• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০৮:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০৮:৪৯ এএম

ইভিএমে যে দুর্বলতা ধরলেন গণমাধ্যমকর্মীরা

ইভিএমে যে দুর্বলতা ধরলেন গণমাধ্যমকর্মীরা
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) দু’টি ইউনিটি। একটি কন্ট্রোল ইউনিট এবং অন্যটি ব্যালট ইউনিট। এর মধ্যে ব্যালট ইউনিটটি অরক্ষিত। কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিংয়ের পর ব্যালট ইউনিটে গিয়ে একজনের ভোট দিতে পারেন অন্যজন। কেননা কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালট ইউনিটে তা নেই। 

সোমবার (৬ জানুয়ারি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন উপলক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য ইভিএম প্রদর্শনীতে এই ত্রুটি সনাক্ত করেন সাংবাদিকরা।

বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম প্রযুক্তিদ্ধ বিশেষজ্ঞরা যন্ত্রটির নানা খুটিনাটি ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। এসময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীরা ইভিএম যন্ত্রে ডেমো ভোটে অংশ নেন।

সাংবাদিকরা ইসির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দেখিয়ে দেন ইভিএমে কিভাবে একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারেন। দেখা গেছে, একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইভিএম মেশিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। আর ব্যালটের মতো ভোটকক্ষে উপস্থিত থাকেন বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টরা। একজন ভোটার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, স্মার্টকার্ড বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দ্বারা কন্ট্রোল ইউনিটে ভোটার সনাক্তের পর তাকে ভোটদানের জন্য বিবেচনা করা হয়। এই সময় ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার বা প্রভাবশালী প্রার্থীর এজেন্ট অনেক ক্ষেত্রে ব্যালট ইউনিটে পছন্দের প্রতীকে চাপ দিয়ে কনফার্ম বার্টন চাপার সুযোগ পান। ভোটারকে ভোটদান থেকে ফিরে আসতে হয়।
 
প্রদর্শনীতে কর্মকর্তারা দাবি করেন, ইভিএম মেশিনে জাল ভোট দেয়া যায় না। তখন কয়েকজন সাংবাদিক কয়েকটি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে প্রশ্ন করেন, ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ব্যালট ইউনিট সচল করার পর তাকে ভোট দিতে না দিয়ে অন্য কেউ ওই ভোট দিয়ে দিলে তা ঠেকানোর কোনো উপায় আছে কিনা? 

এর জবাবে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্ণেল মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে ব্যালট ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার পদ্ধতি নেই। 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মিললে এক শতাংশ ভোটারকে ভোট দেয়ার ক্ষমতা পাবেন সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। তবে আঙ্গুলের ছাপ না মেলা ভোটারের সংখ্যা যদি বেশি হয়, তখন নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ওই ক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে। ইভিএম প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ইভিএম প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বাংলাদেশেই ইভিএম তৈরি করা হয়েছে। তবে তারা কিছু প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন, আইটি সিস্টেম কনসালটেন্ট এ এইচ এম আবদুর রহিম খান, সিস্টেম ম্যানেজার ফারজানা আখতার  প্রমুখ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ এইচ এম আবদুর রহিম খান বলেন, একেকটি নির্বাচনে সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের একেক ধরনের ক্ষমতা দেয়া থাকে। ওই এলাকার ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্টতার হারের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। আমরা ঢাকার ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা দেখেছি। এক শতাংশের মতো ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ অস্পষ্ট। তাই সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে এক শতাংশ ভোটারকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ি ইভিএম মেশিনে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পরই ভোট দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু মেশিনের সঙ্গে আঙ্গুলের ছাপ না মিললে তখন সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে উক্ত ভোটারকে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিবেন।

ইসির কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিটি ইভিএমে খরচ হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার টাকা। ইভিএম বাংলাদেশে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি এটি তৈরি করেছে। তবে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। ইভিএম মেশিনের ওয়ারেন্টি দশ বছর। নির্বাচনে ব্যালটের তুলনায় ইভিএম’র খরচ কম নাকি বেশি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটির সঠিক হিসাব করিনি। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ক্রমান্বয়ে খরচ কমে আসবে।

প্রদর্শনীতে জানানো হয়, ইভিএম চালুর আগে সব এজেন্টদের এটি দেখানোর বিধান রাখা হয়েছে। ইভিএম মেশিনের সফটওয়্যার একবারই ইনস্টল করা হয়েছে। এসব সফটওয়্যার কারচুপি করা যাবে না। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল নির্দিষ্ট কার্ডে সংরক্ষিত থাকবে। ভোটের পরও ওই কার্ডের ফল দেখা যাবে।

এইচএস/বিএস