• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২, ২০২১, ০১:৩৪ পিএম

শতবর্ষে সত্যজিৎ

কখনো ভাবিনি সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করব: শাবানা আজমী

কখনো ভাবিনি সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করব: শাবানা আজমী

মুন্সি প্রেমচাঁদের লেখা ছোটগল্প ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ অবলম্বনে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৭৭ সালে নির্মিত ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন প্রখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমী। যদিও তিনি কখনো ভাবেননি, সত্যজিৎ রায়ের মতো একজন নামজাদা পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করবেন। শতবর্ষে সত্যজিৎ উপলক্ষে বিনোদনভিত্তিক ভারতীয় গণমাধ্যম ‘মিন্ট লাউঞ্জে’ বিশেষ লেখায় এমনটি জানিয়েছেন শাবানা আজমী। 

তিনি লিখেছেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয় করব। যখন (পোশাক ডিজাইনার ও লেখক) শামা জায়েদি আমাকে ফোন করে বললেন, তিনি (সত্যজিৎ রায়) আমাকে ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবিতে নিতে চান। বিষয়টি বুঝতে আমি কিছুটা সময় নিয়েছিলাম। তারপর খুব শান্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলাম। যদিও প্রথম দিকে সত্যজিৎ রায় আমাকে নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। কারণ, তিনি মনে করেছিলেন মির্জার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমার বয়স খুব কম ছিল। আমি কৃতজ্ঞ, পরবর্তী সময়ে তিনি তার ধারণা পরিবর্তন করেছিলেন।”

শাবানা আরও লেখেন, “কিছুদিন পর যখন চলচ্চিত্রটির প্রযোজক সুরেশ জিন্দাল আমাকে ডাকলেন, তখন আমার কাছে মনে হয়নি চুক্তিপত্র দেখার জন্য কিছু জিজ্ঞেস করবেন। যদিও আমি ওই সময় মানিক দার (সত্যজিৎ রায়) সঙ্গে দেখা করিনি। কিন্তু আমি জানতাম, তিনি আমাকে ‘অঙ্কুর’ সিনেমায় দেখেছেন।”

Shabana Azmi in ‍‍`Shatranj Ke Khilari‍‍`. Photo courtesy DAG

 তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে তেহরানে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তার দেখা হয়। তখন শাবানা তেহরান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি ছিলেন। সেসময় তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন যে, চলচ্চিত্রটি নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু তিনি তার করেননি।

শাবানা লিখেছেন, “পরে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। শুটিংয়ের সময় আমি সোজা কলকাতা যাই। যখন আমি টলিগঞ্জের ইন্দ্রপুরি স্টুডিওতে পৌঁছাই, তখন মানিকদা বাইরে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমি হাত নাড়াই। তিনি আমাকে বললেন, ‘প্রথমে আমরা একটি বড় দৃশ্যের শুটিং করব। পোশাক পরে নাও। আমি এসে তোমাকে দেখব’। মূলত আমি জিনস-টি শার্ট পরে স্টুডিওতে যাই। মানিক দা আমাকে কোনও দৃশ্য বা চরিত্রের কথা না বলে কস্টিউম পরতে বলেছিলেন। কস্টিউম পরার পরেই বুঝতে পারি আমার বসা, হাঁটাচলা বদলে গিয়েছে। এরপর মেকআপ রুমে ঢুকে আমাকে জানালেন, জিনস-টি শার্ট পরা অবস্থায় আমার সঙ্গে চরিত্র নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন না। এরপর তিনি আমাকে চরিত্রটি বুঝিয়ে দেন।”

শুটিংয়ের সময় সত্যজিৎ রায় খুব নমনীয় থাকতেন বলে জানান শাবানা। শিল্পীরা যেন ভয় না পান সেজন্য তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। শাবানার কথায়, “তিনি আমাকে কোনোরূপ ভয় দেখাননি। এমনকি চারপাশে এমন পরিবেশ করে রেখেছিলেন যেন আমি আতঙ্কিত না হয়ে পড়ি। আমার মাত্র তিন দিনের শুটিং ছিল। যখন আমি প্রথম শট দেই তখন তিনি বলেন, ‘খুব ভালো’। তারপর তিনি আমার কাছে গিয়ে খুব আস্তে করে ভদ্রভাবে বলেন, “শটটা আমরা আবার নিতে চাই। তুমি কি সংলাপটিকে আংশিক অভিযোগ, কিছুটা রাগ, কিছুটা আঘাত দিয়ে ভাঙতে পারবে?” এই এক লাইন সমস্ত কিছুর পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছিল।”

SHATRANJ KE KHILARI !!! - SHATRANJ KE KHILARI Audience Review -  MouthShut.com

সিনেমার কাজ শেষ হওয়ার পর মাঝে মাঝে সত্যজিতের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন শাবানা। একদিন তাকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে বসেন সত্যজিৎ। তিনিও দাওয়াত লুফে নেন। সেদিনের সেই চায়ের দাওয়াত সম্পর্কে শাবানা লিখেছেন, “একবার চায়ের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ঘরের সবখানে বই—তাকের উপর, ডেস্কের উপর এমনকি মেঝেতে। চা চক্রের অনুষ্ঠানে তিনি ‘লোপচু’ পান করেছিলেন। এটি একটি ট্রেতে আবরণ দিয়ে কেটলি ঢাকা ছিল। পাশে দুধ ও চিনি রাখা। যেমনটি আমার মা শওকত কাইফি বাসায় পরিবেশন করতেন।”

এরপর শাবানা অভিনীত ‘খান্ধার’ ও ‘পার’ সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। এ সম্পর্কে এই অভিনেত্রী লেখেন, “খান্ধার ও পার—সিনেমা দুটি দেখার পর যখন তিনি আমাকে ডাকলেন তখন আমি শিহরিত হয়েছিলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘খান্ধার’ ছবির গল্পটি অকল্পনীয়। কিন্তু চলচ্চিত্রে আমার উপস্থিতি তার ভালো লেগেছিল। আর ‘পার’ ছবিতে নাসিরউদ্দিন শাহ ও আমার অভিনয় বেশ পছন্দ করেছিলেন। রেলওয়ে স্টেশনে নাসিরের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি তার ভালো লেগেছিল। তিনি দৃশ্যটিকে খুব ভালো শট বলেছিলেন।”

Ray

‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবিতে অভিনয়ের পর শাবানা প্রায়ই সত্যজিৎ রায়ের কাছে আবারও অভিনয়ের বায়না ধরতেন। তার কথা শুনে সত্যজিৎ রায় শুধু হাসতেন আর বলতেন, “হিন্দি সিনেমা করলে তবেই সেটা সম্ভব।”

সত্যজিৎ রায়ের জীবদ্দশায় দ্বিতীয়বার তার ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয়নি শাবানার। এজন্য তিনি আজ এই সময়ে এসেও আফসোস করেন। 

আরও পড়ুন