গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সপ্তদশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। ওই দিন ভোট গণনায় বেলা যত গড়িয়েছে, ততই দেশজুড়ে বিজেপি-বিরোধী শক্তির ভরাডুবির ছবি স্পষ্ট হয়েছে। রাজ্যজুড়েও তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে নরেন্দ্র মোদীর দল। শেষরক্ষা হয়নি আসানসোল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভিনেত্রী মুনমুন সেনেরও।
বিজেপির চেয়ে বেশি আসন পেয়েও আসানসোল কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করতে পারেনি মমতার দল তৃণমূল। ২০১৪ সালে বাবুল সুপ্রিয় এই কেন্দ্র থেকে জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যার উপর আস্থা রেখেছিলেন তিনি মুনমুন সেন। সেই মুনমুন অবশ্য ভোট গণনার দিন বেলা ১২টাতেও বলেছিলেন, ‘এখনও বলছি, আমিই জিতব।’ কিন্তু প্রতি রাউন্ড ভোটগণনার পরপর মুনমুনের থেকে জয়ের ব্যবধান বেড়েই চলে বাবুলের। মুনমুন তার কাছের লোকদের বলতে শোনা যায়, ‘তৃণমূলের লোকেরা যে আমায় বলেছিল আমিই জিতব! তবু বাবুল এত ভোট পাচ্ছে কেন?’
আসানসোল ‘জয় করতে’ গত বুধবার কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলেন মুনমুন। সঙ্গে ছিল পছন্দের কয়েকটি শাড়ি। উঠেছিলেন হাইওয়ের পাশের একটি হোটেলে। গতকাল বেলা ১০টায় আকাশি-নীল শাড়ি, লাল টিপ পরে গণনা কেন্দ্রে যান মুনমুন। প্রথম দুই রাউন্ডেই প্রতিপক্ষ বাবুলের ভোট সংখ্যা দেখে একটু সরে আসেন তিনি। নিজ দলীয় এক কার্যালয়ে ঢুকে মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর আবার আশায় বুকবেঁধে গণনা কেন্দ্রের দিকে রওনা দেন মুনমুন।
সেখানে অনেকটা সময় পার করে আসার সময় দৃশ্যতই বিব্রত ও বিধ্বস্ত দেখায় তাকে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলতে থাকেন, ‘দেখব, তোমরা এখানে কী করে থাক! একটা কাজও ঠিকমতো করোনি তোমরা।’ সেই সাথে দলীয় এক নেতার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলেন, ‘এক মাস চার দিন ধরে এত খাটলাম, তবুও মানুষ বুঝল না!’
বেলা ৩টায় নিজের পরাজয় নিশ্চিত বুঝে আসানসোল ছাড়েন মুনমুন। তার আগে বলেন যান, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢেলে সব সাজাতে হবে। তিনি একাই লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার নিচের লোকগুলো কেউ ভালো নয়। তারাই আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।’ তিনি জানান, তার মতো অভিনেত্রীকে সকলেই তাদের দলে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি কারো দলে যাননি। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রণব মুখার্জীও আমাকে ডেকেছিলেন। আমি রাজনীতির লোক নই, সংস্কৃতির লোক। তবে রাজনীতিতে এসেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে। এরপর আমায় ডাকলে আর পাবেন না তিনি।’
সকালের লাল টিপ তখন কপালে নেই তার। সারাদিনের ঘামে চোখের গাঢ় কাজলও হাল্কা হয়ে গেছে। গাড়িতে ওঠার আগে গেটে দাঁড়ানো হোটেলকর্মীদের ভিড়ের দিকে হাত নেড়ে মুনমুন বললেন, ‘তোমরা সবাই ভালো থেকো। তোমাদের খুব মিস করব।’
এসজে