• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৯, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম

সহজ হচ্ছে প্রবাসীদের ভোটার করার প্রক্রিয়া

সহজ হচ্ছে প্রবাসীদের ভোটার করার প্রক্রিয়া
অনলাইনেই করা যাবে আবেদন

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে দুই পদ্ধতিতে প্রবাসীদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত পাকা হতে যাচ্ছে। এক. অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন এবং দুই. সনাতন পদ্ধতি।

জানা গেছে, অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ পদ্ধতিতে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক সংশ্লিষ্ট দেশে বসেই ইসির নির্দিষ্ট লিংকে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় সকল কাগজ/দলিলাদি আপলোড করে ভোটার হওয়ার আবেদন ফরম পূরণ করবেন। এর অংশ হিসেবে ইসি কেবলমাত্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি আলাদা সার্ভার বসাবে। এ সার্ভারটি ইসির ওয়েবসাইটে আলাদা লিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে।

প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক করা আবেদনপত্রটি পরবর্তীতে আবেদনকারীর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তদন্তে ইতিবাচক প্রতিবেদন এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশে বসানো হবে ইসির নিবন্ধন কেন্দ্র। সেখান থেকেই বিতরণ করা হবে স্মার্টকার্ড বা এনআইডি। স্মার্টকার্ড নেয়ার সময় আবেদনকারীকে দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে। 

অন্যদিকে, যখন কোনো দেশে নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করে নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রাখবে নির্বাচন কমিশন তখন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিককে ওই কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজ/দলিলাদি সরবরাহ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার হতে  একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, অনলাইনে আবেদন সংগ্রহ করার পর নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে বাড়তি কিছুটা সময় লেগে যাবে। এছাড়া আবেদন জমা দেয়ার পর সেই আবেদন দেশে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এনআইডি ছাপানো হবে। এরপর আবার সংশ্লিষ্ট দেশে তা বিতরণ করা হবে।

এ বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, অনলাইনে ভোটার আবেদন করার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর প্রবাসীদেরই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকরা চলতি জুলাই মাসের শেষ দিকেই অনলাইনে আবেদন করে ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন। এজন্য আলাদা সার্ভার বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য দেশেও একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

জানা যায়, গত ৩ থেকে ৯ মার্চ ইসির একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম সিঙ্গাপুর সফর করে। এরপর দেশে ফিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেসব সুপারিশের ভিত্তিতেই এখন কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

ইসির সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ওই টিম সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস, সিঙ্গাপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড চেকপয়েন্ট অথরিটি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবনাটি প্রণয়ন করে। এতে বলা হয়েছে- সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও তা ১ লাখের বেশি নয়। আর এজন্য তাদের তথ্য নিয়ে দেশ থেকে তদন্তের পর এনআইডি ছাপিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে বিতরণের জন্য ছয় মাস সময় লাগতে পারে। 

তবে ইসির সূত্রগুলো জানায়, কাজটির করার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় সিঙ্গাপুরের আইন। সিঙ্গাপুর সাধারণভাবে কাউকে এক মাসের বেশি ভিসা দেয় না। ফলে ইসিকে কয়েক ধাপে কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা ছাড়া উপায় নেই। এক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ জনের একেকটি টিম ২১ দিন করে সিঙ্গাপুর অবস্থান করে কার্যক্রম চালাবে। আর এজন্য সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে দেশটিতে অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার কার্যক্রম চালানোর জন্য তাদের বুথে অবস্থিত জায়গায় ইসিকে বুথ স্থাপনের জন্য সম্মতি দিয়েছে। এছাড়া সিটি ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের স্পেসও ব্যবহার করা হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন দূতাবাসেই বুথ বসিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি এরইমধ্যে আলোচনা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে দেশটি জানিয়েছে, বুথে বা নিবন্ধন কার্যক্রমে যতজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের কাজ করবেন, একই পরিমাণ লোকবল সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মধ্য থেকে নিতে হবে। এই প্রস্তাবটি মাথায় নিয়েই সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

জুলাইয়ের শেষ থেকে অনলাইনে আবেদন নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে কর্মকর্তাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। যারা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ২১ দিনের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পরবর্তীতে আরেকটি টিম যাবে।

এ বিষয়ে মো. আবদুল বাতেন বলেন, সিঙ্গাপুরে ভোটারযোগ্য নাগরিক আছে ৫০ হাজারের মতো। তাদের ভোটার করা হয়ে গেলে, আমরা অন্য দেশে যাব। এক্ষেত্রে যেসব দেশে বৈধ নাগরিক বেশি আছে, সেখানেই আগে কার্যক্রম চালানো হবে।

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার লক্ষ্য নিয়ে এগোবে ইসি। এর অংশ হিসেবে আগামী ২৮ জুলাই দেশটিতে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ও ইসির যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন।

এইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন