• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২১, ১১:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৪, ২০২১, ০৭:৩০ এএম

না ফেরার দেশে ফকির আলমগীর 

না ফেরার দেশে ফকির আলমগীর 

‘ওরে সখিনা গেছস কিনা ভুইল্যা আমারে’ সহ অসংখ্য গানের শিল্পী, একুশে পদক গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর আর নেই। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে ফকির আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন।

তার ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব জানান, শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ফকির আলমগীরের হার্ট অ্যাটাক হয়। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। 

গত ১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের করোনাভাইরাস রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসার পর পরই ১৫ জুলাই রাতে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৮ জুলাই তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। পরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ফকির আলমগীর লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। টানা ৮ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেছেন তিনি।

এর আগে ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর জানিয়েছিলেন, তার স্বামী (ফকির আলমগীর) করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকাই নিয়েছেন। কিন্তু গত ১৪ জুলাইয়ের কয়েক দিন আগে তার উপসর্গ দেখা দেয়, পরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু গত (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান,  শনিবার বেলা ১১টায় ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমাগার থেকে খিলগাঁওয়ের পল্লীমা সংসদে নিয়ে আসা হবে ফকির আলমগীরের মরদেহ। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। খিলগাঁওয়ের মাটির মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে খিলগাঁও কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন ফকির আলমগীর।

তিনি বলেন, ‌‘আমরা চেষ্টা করছি কাল (শনিবার) দুপুর ১২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমিতে তার মরদেহ নিয়ে আসতে। সেখানে শিল্পী, কলাকুশলীরা তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে চান।’

ফকির আলমগীর একজন কণ্ঠযোদ্ধা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। যদিও ষাটের দশক থেকে গণসংগীত গেয়ে আসছেন তিনি। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অসামান্য ভূমিকা রাখেন তিনি। পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী।

নব্বইয়ের দশকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধে গড়ে উঠা সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেও তিনি যুক্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি এই সংগঠনের সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

স্বাধীনতার পর ফকির আলমগীর পপ ঘরানার গানে যুক্ত হন। পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে বাংলার লোকজ সুরের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি বহু গান করেছেন। সংগীতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। 

ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি  ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। 

জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

ফকির আলমগীর ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সামিল হন তার গান দিয়ে। 

মুক্তিযুদ্ধের পর যে কজন শিল্পী বাংলাদেশে পপ ঘরানার গানের চর্চা শুরু করেছিলেন, ফকির আলমগীর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে ফকির আলমগীরের গাওয়া ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইল্যা আমারে’ গানটি এখনও লোকমুখে ফিরে।  

‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে তার।

জাগরণ/আরআইএস/এমএ