• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৮:৪১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৮:৫২ এএম

ইসিতে গৃহদাহ

সিইসি-সচিবের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ৪ কমিশনার

সিইসি-সচিবের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ৪ কমিশনার

‘‘৪ কমিশনারের অভিযোগের বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর  বলেন, ঘরোয়া আলোচনা পাবলিকলি বলা ঠিক হবে না। তবে এইটুকু বলতে পারি, যা হয়েছে তা আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে’’ 

............................

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা সামনে এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন ৪ নির্বাচন কমিশনার কমিশনার- মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

৪ নির্বাচন কমিশনার নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে সিইসি বরাবর একটি ইউও নোটও দিয়েছেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওইসব পদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেন। জালিয়াতির দায়ে মৌখিক পরীক্ষায়  ১৩৫ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হন। এ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় ইসি ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। ইসির যুগ্মসচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে জনবল শাখা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে এসব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৪ কমিশনার।

রোববার (২৪ নভেম্বর) ৪ কমিশনার সংবিধান, আরপিও, ইসি সচিবালয় আইন ও বিধির আলোকে “নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওপর কার্যাদি’’র বিষয়ে ‘নির্বাচন কমিশন’ এর এখতিয়ার প্রসঙ্গে” এক লিখিত অভিযোগ সিইসির কাছে পাঠিয়েছেন। অভিযোগ পত্র সই করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। 

ইউও নোটে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘‘সচিবালয় এককভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লংঘন।’’ 

ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর দৈনিক জাগরণকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কিছু হয়েছে। নিয়োগে কোনও ধরনের অনিয়ম হয়নি। ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ইসি, পিএসসি, জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন। ওই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, নিয়োগে কোনও ধরনের অনিয়ম হলে কমিশন তা তদন্ত করে দেখতে পারে। কমিটির সুপারিশ কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সিইসির কাছে আমিই উপস্থাপন করেছি। ২০০৯-২০১০ সাল থেকে নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে।

ইউও নোটে চার কমিশনার উল্লেখ করেন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সিইসির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার একপর্যায়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগের বিষয় ও এ সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বর্হিভূত। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন দেন। ওই সভায় সচিব আরও বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়াদি সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।’’

৪ নির্বাচন কমিশনারের লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়— 

(ক) নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠিত। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করবে এবং সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নিকট দায়ী থাকবেন।

(খ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন। বরাদ্দকৃত অর্থ যে সকল খাতে ব্যয় হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কমিশনের এখতিয়ারভূক্ত এবং কমিশন কর্তৃক অনুমোদন আবশ্যক। মাঝে-মধ্যে নির্বাচন প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কোনও কোনও বিষয় উপস্থাপন করা হলেও অন্য কোনও আর্থিক বিষয়ে কমিশনকে অবগতও করা হয় না। যাহা নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লংঘন।

(গ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪ সহ অন্যান্য ধারা বর্ণিত কমিশনের ওপর অর্পিত সকল কার্যাদিতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কমিশনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদুপরি সচিবালয় এককভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তা গত ১৪ নভেম্বরের কমিশন সভায় সিনিয়র সচিব তুলেও ধরেছেন। যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লংঘন।

(ঘ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সকল বিষয়ে সংবিধানসহ বিদ্যমান সকল আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হবে। একইসঙ্গে স্বচ্ছতাও জবাবদিহিও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

লিখিত অভিযোগপত্রে আর বলা হয়, ‘‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০১০ এর ৫(১) ধারায় ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর ন্যস্ত থাকবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে এবং একই আইনে ১৪(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, “নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নিকট দায়ী থাকবেন।’’ 

আইনের ১৪(২) উপধারা মোতাবেক ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি, নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে সচিবের নিকট দায়ী থাকবেন।’

অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০১ এর ১৬ ধারায় বর্ণিত আছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদন ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন।’’ 

৪ কমিশনারের অভিযোগের বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর  বলেন, ঘরোয়া আলোচনা পাবলিকলি বলা ঠিক হবে না। তবে এইটুকু বলতে পারি, যা হয়েছে তা আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে।

এইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন