• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ১০:৩৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ১২:২৩ পিএম

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত উত্তর সিটির প্রার্থীরা

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত উত্তর সিটির প্রার্থীরা
নির্বাচনি গণসংযোগে ঢাকা উত্তর সিটির আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ - ছবি : জাগরণ

শেষ মুহূর্তের নির্বাচনি প্রচরণায় সরব ঢাকা উত্তর সিটি। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারণায় মুখর এলাকাগুলো। তবে চোখে পড়ার মতো বিষয় হল- দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিমুখতার বিষয়টি।

সরেজমিন মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লা ছেয়ে গেছে নির্বাচনি পোস্টারে। রাস্তায় রাস্তায় বাজছে নানা সুরের নির্বাচনি গান। মাঝে মাঝে ভোটের স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠছে বিভিন্ন এলাকা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের কেউ কেউ পথসভা করছেন, কেউ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন চাইছেন, কেউ নিজ এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করে ভোট চাইছেন।

উত্তর সিটির আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের সময় কেটেছে ব্যাপক ব্যস্ততার মাঝে। নিজের নির্বাচনি এলাকার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রচারণায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এসময় নিজের নৌকা প্রতীকের প্রচারণার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষেও সৌজন্য প্রচারণা চালান আতিকুল।

৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী নাসিরুদ্দিন সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণায় মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম   -  ছবি : জাগরণ

উত্তর সিটির নবগঠিত ওয়ার্ডগুলোতে এবারের নির্বাচনি উৎসবের আমেজ যেন একটু বেশিই। পুরুষদের পাশাপাশি নিজ প্রার্থীর প্রচারণায় এখানে পিছিয়ে নেই নারীরাও। লিফলেট বিলি থেকে শুরু করে মৃদু স্লোগানে তারা প্রচারণা চালিয়েছেন বেশ।

কয়েকটি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন উৎসবের ভোটের প্রতীক্ষায় আছেন তারা। আর ইভিএম ভীতি কেটে যাওয়ায় এবার ভোটারদেরও কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ উৎসুক বলেই মনে করছেন প্রার্থীরা। তাদের দাবি, ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও তাদের নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে এবার বেশ সফল নির্বাচন কমিশন। প্রত্যেক প্রার্থীই দাবি করেছেন- সাধারণ মানুষ তাদের পক্ষে আছেন। তবে তাদের এই দাবির বাস্তব প্রতিফলন দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

উত্তর সিটি ১ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আফসার উদ্দিনের প্রচারণায় নারী সমর্থকদের একাংশ -ছবি: জাগরণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পোস্টারে পোস্টারে ঢাকা পড়েছে পুরো এলাকা। এই এলাকায় প্রার্থীদের প্রচারণার আওয়াজ তুলনামূলক কম, বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। তবে এই ওয়ার্ডে রিকশায় মাইক লাগিয়ে ভোট চাওয়ার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো।

একই অবস্থা দেখা গেছে ৩১, ৩৩ ও ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডেও। তবে এদিনও বেশ ম্লান ছিল বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচারণা। বেশ কয়েকটি এলাকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দাবি, দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় বিদ্রোহীদের অনেকেই নিজ নিজ দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর প্রচারণাও অনেকটাই নীরব। এক্ষেত্রে খুব বেশি করে উঠে এসেছে বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কথাই।

শেষ মুহূর্তের জমজমাট নির্বাচনি প্রচারাভিযান  - ছবি :জাগরণ

এদিন উত্তর সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো: সাইফুর রহমান  প্রচারণা ছিল বেশ সরগরম। উত্তর সিটির মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের নৌকা প্রতীকের প্রচারণার পাশাপাশি তার নির্ধারিত ব্যাডমিন্টন প্রতীকের সমর্থনে সারি সারি ব্যাডমিন্টন হাতে সমর্থকদের বেশ স্বতঃস্ফূর্ত প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। 

এদিকে ৫১ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণার কাজ চলছে রীতিমতো রুটিন করে। প্রার্থীদের দাবি, তাদের নির্বাচনি এলাকায় একাধিক স্কুল রয়েছে আর সেজন্য এসব এলাকায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। 

এ প্রসঙ্গে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ দৈনিক জাগরণকে বলেন, পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই নিজের প্রচারণায় তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার নির্ধারিত সময়গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। সেজন্য সকালের প্রথম অংশে, সন্ধ্যার পর কিছু সময় এবং রাত করে উচ্চ শব্দে প্রচারণা চালানো থেকে সম্ভাব্য পর্যায়ে বিরত থাকার কথা জানিয়েছেন যুবরাজ। এরপরেও যে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে তা মেনে নিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।

প্রার্থীদের এমন পদক্ষেপকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় বলে অভিহিত করে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়া হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী অহনা ফেরদৌসীর অভিভাবক মাসুদ রানা জসীম বলেন, প্রার্থী যে-ই হন তাদের এমন মানসিকতাকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গেছে এদেশের মানুষের মানসিকতা, বেড়েছে সচেতনতা। নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় প্রার্থীরা বিষয়টি গ্রাহ্য করায় আমরা সত্যি খুশি।

আতিকুল ইসলামের প্রচারণায় তারকাদের ভিড়   - ছবি :জাগরণ

উত্তর সিটির পুরনো ওয়ার্ডগুলোর ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টিই এবারের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সামনে প্রধান নির্বাচনি ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে। অপরদিকে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে প্রত্যাশার অন্ত নেই। এর মাঝে বিশেষভাবে উঠে এসেছে সড়কের বেহাল দশার অবসান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও দ্রুততম সময়ে নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির পথ সুগম করা। সেক্ষেত্রে নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। এলাকাবাসীর দাবি, অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থীই এলাকার সন্তান, তারা যেন কখনো সেটা ভুলে না যান। তাহলে যেমন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ সহজ হবে, তেমনি সামনের সময়গুলোতে নিজের অবস্থান ধরে রাখা সহজ হবে প্রার্থীদের জন্য। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীদের কণ্ঠে বিরোধী প্রার্থীর চেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়েই বেশি ছিল উৎকণ্ঠার সুর। এ সময় প্রার্থীরা নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৫৪ লাখ। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩। উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। উত্তর সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে  ২৫১ ও সংরক্ষিত পদে ৮২ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে এবার মাঠে রয়েছেন।

এসকে/ এফসি