• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ৫, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৫, ২০১৯, ০৪:১৫ পিএম

জয়পুরহাটে ইউক্যালিপটাস নিষিদ্ধের দাবি

জয়পুরহাটে ইউক্যালিপটাস নিষিদ্ধের দাবি

 

জয়পুরহাটে পরিবেশ বিধ্বংসী ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন ও বনায়ন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পরিবেশ ও মানুষের বন্ধু গাছ। মানুষ ও প্রকৃতি থাকে অতি কাছাকাছি। গাছ মানুষকে বাঁচার জন্য অক্সিজেন, ছায়া, ফল দেয়। কিন্তু সেই গাছই যদি প্রকৃতির জন্য, মানুষের জন্য আগ্রাসী-প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে তবে তা আতঙ্কের বিষয়। এমনই এক প্রাণঘাতী গাছ ইউক্যালিপটাস। সবচেয়ে বেশি ইউক্যালিপটাস চোখে পড়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে। 


এক দশক আগে সরকার ইউক্যালিপটাস রোপন করা নিষিদ্ধ করলেও এখনো জয়পুরহাট, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নীলফামারী, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম দিনাজপুরসহ বহু জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও রোপণ করে চলেছে নার্সারি মালিকরা। চাহিদা, দাম ও জ্বালানি হিসেবে যতই ভাল হোক না কেন সর্বপোরি মানুষ ও পরিবেশের ভারসাম্যের কথা চিন্তা করে সরকার এই বৃক্ষকে ২০০৮ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ এখনও দেশব্যাপী এ গাছের চারা নিরবে, নিভৃতে উৎপাদন, বিপণন এবং বনায়ন হচ্ছে। 

প্রথম দিকে মহাসড়ক, পল্লী সড়কসহ পতিত জমিতে লাগানো হতো এ গাছ। এসব ছাড়িয়ে এখন ফসলি জমির আইল সহ বিভিন্ন নিচু শ্রেণির সমতল ভূমি দখল করে নিয়েছে এ গাছ। সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাট জেলার বনবিভাগ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন, বনায়ন বিতরণ ও বিক্রি বন্ধ করে দেয় গত ২০১৪ সালের শেষের দিকে। কিন্তু তাতেও ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ উৎপাদন বন্ধ হয়নি। বরং জেলা থেকে উপজেলা ছাড়িয়ে এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিরবে উৎপাদন, বিক্রি ও বনায়ন করে চলেছে ইউক্যালিপটাস চারা গাছ বেসরকারি নার্সারি মালিকরা। অথচ ২০০৮ সালে সরকার পরিবেশের ক্ষতির কারণ দেখিয়ে বনায়নের জন্য নিষিদ্ধ করে এই গাছটি। 

উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জেলাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন-বনায়নের সঠিক তথ্য কোন অধিদফতরে নেই। 

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলার বন বিভাগ কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, ইউক্যালিপটাস চারা উৎপাদন বিক্রি ও বানায়ন করা যাবেনা এমন কোন সু-নির্দিষ্ট আইন ফরেস্ট ম্যানুয়ালে নেই। এমনকি ফরেস্ট গবেষণার উচ্চ পর্যায় থেকেও এ ধরনের গবেষণামূলক কোন তথ্য তাদেরকে দেয়া হয়নি। তবে সরকার যেহেতু নিষিদ্ধ করেছে সেক্ষেত্রে এই চারা উৎপাদন, বিক্রি ও বনায়নের ক্ষেত্রে আমরা সবাইকে নিরুৎসাহী করছি। 

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. সুনীল কুমার কুণ্ডু এক তথ্যে বলেছিলেন, অতিরিক্ত পানি শোষণের কারণে ইউক্যালিপটাসকে পরিবেশের বিরূপ গাছ বলা হয়। তবে দ্রুত বর্ধনশীল, বেশি টাকা হাতে আসে, জ্বালানি হিসেবে এই কাঠে কেরোসিন জাতীয় জ্বালানি শক্তিতে অনেক বেশি, এই গাছ থেকে বাড়ি-ঘর নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত খুঁটি-থাম্বা, টিনের ছাউনিতে এ গাছ থেকে রোয়া বাটাম তৈরি হয়, যাতে ঘুনও ধরে না বলে এ গাছ রোপণে আগ্রহী মানুষ। 

জয়পুরহাট জেলার বেসরকারি নার্সারি মালিক রজব আলী, রাজশাহী জেলার ধীরেন্দ্র নাথ, মহাস্থানের ইয়াসিন মন্ডলসহ দেশের বহু বেসরকারি নার্সারি মালিকগণ বলেন, দ্রুত বর্ধনশীল চাহিদা তুলনায় দামও বেশি তাছাড়া বাড়ি-ঘর ছাউনির কাজে এর চাহিদা অনেক বেশি। তাই এটা চাষ করে থাকি। সরকার নিষিদ্ধ করলে আমরা এ চারা উৎপাদন, বিক্রয় ও রোপণ বন্ধ করব। 

উত্তরাঞ্চলসহ দেশব্যাপী মহাসড়ক জুড়ে ইউক্যালিপটাস গাছের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। 

উদ্ভিদবিদরা জানান, আশির দশকে দেশে এ গাছের প্রসার ঘটে। এটি মূলত মরু অঞ্চলের গাছ। গাছটি মাটি থেকে বেশি পানি ও খনিজ খাবার শোষণ করে। 

জয়পুরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের প্রভাষক তৌফিকুর রহমান সরকার বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের জন্য দায়ি করা হয় ইউক্যালিপটাসকে। চাহিদা দাম ও জ্বালানী হিসেবে যতই ভাল হোক না কেন সর্বপোরি মানুষ ও পরিবেশের ভারসাম্যের কথা চিন্তা করে সরকার এই বৃক্ষকে ২০০৮ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে বাস্তবে দেশব্যাপী ক্ষতিকর এ গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন ও বনায়ন করে চলেছে বেসরকারি নার্সারি মালিকরা। এ গাছের অন্যতম ক্ষতিকারক দিক হলো ১ হাজার মানুষ যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, তার থেকে অনেক বেশি একটি ইউক্যালিপটাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। এ গাছের চারা উৎপাদনসহ সবধরনের ব্যবহার মূলোৎপাটন করবে সরকার এমনটাই আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সচেতন মহল।

১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ইং শেষ হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। এখানে ১৯৬টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধান গণ অংশ নেন। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের এক তথ্যে জানা যায়। বর্তমানে যে হারে কার্বণ ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে তাতে চলতি শতকের শেষ নাগাত বৈশ্বিক শতকের শেষ নাগাত তাপমাত্রা ৩.২ ডিগ্রি সে.সি. বৃদ্ধি পাবে। 

সেই দিক থেকে বিবেচনা করে একজন উদ্ভিদ বিভাগের শিক্ষক বলেছেন, এক হাজার মানুষ প্রতিদিন যে পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ বা ত্যাগ করেন। সে ক্ষেত্রে একটি মাত্র ইউক্যালিপটাস গাছ তার চেয়ে অনেক বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ বা ত্যাগ করেন। সুতরাং বিশ্ব জলুবায়ুর কথায় চিন্তা করে ইউক্যালিপটাস বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন অনেকেই।

টিএফ