• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৯, ০৭:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম

মাত্রাতিরিক্ত  সার ও কীটনাশক ব্যবহার

হারিয়ে যাচ্ছে পশু পাখি কীটপতঙ্গ

হারিয়ে যাচ্ছে পশু পাখি কীটপতঙ্গ

  ফসলের জমিতে দেশীয় ফসল চাষের রীতি আগের চেয়ে কমে এসেছে। সবাই অধিক মাত্রায় ফসলের জন্য হাইব্রিড চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু হাইব্রিডে ফসল চাষের বিষয়টি আলাদা। হাইব্রিড চাষে দেখা যায় একবার- দুবার  ফসলের ভালো ফলন হয়। বাকি সময় ফসল ফলাতে সার দিতে হয় প্রচুর পরিমানে। কারন হাইব্রিড চাষে জমির উর্বরতা কমে যায় । ফসলি জমিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার দেয়ার কিছুদিন পরে ফসলের ক্ষেতে পোকার আক্রমন দেখা দেয়। সে জন্য ব্যবহার করতে হয় কীটনাশক। অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফসলের মাঠে মাঝে মধ্যেই যে বিপর্যয় দেখা দেয়, তাতে যে লোকসান হয়,সে লোকসান  কাটিয়ে উঠতে কৃষক  অধিক ফলনের আশায় ঝুঁকে পড়ে রাসায়নিক সারের দিকে।  বৃষ্টি -ঝড়-প্লাবনে এসব সার ও কীটনাশক খালে বিলে নালায় ছড়িয়ে পড়ে। সার ও কীটনাশক মিশ্রিত পানি খেয়ে মারা যায় আমাদের  আশ-পাশের পশু-পাখি-জীব-জন্তু ,কীটপতঙ্গ। 

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রাকৃতিক জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এবং ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে কৃষিখাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
দক্ষিনাঞ্চলে এই সংকট  প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারন দেশের অন্য যে কোনো বিভাগের তুলনায়  দক্ষিনাঞ্চলের পানি অধিক লবণাক্ত। তারপর সিডর আইলার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষত এখনও রয়ে গেছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ফলাতে প্রানান্তকর চেষ্টা করে চলেছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা গত বছরের তুলনায়ও বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। ফলে কৃষিখাতে এ অঞ্চলে আপাতদৃষ্টিতে কৃষি বিপ্লব ঘটলেও ভবিষ্যতে চরম কৃষি বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের দক্ষিনাঞ্চল আমাদের দেশের সবজির চাহিদার অধিকাংশ পূরণ করে। এ অঞ্চলে সবজির চাষ বেশি হয়। এই সবজি দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন কি বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের কৃষকরা অধিক উৎপাদনের আশায় ফসলি জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করে।  হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে ভালো ফসল পেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অধিক উৎপাদনক্ষম এই সকল শস্য শিশুর মতো। প্রকৃতির রুক্ষতা তারা সইতে পারে না। যে কারণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে, কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করা হয়। ফলে বাড়তে থাকে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। 

কৃষিবিদ রুবায়েত আরা বলেন, জমিতে অব্যাহতভাবে সার কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আগের মতো পাখিরা আর কিচিরমিচির করে না। শস্যদানা খাওয়ার লোভে পাখিরা কীটনাশক মিশ্রিত শস্য দানা খেয়ে বিষক্রিয়ার মারা যাচ্ছে। এভাবে আমাদেরে চেনাজানা অনেক প্রজাতির পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। বিলুপ্তি ঘটেছে অনেক জীবের। শুধুমাত্র ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে।  প্রাকৃতিক লাঙ্গল বলে খ্যাত কেচো এখন আর দেখা যায় না। এক সময়ে বিল খালে জলাশয়ে শামুকের অবাধ বিচরণ ছিল। শামুক প্রায় হারিয়ে গেছে। মিষ্টি পানির ছোট প্রজাতির অনেক মাছই এখন দেখা যায় না। পশু,পাখি ,প্রানী, মাছের অনেক প্রজাতি এখন আর চোখে পড়ে না। এগুলোর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির উপর। যে জন্য দুর্যোগ দেখা দেয় বার বার তবুও সার কীটনাশকের ব্যবহার কমছে না।

 

কৃষি বিশেষজ্ঞ রুবায়েত আরা বলেন, মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে কীটপতঙ্গ ধ্বংসের জন্য আমরা ফসলের ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার করি। কিন্তু সব কীটপতঙ্গ ক্ষতিকর নয়। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন প্রকারের কীটপতঙ্গ ধংস হচ্ছে।

হাইব্রিড  ফসলের উৎপত্তি ফসলের উৎপাদন বাড়াতে। কিন্ত তাতে জীব বৈচিত্র্য হারোতে বসেছে।  রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহার করেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব । যেটা প্রকৃতির জন্য ,জীবনের জন্য, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একান্ত জরুরি। 

/ডিজি