এবং পরিবেশে টিকে থাকার যে প্রয়াস তা ফুলের পরিচর্যা এবং ফুলের বাগান করার মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকে।’