• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০১৯, ০৮:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩, ২০১৯, ০২:০৪ এএম

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানবে ফণী

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানবে ফণী
সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নিয়ে বৈঠকে করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান- ছবি: জাগরণ

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শুক্রবার (০৩ মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ। এখনও খুলনার মোংলা বন্দর থেকে সাড়ে ৮শ’ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ফনী। ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান এই আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন, মোংলা-পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর, চট্টগ্রামে ৮ নম্বর এবং কক্সবাজারকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (০২ মে) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানান কমিটির শীর্ষ নেতারা।  

ঘূর্ণিঝড় ফণী’র বিষয়ে মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার সময় এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। 

বৈঠকে কমিটির অন্যতম সদস্য প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বৈঠকে কমিটির সভাপতি ডা. এনামুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে  আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনও মহাবিপদ সংকেত দেয়ার সময় হয়নি। আগামীকাল শুক্রবারের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। তিনি জানান, আগামীকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ে যেসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে এসব এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের ঘর-বাড়িরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া বৈঠকে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে নারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়া এসব এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাতিল করা হয় সকল সরকারি আধাসরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি। প্রস্তুতি নিয়ে তাদের স্ব স্ব অবস্থানে থাকতে হবে।

বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ফণীর বিষয়ে সংবাদ সংস্থা বাসসের  খবেরে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ‘ফণী’ আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৭.২ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯২৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া বিশেষ বুলেটিনে এসব সতর্ক বার্তা দেয়া হয়। 

খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার (০৩ মে) সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে। ‘ফণী’ আরও ঘণীভূত ও উত্তর বা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছতে পারে।

আবহাওয়ার বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের (কি. মি.) মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। 
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা,পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০ থেকে ১১০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলাহয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এমএএম/বিএস