• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০, ১০:০৭ পিএম

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন

জয়ের পথে তাপস-আতিক

জয়ের পথে তাপস-আতিক
জয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম - ছবি : সংগৃহীত

এবারও ঢাকার দুই সিটির একটিতেও জয়ী হতে পারল না বিএনপি। অনেকটা শান্তিপূর্ণ প্রচার ও নির্বাচনে প্রায় দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছে তাদের মনোনীত দুই প্রার্থীকে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আবারো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম। রাত ১০টায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৯টির ঘোষিত ফল অনুযায়ী নৌকা প্রতীকে আতিকুল পেয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আওয়াল পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৫ ভোট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন নগরপিতা হলেন শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণের মোট ১ হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে সর্বশেষ ৯৭৯টির ঘোষিত ফল অনুযায়ী নৌকার প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৫ ভোট। অসমর্থিত সূত্রে অন্যান্য কেন্দ্রেও দুজনই বিজয়ী হয়েছেন। 

সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ভোট গ্রহণ। দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ এবং বয়স্কদের আঙুলের ছাপ মেলানোয় দুর্ভোগের মধ্যেও অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় নির্বাচন। সম্পূর্ণ ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ভোট শেষে ইভিএম মেশিন থেকে ভোটের ফল সংগ্রহ করে তাতে প্রার্থীদের এজেন্টদের স্বাক্ষর নিয়ে ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো হয়। পরে দুই সিটির রিটার্নিং অফিসার আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন।

এবার ভোট গ্রহণে দুই সিটিতে ব্যবহার করা হয় ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএম। দুই সিটি মিলিয়ে ১৩ জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনা এবং মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির চার প্রার্থীর মধ্যে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে অনেকটা স্বস্তির সঙ্গেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা কেন্দ্রবিমুখ হওয়ায়  এবং বিএনপি নেতৃত্ব তাদের ভোটকেন্দ্রমুখী না করতে পারায় তাদের ভরাডুবি হয়েছে।
    
ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো হলেও ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবেশ তৈরি করেছি। ভোটার আনার দায়িত্ব তো আমাদের নয়, প্রার্থীদের। তারা ভোটারদের আনবে।’ এসময় ভোটের সার্বিক পরিস্থিতিতে তিনি সন্তুষ্ট বলেও জানান।  

ইসি সূত্র অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে, পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তর সিটিতে মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৩১৮টি। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। আর ভোটকক্ষ ৭৫৪টি। 

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এর মধ্যে, পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি। এ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। আর ভোটকক্ষ ৮৭৬টি।

সার্বিকভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম। এদিন দুপুরে ঢাকা দক্ষিণের সিটি কলেজ কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ শেষে ফোরামের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মাওলানা মো. আবেদ আলী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে ভোটাররা উল্লসিত।’ ৩৭০টি কেন্দ্র থেকে তারা সংবাদ সংগ্রহ করেছেন, নিজেরা ১২ কেন্দ্রে গিয়ে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সকালে ঢাকা উত্তরের রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনো গণ্ডগোলের খবর নেই। এজেন্ট বের দেয়ার অভিযোগ তারা (বিএনপি) সব সময় করে থাকে। তবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে যখনই অভিযোগ গেছে তখনই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ বিএনপির
এজেন্টদের বের করে দেয়ার বিষয়ে ঢাকা উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রতিনিধি মোহাম্মদ জুলহাস উদ্দিন দুপুরে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন। বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ও কর্মীদের ওপর হামলা, বিএনপির ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়া, ইভিএম হ্যাক করার মতো কথাও এতে বলা হয়েছে। জুলহাস সাংবাদিকদের বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি তাদের কথা শোনেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা ঢালাওভাবে অভিযোগ করেছে, কোনো স্পেসিফিক অভিযোগ করেনি। নির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয়ার ফলে ব্যবস্থা নিতে অসুবিধা হচ্ছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির শতাধিক ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপি মেয়রপ্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছে দক্ষিণে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মনিটরিং সেল। দক্ষিণে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের বাসায় মনিটরিং সেলের সদস্য আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমাদের কাছে খবর আসছে, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে। বেশকিছু কেন্দ্রে এজেন্টরা প্রবেশ করতে পারলেও পরে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এসে তাদের বের করে দিয়েছে। এজেন্টদের বের করে দেয়ার কথা আমরা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছি।

বিএনপি মিথ্যাচার করছে, দাবি আওয়ামী লীগের
ধানের শীষের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে তা নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থান জানাতে সংবাদ সম্মেলনে নানক বলেন, বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন চিরাচরিত মিথ্যাচার দিয়ে দিন শুরু করেছেন। তিনি নিজে গোপীবাগ শহীদ শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেছেন। সেই কেন্দ্রে তিনি যখন ভোট প্রদান করেন তখন তাদের পোলিং এজেন্ট ছিল না। অথচ তারা বায়বীয় কায়দায় মিথ্যাচার করছে যে, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন আপনারা লক্ষ করে দেখবেন যে, ভোট শুরু হওয়ার আগেই ইশরাক বলেছিলেন, ‘আহত বা নিহত যা-ই হই, ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করব না। যেখানে নিজেদের পোলিং এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে নাই, সেখানে আগে থেকেই আহত বা নিহত হওয়ার কথা বলে মাঠ গরম করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন বানচাল করার দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।’

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগে আন্তর্জাতিক বিধির লঙ্ঘন হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কূটনৈতিক মিশনগুলো থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি দেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক নিয়োগ আন্তর্জাতিক বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিরত বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে মনোনীত করে কূটনৈতিক মিশনগুলো সঠিক কাজ করেনি।

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ 
রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, সিটি নির্বাচন শুরুই হয়েছে বড় রকমের আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে নিজে ভোট দিয়ে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এটা সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল। 

জেডএইচ/ এফসি