• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৯, ০৫:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০১৯, ০৬:২৬ পিএম

চলে গেলেন প্রবীণ অভিনেতা-নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশ কারনাড

চলে গেলেন প্রবীণ অভিনেতা-নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশ কারনাড

 

চলে গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং মঞ্চের কিংবদন্তি অভিনেতা গিরিশ কারনাড। আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বহু জনপ্রিয় ছবির পরিচালক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি কানাড়া ভাষার সাহিত্যিক ছিলেন তিনি।

পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সাহিত্য একাডেমি ও একাধিক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত গিরীশ কারনাডের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারতের বিনোদন জগৎ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে তার মৃত্যুর খবরটি পেয়ে শোকবার্তা জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী, কমল হাসান, অনুপম খের, আর মাধবন, অনিল কাপুর, ফারহান আখতার, সুধীর মিশ্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে লেখেন, ‘গিরিশ তার কাজের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে থেকে যাবেন।’ ট্যুইটে শোকবার্তা পাঠান কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়াও। তিনি বলেন, ‘চলে গেলেন জ্ঞানপীঠ সম্মানে সম্মানিত ড. গিরিশ কারনাড। অভিনয় জগত কোনোদিনই ভুলবে না তার অবদান। তিনি ছিলেন দেবী সরস্তাঁবতীর বরপুত্র। তার বহু লেখা সমৃদ্ধ করেছে সারস্বত দুনিয়াকে। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।’

অভিনেতা-পরিচালক কমল হাসান শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘শ্রী গিরীশ কারনাড-এর লেখাগুলি আমাকে মুগ্ধ করে, অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি চলে গেলেন, পিছনে ফেলে গেলেন অসংখ্য গুণমুগ্ধ লেখককে। তাদের কাজই সম্ভবত এই অপূরণীয় ক্ষতিকে খানিক সহ্য করে নিতে সাহায্য করবে।’

৪৩ বছরের বন্ধু গিরিশ কারনাডের মৃত্যুতে স্বাভাবিক ভাবেই বাকরুদ্ধ প্রয়াত অভিনেতার দুই ছবির নায়িকা শাবানা আজমি। তারই মধ্যে বেলায় ট্যুইটে ব্যক্তিগত শোক জানিয়েছেন শাবানা। ট্যুইটে লিখেছেন, ‘শোক প্রকাশের ভাষা পাচ্ছিন না। এখনও গিরিশের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলা হয়নি। ৪৩ বছরের বন্ধুকে স্মরণ করতে একান্ত অবসর লাগে। তাই প্রচার মাধ্যমের কাছে সবিনয় অনুরোধ, অনুভূতি জানতে চেয়ে সেই মৌনতা ভেঙে দেবেন না কেউ।’

মৃত্যুর খবরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, টেলিভিশন থেকেই প্রথম শুনলাম, গিরিশ কারনাড আর নেই। সকালের এই দুঃসংবাদ স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে দিল মন। একের পর এক ইন্দ্রপতন শিল্পী মহলে। বয়স হলে সবাই যাবেন। এটাই স্বাভাবিক। তবু মন মানতে চায় না। কাজ-কম্মের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে গিরিশ কারনাডের সঙ্গে। তাঁর এই চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হল নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতের।

অনিল কাপুর লেখেন, ‘আমার সঙ্গে গিরীশ কারনাডের দেখা হয় যখন তিনি ফিল্ম ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল। ওই সময় ওঁর সঙ্গে ‘পুকার’ ছবিতে কাজ করেছি। প্রসিদ্ধ নাট্যকার তো বটেই, পাশাপাশি একজন বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তার গল্পগুলি চিরদিন আমাদের হৃদয়ে, আমাদের মগজে থেকে যাবে। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা ও প্রার্থনা রইল।’

অনুপম খের শোকবার্তায় লেখেন, ‘শ্রী গিরীশ কারনাড-এর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। তিনি একজন বিরাট মাপের শিল্পী ছিলেন, একজন অসাধারণ নাট্য়কার ছিলেন। ওনার পরিচালনাতেই আমার চলচ্চিত্র জগতে প্রথম খুবই ছোট একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ আসে, উৎসব ছবিতে। পরে তার দু’টি নাটক, ‘তুঘলক’ ও ‘হয়বদন’ নাটকে অভিনয় করেছি… ওম শান্তি।’

১৯৩৮ সালের ১৯ মে মু্ম্বইয়ে জন্ম বহু প্রতিভাসম্পন্ন এই শিল্পীর। ১৯৬১ সালে তাঁর লেখা ‘যযাতি’ নাটকের জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় রডেশ স্কলার সম্মান জানান এই কিংবদন্তি অভিনেতা নাট্যকারকে। এছাড়াও, ‘তুঘলক’ (১৯৬৪), ‘হায়াভরণ’ (১৯৭২) নাটক দুটি তার জনপ্রিয় নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম। দেশের এই অন্যতম কৃতী রত্নকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৭৪ সালে পদ্মশ্রী আর ১৯৯২-এ পদ্মভূষণ সম্মান জানানো হয়।

মঞ্চের পাশাপাশি গিরিশ প্রতিভার ছাপ রাখেন চলচ্চিত্রেও। ১৯৭০ সালে কানাড়া ছবি ‘সংস্কার’-এ প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ওই ছবিতেই চিত্রনাট্যকার হিসেবে তার হাতেখড়ি হয়। ১৯৭৪ সালে সাই পারাঞ্জাপের পরিচালনায় ‘জাদু কি শঙ্খ’-এর মাধ্যমে হিন্দি ছবির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর শ্যাম বেনেগালের ‘নিশান্ত’ (১৯৭৫) ও ‘মন্থন’ (১৯৭৬) ছবির মধ্য দিয়ে জাত অভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থান পাকা করে নেন। হিন্দি ছবিতে সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে সালমান খানের ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ ছবিতে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে। 

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি

এসজেড