• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০১৯, ০৩:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০১৯, ০৯:৪৪ পিএম

সঙ্গীতের অনলাইন উত্তোরণ

সঙ্গীতের অনলাইন উত্তোরণ

দেশিয় সঙ্গীতের এখন অনলাইন যুগ। কারণ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গান শোনার মাধ্যমে চলে এসেছে বড় ধরণের একটা পরিবর্তন। অনেকে একে অনলাইন গানের যুগ বলে অভিহিত করেন।


একটা সময় ছিল যখন মানুষ ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনতো। মূলত গত শতকের আশির দশক থেকে এই শতকের শুরু পর্যন্ত অডিও ক্যাসেটের প্রচলন ছিল। এরপর ক্যাসেটের স্থান করে নেয় সিডি প্লেয়ার। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আসে পেনড্রাইভ, মেমেরিকার্ড, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি ডিভাইস। এগুলো থেকে গান শোনার জন্য তৈরি হয় নতুন নতুন প্লেয়ার। কিন্তু বর্তমানে এই সবকিছুকে ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে অনলাইন মাধ্যম।

ইন্টারনেট দুনিয়ায় সব হার্ড ডিভাইসকে দূরে ঠেলে প্রচলন ঘটে সফট ডিভাইসের। এরমধ্যে ইউটিউব, ফেসবুক ও ওয়েব এখন গান শোনার জনপ্রিয় মাধ্যম। এসবের কল্যাণে শ্রোতারা যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে উপভোগ করতে পারছেন তার পছন্দের সব গান। সেইসাথে বিভিন্ন মুঠোফোন কোম্পানীর অ্যাপসের কারণে বদলে যাচ্ছে শ্রোতাদের গান শোনার অভ্যাসও। গান শোনার জন্য গ্রামীণফোনের জিপি মিউজিক ও রবির ইয়ন্ডার মিউজিক অনেক শ্রোতার কাছে খুব প্রিয়।

সিডি/ভিসিডির দোকানগুলো এখন অচল প্রায়। সেখানে অডিও গানের কোনো অ্যালবাম বিক্রি হতে দেখা যায় না। তবে অনেক দোকানি এখন অনলাইনে ক্রেতাদের কাছে গান বিক্রি করে থাকেন। অনলাইন থেকে শ্রোতাদের বিভিন্ন ডিভাইসে গান লোড করে ব্যবসা করে থাকেন। আর যেসব দোকান ডিজিটাল হতে পারেনি তারা ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছেন। অন্যদিকে অডিও কোম্পানীগুলোও এখন অ্যালবাম  কোনো ডিভাইসে মুক্তি না দিয়ে সরাসরি অনলাইনে মুক্তি দিয়ে দেন। অনলাইন থেকেই তারা অর্থ আয় করে থাকেন। ক্যাসেট, সিডি কিংবা কোনো ডিভাইস তৈরি ও বিক্রির ঝামেলা নেই।

সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী

এ প্রসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, ‘সময়ের সাথে সঙ্গীত জগতে একধরনের রূপান্তর আসলো। আগে মানুষ লং প্লেতে গান শুনতো।তারপর ক্যাসেটে। এরপর সিডি প্লেয়ারে। আর এখন মানুষ অনলাইনে গান শোনে। অর্থাৎ ফেসবুক ও ইউটিউবে গান শোনে তারা। তার মানে এই নয় যে, মানুষের গান শোনা কমে গেছে।’

জি-সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদ

অডিও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজের কর্ণধার ও বাংলাদেশ মিউজিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদ সঙ্গীতের পালাবদল প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন আমাদেরও সময়ের সাথে তাল মেলাতে হচ্ছে। পুরো সঙ্গীতশিল্প এখন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের হাতে। আমাদের হাতে নিয়ন্ত্রণটা নেই যেটা ক্যাসেট ও সিডির যুগে ছিল। তবে জি-সিরিজ থেকে এখন আমরা সরাসরি গুগল ও মুঠোফোন কোম্পানির সাথে কাজ করছি।’

মিউজিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যাসেট ও সিডির যুগ আর নেই। গান এখন বিক্রি হচ্ছে অনলাইন মাধ্যমে। যখন মাধ্যম একটাই ছিল তখন লক্ষ লক্ষ ক্যাসেট ও সিডি বিক্রি হয়েছে। ২০০৮ সালের পর ধস নামলো এই শিল্পে। ক্যাসেট ও সিডি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেল। তবে অনলাইন আসায় এর মাধ্যমে অনেকটা ধস কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।’

গীতিকার ও সুরকার প্লাবন কোরেশী

গীতিকার ও সুরকার প্লাবন কোরেশী বলেন, ক্যাসেট ও সিডি বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি এ পেশায় আস্থা হারিয়ে ফেলি। বেকার হয়ে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হয়ে যাই। কিন্তু অনলাইন মাধ্যম আসায় আমি আবার পেশায় মনোযোগী হই। আমার গান নিতে শিল্পী ও প্রযোজকরা তাড়া দিতে থাকে। আমি আবার উঠে দাঁড়াই। এখন আমি বেশ ভালো আছি। গান লেখা ও সুর করা নিয়ে আমি এখন রাত-দিন ব্যস্ত।প্রতিদিনই আমি গান লিখি ও সুর করি।’

মিউজিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা কয়েক বছর আগেও ছিল দেড় শতাধিক। বর্তমানে সে সংখ্যা পঁচাশিতে নেমে এসেছে। এখন যারা টিকে আছে তারা টেলিকম কোম্পানিগুলোর অ্যাপে কিংবা অনলাইন মাধ্যমে গান বিক্রি করে টিকে আছে। মুঠোফোন কোম্পানীর অ্যাপ থেকে কোনো গান ডাউনলোড করলে টাকা পাচ্ছে মিউজিক কোম্পানিগুলো। ধীরে ধীরে সব শ্রেণির শ্রোতা অনলাইন মাধ্যমেই ঝুঁকছে বলে জানান মিউজিক কোম্পানির মালিকরা।

এসজে