• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০, ০৭:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০, ০৭:২১ পিএম

প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে ধীরগতি

প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে ধীরগতি

রাজধানীর মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার করছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। দুই চুলার জন্য দিতে হতো ৯৭৫ টাকা। প্রি-পেইড মিটার লাগিয়ে নেয়ার পর প্রতি মাসে দুই চুলায় রান্না করলেও তার বিল আসে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার মতো। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করে গত চার মাসে দেড় হাজার টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে তার। রাজধানীতে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই এ সুবিধার কথা জানালেও মিটার বসানোর ক্ষেত্রে ধীরগতির অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন এলাকায় মিটার বসানো হলেও তাতে সংযোগ পেতে লাগছে ছয় থেকে আট মাস। ঠিক কী কারণে এত সময় লাগছে, তারও সদুত্তর পান না কোম্পানির লোকজনের কাছ থেকে। মিটার লাগানোর ধীরগতির কারণে পাইপলাইনের গ্যাসে বাড়তি বিল গুনতে হচ্ছে।

জরিপের তথ্য বলছে, সব চুলায় প্রি-পেইড সংযোগ দেয়া গেলে প্রতি সংযোগ থেকে ৩৩ ঘনমিটার করে গ্যাস সাশ্রয়ী হতো, যা নতুন সংযোগ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারত।

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পাইপলাইনের সংযোগ চেয়ে প্রি-পেইড সংযোগে ৪০০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ কেউ ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাসের সমান গ্যাস ব্যবহার করতে পারছে। গত পাঁচ বছরে সরকার সব বিতরণ কোম্পানিকে গ্রাহকের দুয়ারে প্রি-পেইড মিটার বসানোর কথা বললেও তা বসাতে পারেনি। আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীদের মোট গ্রাহকের মাত্র ৩ শতাংশ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ৪৩ লাখ গ্রাহকের আঙিনায় যদি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা যেত, সেখানে সরকার বিপুল অংকের গ্যাস সাশ্রয় করতে পারত।

তিতাসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা গ্রাহকের আঙিনায় ২ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী বলছেন, তারা দুই চুলার বিপরীতে মিটারে ৪০০ টাকার গ্যাস সাশ্রয়ী হচ্ছেন। এভাবে ২ লাখ গ্রাহকের ৪০০ টাকা করে সাশ্রয়ী হলে মাসে ৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে গ্রাহকের। অন্যদিকে গ্যাসের অপচয়ও কমছে। তবে আবাসিকের গ্রাহকরা যারা প্রি-পেইড মিটার পাননি, তারা এ সাশ্রয় পাচ্ছেন না। ফলে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহারে কম-বেশি হলেও ৯৭৫ টাকা করে তাদের প্রতি মাসে বিল দিতে হচ্ছে।

জানা গেছে, পাঁচটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আওতায় সারা দেশে গ্যাসের ৪৩ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতায় ২৮ লাখ ৪৬ হাজারের মতো আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। যার বেশির ভাগই ঢাকা ও আশপাশের এলাকার। এর মধ্যে মাত্র দুই লাখের মতো প্রি-পেইড মিটার সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছে তিতাস। ৪৩ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তিতাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে এত ধীরগতিতে ভোগান্তি ও খরচ পোহাতে হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ফয়জার রহমান জানান, এরই মধ্যে আমরা দুই লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম শেষ করেছি। আরো ১ লাখ ২০ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে আমরা নতুন করে মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারব।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রি-পেইড মিটার নিয়ে একটা মাস্টার প্ল্যান করেছি। সেখানে চার লাখ করে একটা প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে চলে গেছে। এভাবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিতাসের সব গ্রাহকের আঙিনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম শেষ করা হবে।


জাগরণ/এমইউ