• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৮:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৮:৪৯ পিএম

‘অধিকার খর্বের’ অভিযোগ তুললেন ইসি মাহবুব তালুকদার

‘অধিকার খর্বের’ অভিযোগ তুললেন ইসি মাহবুব তালুকদার
মাহবুব তালুকদার - ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে বাক স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগের পর এবার অধিকার খর্বের অভিযোগ এনেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।  

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) এম নূরুল হুদা ও ইসি সচিব মো. আলমগীরের কাছে লেখা এক আন-অফিসিয়াল (ইউও) নোটে এ অভিযোগ করেন তিনি। ইসির নির্ভরযোগ্য এক সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য। 

নির্বাচন কমিশন সভার কার্যবিবরণীতে বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত না করা প্রসঙ্গে ইউও নোটে ইসি মাহবুব তালুকদার উল্লেখ করেন, গত ২১ জুলাই ২০১৯ তারিখে আমি নির্বাচন কমিশনের ৫০তম সভায় উপস্থিত ছিলাম। উক্ত সভায় আমি ২৫ জুলাই ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সম্পর্কে রূপগঞ্জ উপজেলার ‘কাঞ্চন’ পৌর এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণের নামে প্রচারিত কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এতে উক্ত এলাকার জনগণ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভীতিমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ওই নির্বাচনটি যাতে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে সম্পর্কে আমি কমিশন সভায় বক্তব্য রাখি।

নির্বাচন কমিশনের ৫০তম সভার কার্যবিবরণীর খসড়া আমার কাছে পেশ করা হলে আমার বক্তব্য তাতে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় আমি নথিতে লিখি- ‘৫৮। নির্বাচন কমিশনের ৫০তম সভায় আমি রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছিলাম। বিষয়টি কার্যবিবরণীভুক্ত করে পুনরায় পেশ করা যেতে পারে।’ নথিটি আমি সচিবের নিকট ফেরৎ পাঠাই। সচিব মহোদয় আমার নিকট পুনরায় নথি পেশ না করে আমাকে পাশ কাটিয়ে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে কার্যবিবরণীটি অনুমোদন করিয়ে নেন। আমার কাছে বিষয়টি আইনসিদ্ধ বলে মনে হয়নি। এতে আমার অধিকার খর্ব হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার বক্তব্য কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ না করার যদি কোনো সঙ্গত কারণ থাকে, তা আমাকে অবহিত করা প্রয়োজন ছিল। ইতোপূর্বে কমিশন সভায় বক্তব্য পেশের জন্য আমাকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েও পরে তা পেশ করতে দেয়া হয়নি। 

নির্বাচন কমিশন সভায় আমার উপস্থাপিত বক্তব্য যদি কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন সভায় আমার উপস্থিতিরও কোনো আবশ্যকতা থাকে না। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ১৫ অক্টোবর বাকস্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ এনে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন ইসি মাহবুব তালুকদার। তখন তিনি বলেন, গতবছর (২০১৭ সাল) আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস নির্বাচন কমিশন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এতে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়াও সুশীল সমাজ, মিডিয়া, পর্যবেক্ষণকারী, নারী নেত্রী প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই সংলাপ ছিল একপক্ষীয়।

নির্বাচন কমিশন তাদের বক্তব্য শোনা ছাড়া নিজেদের মতামত প্রদান করেনি, সবার সংলাপ সুদৃশ্য গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হলেও সংলাপের সুপারিশ বা প্রস্তাব সম্পর্কে এ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। সংলাপের কোনো কার্যকারিতা না দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি উক্ত সংলাপ পর্যালোচনা করে কমিশন সভায় কতিপয় প্রস্তাব পেশ করতে চেয়েছি এবং কমিশনের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা শিরোনামে আমি যা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম নির্বাচন কমিশন সভায় তা উপস্থাপনা করতে দেয়া হয়নি।

অথচ বিগত ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয় থেকে ইউও নোটের মাধ্যমে আমাকে আজকের সভায় তা উপস্থাপনার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমাকে আমার প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করতে বলে তা না দেয়ায় আমি অপমানিত বোধ করেছি।

বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরকম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেছি এবং এর প্রতিবাদ স্বরূপ নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করেছি।

এইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন