• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০১৯, ০৫:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’

প্রভাব পড়বে ১০ কোটি জনজীবনে

প্রভাব পড়বে ১০ কোটি জনজীবনে

উপকূলের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী। ফলে উপকূলের আকাশে গুমট অবস্থা বিরাজ করছে। মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যা নাগাদ অতি প্রবল এই ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশে দেখা দিতে পারে।

নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, উপকূলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচলে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সাগর উত্তাল থাকায় এরমধ্যে সাগরে অবস্থান করা সকল মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাগুলো মৎস্য বন্দরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। সুনামি হোক কিংবা সাইক্লোন। গত ৪৩ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ সাইক্লোন আছড়ে পড়তে চলেছে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। আগামীকালই শুক্রবারই স্থলভাগে ঢুকছে ‘‌ফণী’। ‌আপাতত উপকূল থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, যেভাবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এগিয়ে আসছে তাতে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রভাব পড়বে ১০ কোটি মানুষের জনজীবনে। ইতিমধ্যে দেশটির তিন রাজ্যেই জারি করা হয়েছে উচ্চ সতর্কবার্তা।

আপাতত আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৭৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। ‌প্রথমে সাধারণ সাইক্লোন হিসেবে ফণীর জন্ম হলেও, ধীরে ধীরে তেজ বাড়িয়ে এখন সে পরিণত হয়েছে সুপার সাইক্লোনে। ফলে এর একটি ঝাপটায় তছনছ হয়ে যেতে পারে উপকূলবর্তী এলাকা।

সরকারি নির্দেশে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। এর মধ্যে রয়েছে পুরী, জগত্‍সিংপুর, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক, বালাসোর, ময়ূরভঞ্জ, গজপতি, গঞ্জাম. খুরদা, কটক এবং জাজপুর। সমুদ্র লাগোয়া এলাকাগুলি খালি করে দিতে বলা হয়েছে।

পর্যটক ও স্থানীয় মিলিয়ে সরানো হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষকে। ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যের জন্য জাহাজ ও হেলিকপ্টার নিয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে নৌসেনা, বায়ুসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। ওড়িশার জায়গায় জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী-সহ উদ্ধারকারী দলগুলিকে। ইতিমধ্যে ওড়িশা উপকূলে রয়েছে নৌ-সেনার দু’‌টি জাহাজ।

সরকারি সূত্রে খবর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২৮টি দল ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে ওড়িশায়, ১২টি অন্ধ্রপ্রদেশে, ৬টি বাংলায়। অতিরিক্ত ৩০টি দল মজুত রাখা হয়েছে যে কোনও আপত্‍কালীন অবস্থার জন্য। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্‍সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে ১৫মে পর্যন্ত। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ওড়িশা থেকে ফণী মুখ ঘুরিয়ে যখন এ রাজ্যের দিকে আসবে, তখন তার দাপট কমলেও গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি।

এদিকে ভারতের ওড়িশা উপকূল হয়ে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। ইতোমধ্যে পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর ও চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আজ সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।

একইসঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য অধিদফতরের সব শাখা অব্যাহতভাবে খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।

আজ উপমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান গতিপথে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা হয়ে রংপুর-দিনাজপুরের দিতে যেতে পারে। আর দিক পরিবর্তন করলে তা খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।

এরই মধ্যে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনে’ পরিণত হওয়া ফণীর সম্ভাব্য ছুটি মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান পরিবেশ,বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। 

তিনি বলেন, তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে সবাইকে সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

টিএফ