• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২১, ০৩:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৪, ২০২১, ০৩:৪৩ পিএম

করোনাকালেও সাফল্যে অনন্য নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাকালেও সাফল্যে অনন্য নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাকালীন পরিস্থিতির মাঝেও ডিজিটাল এডুকেশনাল সিস্টেমের যথার্থ প্রয়োগে নিজেদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে দেশের শ্রেষ্ঠতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

‘করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় টানা বন্ধে আমরা সংকটে পড়েছি বলা যাবে না। কারণ, করোনা শুরুর পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে অনলাইনে ভালভাবে ক্লাসই করতে পারছে না, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী সফলভাবে শেষ করেছে পুরো সেমিস্টিার। শিক্ষার্থীরা পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত ফি মওকুফের বিশাল সুযোগ। শিক্ষার্থীদের পরিবারকেও দেয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা। মা-বাবা হারানো শিক্ষার্থীরাও পেয়েছেন বিশেষ বৃত্তি। করোনার এই মহামারিতে অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো আমরা উদ্বিগ্ন নই।’

করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঠিক এভাবেই নিজ প্রতিষ্ঠানের সফল শিক্ষা কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে কথাগুলো বলছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ইলেকট্রনিক এ্যন্ড টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান জাহিদ। ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা জাহিদ এখন নতুন সেমিস্টারের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত।

কেবল জাহিদ নন। তার মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন লেভেলের ২২ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থী করোনার মধ্যেই ডিজিটাল প্লাটফর্মে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করা সর্বোচ্চ সংখ্যাক শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান এখন নর্থ সাউথ।

অনলাইনে শিক্ষাদানের হালচাল নিয়ে নর্থ সাউথের এমন সফলতার চিত্রই পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশংসায় ভাসছে দেশের বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাস্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ প্রতিষ্ঠানটি। বলা হচ্ছে, নর্থ সাউথের সফল কার্যক্রম অন্য অনেকের জন্যও হতে পরে অনুকরণীয়।

পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে যুক্ত আছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সফলতার সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে তিন হাজারেরও বেশি অনলাইন ক্লাস নিয়েছি, উপস্থিতি ৯৩ শতাংশের মত যা স্বাভাবিক সময়ের থেকেও বেশি। আমাদের একটা ক্লাসও মিস হয়নি। আমাদের কমিটমেন্ট আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেটিভিটেড ছিল বলেই আমরা সফল হয়েছি। আসলে শতভাগ সফলভাবে অনলাইনে শিক্ষাদান একটু কঠিন, তবে সত্যিকারে উদ্যোগী হলে কাজটি যে অসম্ভব নয় মোটেও তাই প্রমাণ করল আমাদের প্রতিষ্ঠান।

অনলাইনে কমবেশি ক্লাস নিশ্চিত করেছে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম কিভাবে সম্পন্ন করলেন? এক্ষেত্রে নর্থ সাউথের অবস্থান দেশের মধ্যে আসলে কেমন? এমন প্রশ্নে নথ সাউথকে এক নম্বরেই রাখলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের জনপ্রিয় এ শিক্ষক ক্লাস নেন নর্থ সাউথেও। তার মতে, দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে করোনাকালে সবচেয়ে সফল নর্থ সাউথ। বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই সফল হতে পারছেনা নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে। করোনায় দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় যে স্থবিরতা তার ছোঁয়া কিন্তু লাগেনি নর্থ সাউথে।

কথা বলে জানা গেল গত ১২ মাসে করোনাকালে তিন সেমিস্টারে সব শিক্ষার্থীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমানে ফি মওকুফ করা হয়েছে। স্টুডেন্ট-এক্টিভিটি ফি শতভাগ মওকুফ করা হয়েছে। মোট ফিসহ মওকুফের হার প্রায় ২০ শতাংশ। মেধাবী ও আর্থিকভাবে কম স্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি হিসাবে ১৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী তাদের বাবা-মা হারিয়েছে তাদের জন্যও বিশেষ বৃত্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।

করোনাকালে ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তাদের দুই দিনের বেতনের সমপরিমান মোট ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। ইউনিভার্সিটি মহামারির সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বাংলাদেশ সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাহায্যে ১১ হাজার ব্যাগ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। কোভিড-১৯ এর পরীক্ষার সহায়তার জন্য সরকারকে পিসিআর মেশিন সরবরাহ করেছে। ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্তদের ২৪ ঘন্টা অনলাইন সেবা দিয়ে আাসছে। জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনজিআরআই) এ তাদের নিজস্ব গবেষণাগারে সার্স-কভ-২ জিনোমকে সিক্যুয়েন্স করে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ কৃতিত্ব অর্জন করে।

কেবল একাডেমিক শিক্ষাতেই সফল নয়। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনসহ নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতির জনকের জীবন নিয়ে একটি বই বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই প্রকাশ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’। যেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নিয়ে লেখা দুই হাজার ১৭৮টি বই কর্নারে সংরক্ষিত আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহায়তায় আয়োজিত ১০০ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার নলেজ পার্টনার হিসেবে যুক্ত নর্থ সাউথ। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বিনা বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ পর্যন্ত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি মেধাবী ও চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রায় দেড়শ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

অন্যদিকে নর্থ সাউথ ‘বিষয় ভিত্তিক কিউ এস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২১’ এ টানা দ্বিতীয়বারের মত স্থান লাভ করেছে। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে একমাত্র নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিই এই মাইলফলক অর্জন করেছে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি উন্নতমানের শিক্ষা পরিচালনা ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্বখ্যাত ক্যানভাসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইতোমধ্যেই। এ ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে নর্থ সাউথ হবে এ পদ্ধতি ব্যবহারকারী দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়।

জাগরোণ/এসকে