রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনায় চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। গত ৮ জুন বৃহস্পতিবার ওই ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনার ভিত্তিতেই এই অভিযোগ করা হয়।
বুধবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ক্লাবটির সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল।
আলমগীর ইকবাল জানান, গত ৮ জুন বোট ক্লাবে যাওয়ার আগের দিন অল কমিউনিটি ক্লাবের ভাঙচুর করেন পরীমনি। এ সময় বেশ কিছু গ্লাস-প্লেট ও এসট্রে ভাঙেন।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পরীমণি ক্লাবের ১৫টি গ্লাস, ৯টি এসট্রে ভাঙেন এবং বেশ কিছু হাফ প্লেট ছুড়ে মারেন।”
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ক্লাব সভাপতি আলমগীর বলেন, “রাত প্রায় সোয়া ১টা থেকে দেড়টার ঘটনা। ক্লাবের একজন সদস্যের মাধ্যমে তারা (পরীমণি ও সঙ্গীরা) ক্লাবে প্রথম আসেন। আমরা তাদের কাউকে চিনতামও না, জানতামও না। পরে আমরা শুনেছি, উনাদের একজনের নাম পরীমণি। এসময় পরীমণির সঙ্গে একজন হাফ প্যান্ট পরা লোক ও একজন মহিলা ছিলেন।”
এ ঘটনায় আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, “যিনি অতিথি তিনি ক্লাবেও অতিথি, যেই সদস্যের মাধ্যমেই আসুক। ক্লাবের অতিথিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিধান নেই। শুধুমাত্র সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। সেটিই আমরা করছি। আমাদের অন্য কিছু করার এক্তিয়ার নেই।”
ক্লাবের সেই সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সেই ক্লাব সদস্যকে শোকজ করেছি। উনি লজ্জিত হয়ে সেটির উত্তর দিয়েছেন। একই সঙ্গে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে মুচলেকাও দিয়েছেন।”
জিডির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “না, আমরা কোনো জিডি করিনি। পরীমণির বিরুদ্ধে জিডি করতে চাইও না। কারণ আমরা মনে করেছি, জিডি করলে আমাদের ক্লাবের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে।”
আলমগীর ইকবাল আরও বলেন, “ক্লাবের পক্ষ থেকে ৯৯৯ ফোন করা হলে পুলিশ এসে দেখে তিনি (পরীমণি) ওগুলো (গ্লাস-প্লেট-এসট্রে) ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ জানতে চায়, আপনারা এখানে কেন এসেছেন? সেসময় পরীমণি পুলিশকে বলেন, আমাকে হেনস্থা করা হয়েছে। পুলিশ তখন বলে, সেরকম তো কিছু দেখছি না।”
যে সদস্যের মাধ্যমে পরীমণি এসেছিলেন তার ব্যাপারে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান আলমগীর ইকবাল।
এ ব্যাপারে পরীমণির সঙ্গে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বোট ক্লাবের ঘটনায় যখন পরীমণি পুলিশের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন, ঠিক তার পরের দিনেই তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সামনে আনা হয়।
বোট ক্লাবে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীমণির করা মামলায় প্রধান আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন দেশের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
পরীমণি বলেন, “এত দ্রুতই প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন ভরসা পাচ্ছি। নিশ্চিন্ত হলাম। বাঁচতে পারব। বাকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।”
এদিকে সকাল থেকে পরীমণির বনানীর বাসায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বনানী থানার একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে ৫ সদস্যের পুলিশ দল সোমবার সকাল থেকে নায়িকা পরীমনির বাসার সামনে অবস্থান করছে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া।
এর আগে রোববার (১৩ জুন) রাত ৮টায় ফেসবুকে নাম প্রকাশ না করে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন। এসময় তিনি নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই রাতেই পরীমনি নিজের বনানীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন গণমাধ্যমের সামনে।
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টায় অভিযুক্ত আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। তিনি জানান, পুলিশ তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে সাহস দিচ্ছেন। এখন তিনি চিন্তামুক্ত। মানসিকভাবে সুস্থ। এ সময় দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার করার সময়টিকে ‘ম্যাজিক্যাল’ বলে অভিহিত করেন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে বের হয়ে এসব কথা বলেন পরীমনি। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা এবং প্রধান অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে পরীমনিকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে ডিবি পুলিশ ডাকেনি, আমি নিজে থেকেই এখানে এসেছি। আমাকে কাজে ফিরতে হবে। পুলিশ বন্ধুসুলভ আচরণ করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এখন রিফ্রেশড। আমি কাজ করার শক্তি পেয়েছি। তারা (ডিবি কর্মকর্তারা) আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছেন। এত দ্রুত কাজগুলো হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। সবকিছু ম্যাজিকের মতো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশা করছি, সুষ্ঠু বিচার পাব।”
পরীমনি তার ফেসবুক পোস্টে পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদের নাম উল্লেখ করে জানান, তিনি তাকে সাহায্য করেননি। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে পরী বলেন, “আমি কিছুতেই আইজিপি বেনজীর আহমেদ স্যারের কাছে পৌঁছাতে পারছিলাম না। আমার আকুতি যেন তার কাছে পৌঁছায়, সে জন্য আমি তার নাম উল্লেখ করেছি। পরে তো দেখলেন, তার কানে ঘটনাটি পৌঁছানোর পর কত দ্রুত আসামিরা গ্রেপ্তার হলেন।”
৯ জুন উত্তরা বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির ইউ মাহমুদ ও ব্যবসায়ী অমি পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন। ১৩ জুন পরীমনি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি লেখেন। পরে সেদিন রাত ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেন। ১৪ জুন তিনি সাভার থানায় মামলা করলে পুলিশ অমি, নাসিরসহ তিন নারীকে গ্রেপ্তার করে।