করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেশনজট কাটাতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ৪ মাসে সেমিস্টার এবং ৮ মাসে সেশন শেষ করার পরিকল্পনা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২১ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এই বিষয়ে জানান।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “সেশনজট কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই আমরা পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেব। অল্প সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাস এবং বছরভিত্তিক সেশনকে ৮ মাস করার একটি আলোচনা চলছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই বছর মে মাসের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “সেশনজট কাটানোর সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তার মধ্যে এটি একটি। আগে তো জীবন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। তারপর এসব বিষয় নিয়ে আমরা বসব।”
করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বল্প পরিসরে অনলাইন ক্লাস চলমান রাখলেও শিক্ষার্থীদের নানা সীমাবদ্ধতা ও জটিলতা নিরসন করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অনলাইনে নেওয়া ক্লাসের কার্যকারিতা ও ফলপ্রসূতা নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাছাড়া ডিভাইস না থাকা এবং গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে সেশনজটের দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে শিক্ষার্থীদের।
চার মাসে সেমিস্টার, আট মাসে এক সেশন শেষ করার পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা হয়, তবে সেশনজট এবং ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যদিও সবকিছু নির্ভর করছে কবে নাগাদ করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে তার ওপর।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। তাদের সেশনজটও কমে যাবে। করোনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
পালি ও বুড্ডিস্ট স্ট্যাডিজের শিক্ষার্থী শামা নিশাত নদী বলেন, “এই সিদ্ধান্তটি ছাত্রদের অনেক বেশি সাহায্য করবে। সেশনজট আমাদের জন্য একটা একটা অভিশাপ। সেশনের সময় কমিয়ে আনলে আমরা কিছুটা জলদি অনার্স শেষ করতে পারব।”
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র নাজমুল কায়েস সিয়াম বলেন, “প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনেই তাদের বর্ষ শেষ করছে। আমরা পিছিয়ে আছি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আমরা কিছুটা লাভবান হব।”
অ্যাকাউন্টিং বিভাগের আবদুর রহমান জাবের বলেন, “এই সিন্ধান্তে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় বহির্বিশ্বে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর ব্যপারটি মাথায় রাখতে হবে। তাদের যেন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। আর আমাদের শিক্ষার মান সময়ের সাথে যাতে কমে না আসে।”