• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০২:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০২:৫৪ পিএম

রাজনৈতিক রং বদলে বিভাজন বাড়ছে টলিউডে

রাজনৈতিক রং বদলে বিভাজন বাড়ছে টলিউডে

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। সেই উত্তাপে ঘি ঢালছে সেখানকার অভিনয়শিল্পী-কলাকুশলীদের শিবির বদল। প্রতিদিন তারা দল বেঁধে তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপিতে) যোগ দিচ্ছেন। দলে যোগ দিয়েই সবাই একই কথা আওড়াচ্ছেন—বাংলার মানুষের সেবা করতে চাই।

বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গে টলিউড তারকাদের এভাবে রাজনীতির ময়দানে দেখা যায়নি। তবে তখন কেউ কেউ বাম নেতাদের ভোটের প্রচারে অংশ নিলেও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়াননি। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার প্রারম্ভে অনেক তারকাদের শিবিরে ভিড়িয়েছিল দলটি। তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য সফলও হয়।

এবার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দেখানো পথে হাঁটতে চলেছে বিজেপি। বাংলায় সরকার গঠনের জন্য তৃণমূলকে টেক্কা দিতে ইতিমধ্যে বাঘা বাঘা তারকাদের দলে টেনে নিয়েছে তারা। দলটির বিশ্বাস টলিউডে ঘাঁটি গাড়তে পারলে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে তেমন কোনো ঝোড়ো বাতাসের মুখোমুখি হতে হবে না।

সম্প্রতি সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে রুদ্রনীল ঘোষকে দেখা গিয়েছিল। দীর্ঘ ৭ বছরের সেই সম্পর্ক কাটিয়ে পদ্মফুল মার্কায় সুখ খুঁজে পেয়েছেন।

এদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে রুদ্রনীলকে নিয়ে সমালোচনা থামছে না। মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন তার অনেক ভক্ত। কেউ কেউ তো তার সিনেমা দেখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। যদিও ভক্তদের এমন সমালোচনায় কান দিচ্ছেন না রুদ্রনীল।

রুদ্রনীল বলেন, “আমি একজন নাগরিক। আমার ভক্ত বা দর্শকরাও রাজ্যের নাগরিক। আমার মতো সবার স্বাধীনতা আছে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার বা সক্রিয় রাজনীতি করার। মতের ভিন্নতা আমার দেশের নাগরিক অধিকারের বৈশিষ্ট্য। তাই রাজনৈতিক মতামত আলাদা হওয়া স্বাভাবিক। নির্বাচনের মুখে এই লড়াই প্রবল হয়। নির্বাচনের পর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।”

রুদ্রনীলের মতে ভক্তদের সঙ্গে তার সম্পর্ক সাংস্কৃতিক। রাজনৈতিক নয়। তার ভাষ্য, “আমি যা খাই বা পরি, আমার দর্শক বা ভক্তদের পরতে হবে কেন? বা তারা ব্যক্তিগত জীবনে যা যা ভালবাসেন আমাকেও তাই করতে হবে, এমনটাও আশা করা সঠিক নয়। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সাংস্কৃতিক। রাজনৈতিক নয়। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। তাদের সঙ্গে আমার বা আমার সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক মত আলাদা হতেই পারে, তা বলে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা অটুট রাখি।”

কিছুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দিয়েছেন টলি নায়িকা কৌশানি। তিনিও মনে করেন ভক্তদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ আলাদা। কৌশানি বলেন, “ভক্তরা ঠিক ভক্তের জায়গায় থাকবেন। দেখবেন যখনই আমার নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে তখন সব দলের ভক্তরা সিনেমা হলে ছুটবেন। এটা নিয়ে ভাবছি না আমি। আমার রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। যারা প্রকৃত ভক্ত তারা বিভাজিত হবেন না। আমাকে ভালোবেসে যাবেন সব সময়।”

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ও আমার পরিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদর্শ মানি। তিনি ২৪ ঘণ্টা মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেন। আমিও চাই তার পাশে থেকে বাংলার মানুষের সেবা করতে। আমাকে দেখে অনেক তরুণরা তৃণমূলে যোগ দিতে উৎসাহ পাবেন।”

অপর দিকে বৃহস্পতিবার সবশেষে বিজেপিতে যোগ দেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী পায়েল সরকার। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তেমন কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু জানিয়েছেন, মতাদর্শের মিলের কারণে গায়ে গেরুয়া রং মেখেছেন।

ঢালাওভাবে টলিউড শিল্পীদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম উত্তরবঙ্গ সংবাদের বিশেষ সংবাদদাতা পুলকেশ ঘোষ। তিনি মনে করেন, শিল্পীদের কাজ কমে যাওয়ায় রাজনীতিমুখী হচ্ছেন।

পুলকেশ ঘোষ বলেন, “টলিউড শিল্পী-কলাকুশলীদের হাতে এখন কাজ কম। তাদের হাতে সময় ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। আগে যে টাইট শিডিউল তাদের ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে সেটা কমে গেছে। সেভাবে চলচ্চিত্র ও সিরিয়াল নির্মাণ হচ্ছে না। এ কারণে তাদের হাতে প্রচুর সময় থেকে যাচ্ছে। অবসর সময়টা কাজে লাগানোর জন্যই রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু এটা যে পুরোপুরি কাজ করবে এটা আমি কখনো মনে করি না। নেতারা কিন্তু বরাবরই অভিনেতা হয়। অভিনেতারা সব সময় নেতা হতো না। এ ক্ষেত্রে  দেখা যাচ্ছে, অভিনেতারা নেতা হতে চাইছেন। তবে সবাই যে নেতা হয়ে উঠতে পারবেন, তা নয়। নেতা হতে গেলে পর্দার আভিজাত্য মাটিয়ে মিশিয়ে দিতে হয়।”

তিনি আরো বলেন, “বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে রাজনীতিতে নাম লেখানো নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে একটা সময় শিক্ষকরা বেশি রাজনীতিতে জড়িয়ে যেতেন। রাজনৈতিক নেতারাও শিক্ষকদের পছন্দ করতেন। কারণ, সমাজে শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা থাকে। তাদেরকে সবাই মান্য করেন। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ পরামর্শ চান। ফলে শিক্ষকদের যদি রাজনীতিতে টানা যায়, তাহলে তারা অন্যদের প্রভাবিত করতে পারবেন। এখনকার সময়ে মানুষকে প্রভাবিত করার সব থেকে বড় সেক্টর হচ্ছে অভিনয়শিল্পী ও কলকুশলীরা। তাদের অনেক ভক্ত আছে। তৃণমূল ও বিজেপির নেতারা মনে করছেন, তাদের যদি শিবিরে ভেড়ানো যায় তাহলে বহু লোকের সমর্থন পাওয়া যাবে।”

রাজনৈতিক দলবদলে টলি তারকাদের মধ্যেও সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। একে অপরকে উদ্দেশ করে নানা রকম নেতিবাচক কথা বলছেন। যুব তৃণমূল নেতা অভিনেতা সোহম তো বলেই দিয়েছেন, টলিউডে রুদ্রনীলকে বয়কট করা হোক। অথচ তারা দুজন একসঙ্গে বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এমনকি জনপ্রিয় কমেডি শো মীরাক্কেলে পাশাপাশি বসে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে তারা মুখ দেখাদেখি করেন কি না—সেটা অজানা সাধারণের কাছে।

তবে বলা যায়, রাজনৈতিক ডামাডোলে টলিপাড়ার পরিস্থিতি জটিল আকারে রূপ নিয়েছে। এই জটিলতা কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এবেলাও ভক্তদের দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে।