• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ৯, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৯, ২০২১, ০৬:২৭ পিএম

‘নয়া দামান’ গানের রচয়িতা কে?

‘নয়া দামান’ গানের রচয়িতা কে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তুলেছে ‘আইলো রে নয়া দামান’ গানটি। সিলেট অঞ্চলের এই গানটি সিলেটেরই দুই শিল্পী মুজা ও তসিবা বেগমের কণ্ঠে ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। একবার হলেও মানুষ গানটি শুনছেন কিংবা নিজে গুনগুন করে গাইবার চেষ্টা করছেন।

মূলত খুলনার এক তরুণী তার গায়ে হলুদে এই গানের সঙ্গে নেচেছিলেন। তারপর থেকে গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন চিকিৎসক এই গানের তালে তালে নাচেন। পরে নাচের ভিডিও ‘ভাইরাল’ হয় ফেসবুকে।

যার কণ্ঠে ভাইরাল ‍‍`নয়া দামান‍‍`
নয়া দামানের সবশেষ কাভারের গায়িকা তোশিবা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

তবে কোথাও গানের গীতিকার কিংবা সুরকারের নাম উল্লেখ ছিল না। ফলে গানের গীতিকার ও সুরকার কে, প্রথম কোথায় গাওয়া হয়েছিল—তা নিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

লোকসংস্কৃতি গবেষক ও নাট্যকার সাইমন জাকারিয়া বলেন, “এই গানের রচয়িতা সম্পর্কে প্রথম দাবি তুলেছিলেন পণ্ডিত রাম কানাই দাশ। সুমন কুমার দাশের নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পন্ডিত রাম কানাই দাশ তার মা দিব্যময়ী দাশের রচনা বলে উল্লেখ করেছেন। যেটা রাম কানাই দাশের ‘নন্দনভুবন ও অন্তরঙ্গ আলাপ’ গ্রন্থে মুদ্রিত আকারে রয়েছে। এর বাইরেও তিনি ভিডিওচিত্রে দাবি তুলেছিলেন, এটি তার মা দিব্যমায়ী দাশের লেখা।”

চলে গেলেন পণ্ডিত রামকানাই দাশ
পণ্ডিত রাম কানাই দাশ। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, “পণ্ডিত রাম কানাই দাশ তার সাক্ষাৎকারে এবং সংগীত উপস্থাপনের ভেতর দিয়ে তিনি এই গানের একটি অংশ গেয়েছেন। সেই অংশটি তসিবা ও মুজার অংশ নয়। অপি-অনিমার অংশ নয়। শাকুর মজিদের টেলিছবি লাভলি দেব, অনিমা ও তানির গাওয়া অংশ নয়। ২০১৩ সালে জফির সেতুর সম্পাদনায় সিলেটি বিয়ের গীত গ্রন্থে অন্য একটি অংশ মুদ্রিত হয়েছে। সেখানে রচয়িতা ও সুরকারে কোনো নাম নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হলো যে, এই গানটির অনেকগুলো রূপ আমরা যখন পাচ্ছি তখন সেটার মৌখিকভাবে প্রচলন হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।”

জাকারিয়া বলেন, “আমরা দেখেছি প্রচলিতভাবে এই গানের মোট পাঁচটি স্তবক আছে। রাম কানাই দাশের গানেও পাঁচটি স্তবক আমরা পাই। কিন্তু মজার বিষয় হলো, স্তবক পাঁচটি থাকলেও অন্য গানগুলোতে ভনিতা হিসেবে যে অংশটা রাম কানাই দাশ গেয়েছেন সেই অংশটুকু অন্য কোথাও নেই। সুতরাং আমরা একবাক্যে বলতে পারি না যে, এই গানের যতগুলো লৌকিক ভার্সন আছে সবগুলোরই রচয়িতা দিব্যময়ী দাশ। কারণ, লোকগান বিভিন্ন মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়। এটা এই গানের একটি বৈশিষ্ট্য। পরিবর্তিত হতে হতে তার প্রবাহমানতাকে অক্ষণ্ন রাখে। সিলেটের সব মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা মুখে মুখে অনেক গান বাঁধেন এবং সেগুলো তাদের ব্যক্তি পরিচয়ের উর্দ্ধে সামষ্টিক পরিচয়ে পরিচিত করে তোলেন। আমার মনে হয় ‘আইলো রে নয়া দামান’ তেমন একটি গান।”

আলাপন I আমি বিশুদ্ধ সাধনার ভেতর আছি - সাইমন জাকারিয়া
সাইমন জাকারিয়া, লোকসংস্কৃতি গবেষক ও নাট্যকার। ছবি: সংগৃহীত

এসময় তিনি এধরনের গান বেশি করে চর্চা ও প্রচার করার তাগিদ দেন। সেই সঙ্গে গাওয়ার ক্ষেত্রে গানের মূল ভাব, ভঙ্গি ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করার অনুরোধ জানান এই গবেষক।