নিজেদের আস্থা না থাকার কথা জানিয়ে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নানা রকম শঙ্কা-সমালোচনা করেই যাচ্ছেন। দলটির হাই কমান্ড নিয়মিতই ‘ইভিএম ভোট চুরি যন্ত্র’ বলেও প্রচার করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভরসা করছেন ইভিএমে।
ইভিএমের ওপর অগাধ আস্থা থেকেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরছেন না তারা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত একাধিক বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে এমনটাই চিত্র পাওয়া গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৮ নং ওয়ার্ডের ‘জনগণের মনোনীত’ কাউন্সিলর প্রার্থী সহিদুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, সারুলিয়া ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আগে আমি এ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। ছিলাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন আমি পাইনি। তবে মাঠের জনগণ আমার সাথে আছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট কারচুপি হওয়ার সুযোগ না থাকায় আমি নির্বাচনের মাঠে আছি। আশা করি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি প্রমাণ করতে পারবো ‘ইভিএম সুষ্ঠু ভোটের রক্ষাকবচ’। এ যন্ত্রেই জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী আইয়ুব আনছার মিন্টু দৈনিক জাগরণকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। তাই জনগণের চাওয়াকে সম্মান জানাতে নির্বাচনের মাঠে আছি। নির্বাচন কমিশন আশস্ত করে ইভিএমে ভোটারদের ভোটের অধিকার শতভাগ নিশ্চিত হয়। আশা করি, ডিজিটাল ভোটিং মেশিনে জনগণের ভোট সত্যি সত্যি সুরক্ষিত থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহ সভাপতি কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘‘আমি দলীয় নেতাদের কাছে আর্জি জানিয়েছি, ৩ নং ওয়ার্ড উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। যেহেতু ইভিএমে ভোট হচ্ছে, কেন্দ্র দখল বা পেশীশক্তি দেখিয়ে ভোট ছিনতাইয়ের সুযোগ থাকছে না তাই ভোটের ফলাফলেই প্রমাণ হবে এলাকার জনগণের কাছে সত্যিকার অর্থে কোন প্রার্থী জনপ্রিয়।’’
ডিএনসিসির ৫ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা। মাঠে থাকার সিদ্ধান্তে অনড় জানিয়ে তিনি বলেন, গতবারও আমাকে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, আগামীতে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে। পরে আমি সাধারণ মানুষের চাপ থাকার পরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমার এলাকার মানুষই আমাকে জোর করে নির্বাচন করাচ্ছে। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছি- এই ওয়ার্ড উন্মুক্ত করে দিন। ইভিএমে ভোট। ভোট কারচুপির সুযোগ তো নেই। আমরা নির্বাচন করি। ভোটের পর প্রমাণ হবে কে বেশি জনপ্রিয়।
ডিএনসিসির ৬ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি বলেন, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তার জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা নেই। ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটের পর আমার কথার প্রমাণ মিলবে ইনশাল্লাহ।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট চলবে।
এবারই প্রথম ঢাকার দুই সিটির ভোটে অর্ধকোটিরও বেশি ভোটার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ইভিএমে ভোট দেবেন।
ভোটের আগে আগামী ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি দুই সিটির প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবে ইসি।
ইভিএমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, নিরাপত্তা ‘শতভাগ’ নিশ্চিত করেই ইভিএম কাস্টমাইজ করা হয়েছে। ফলে ইভিএমে অনৈতিক কার্যক্রম করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
ছবি ● সংগৃহীত
এইচএস/এসএমএম