বাপা’র সহ-সভাপতি লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, সরকার সব কিছুই জানেন কারা পরিবেশ ও বায়ু দূষণ করছে। কিন্তু সব জানার পরেও সরকার কেন দেশের বায়ু দূষণ বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ দেশের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। পরিবেশ দূষণ নিয়ে সরকারে নির্লিপ্ততার বিরুদ্ধে জনগণকে কথা বলতে হবে।
‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তন (নতুন ভবন) আগারগাঁও, ঢাকায় “বায়ু দূষণ ও করণীয়” শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বাংলাদেশ, বারসিক, নাগরিক উদ্যোগ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, সিডিপি, গ্রীনভয়েস, চাঁদের কণা, ইকো সোসাইটি, পরিবেশ রক্ষা এখনই, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, এলামনাই এসোসিয়েশন অব মেরিন সায়েন্স (সিইউ) ও মুক্তি ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারে সৈয়দ আবুল মকসুদ সভাপতিত্ব করেন। বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাপা’র সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কেএম রফিক আহাম্মদ, বাপা সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী আমিনুর রসুল বাবুল প্রমুখ ।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমরা দেশে ভোটের মাধ্যমে জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করি আমাদের সুখ দুঃখ দেখার ও বোঝার জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন জন প্রতিনিধি কোন এলাকায় সেখানকার জনগণের সঙ্গে পরিবেশের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে বলে আমার মনে হয় না।
মকসুদ আরো বলেন, বর্তমানে বায়ু দূষণের ফলে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে সুস্থ্য বায়ু নিয়ে বেঁচে থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং এ অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আগামী ৫০ বছর পরে ঢাকা শহরে মানুষ বাঁচবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। তাই আমি সরকারের কাছে বায়ুদূষণ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।
অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিবেশের অবস্থায় মানুষের বেঁচে থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা সৃষ্টির মূলে রয়েছে কিছু নির্লিপ্ত মানুষ যারা আজ দেশের মানুষের নির্মল বায়ু গ্রহণ করে বাঁচার অধিকারটুকুও ছিনিয়ে নিয়েছে। দেশের পরিবেশ রক্ষা করার মূল দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। সরকার সে দায়িত্ব পালন করছে না, প্রশাসন ও কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের কারণে আজ পরিবেশের দুরাবস্থা।
ড. এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। ইট ভাটার জন্য উন্নত ও পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। তবে আমরা এ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে কাজ করছি। আমরা নন ফায়ার ব্রিক্স এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি ব্লক ইট তৈরির জন্য। আমরা পরিবেশ দূষণের কারণগুলোকে চিহ্নিত করেছি এবং আইনগুলোকে হালনাগাদ করেছি। তিনি বায়ু দূষণসহ পরিবেশ দূষণ বন্ধে দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এক সাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আরো শক্তিশালী হওয়া দরকার। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারাদেশে যারা এ সমস্ত নোংরা কাজে জড়িত তারা অনেক শক্তিশালী। তাদের মোকাবিলা করার মত সক্ষমতা এখনও পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই। তাই পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে। সেমিনারে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার সম্পাদিত ‘সমসাময়িক পরিবেশ ভাবনা’ নামক পরিবেশ বিষয়ক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
টিএস/টিএফ