• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম

প্রভাবশালীদের দখলে মরছে ডাকাতিয়া নদী

প্রভাবশালীদের দখলে মরছে ডাকাতিয়া নদী

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় অবস্থিত ডাকাতিয়া নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এতে করে নদীটি এখন মৃত প্রায়। অবৈধভাবে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। নদী দখলের কারণে স্থানীয় লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নদী দখল মুক্ত করতে সম্প্রতি ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের শহর হতে হাজীমারা হয়ে নদীটি মেঘনায় মিশেছে। এক সময় রায়পুর বাজারের অতিনিকটে লঞ্চ ঘাট ছিল। যেখানে লঞ্চ ও নৌকার মাধ্যমে মালামাল আনা নেওয়া হতো। এই নদী দিয়ে ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ভোলা, বরিশাল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী ও মালামাল বহন করা হতো। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রায়পুর পৌরসভা এলাকা, উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চর বংশী, দক্ষিণ চরবংশী এ নদীটির উপরে আড়াআড়ি করে বাঁশ ও জাল দিয়ে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নদীর তীরে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও ময়লা আর্বজনা ফেলার কারণে নদীটি বর্তমানে তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। রায়পুর মহিলা কলেজের সামনে নদী ভরাট করে একাধিক বহুতল ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। রায়পুর শহর থেকে ষোলা খালি ব্রিজ পর্যন্ত নদীটির উপরে অবৈধ দখলের এমন চিত্র দেখা গেছে। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রায়পুর পৌর মেয়র ও তার লোকজন রায়পুর মহিলা কলেজ হতে জমাদ্দার বাড়ির সামনের পুল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছে। একইভাবে জমাদ্দার বাড়ির পুলের পশ্চিম পাশে বাঁধ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেনসহ আরও ৪০ জন সদস্য মাছ চাষ করছেন। দেখা গেছে, মাত্র ৪ কিলোমিটার নদী এলাকায় প্রায় ২০-২৫টি অবৈধ বাঁধ রয়েছে। 

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, নদী দখলের কারণে নদীটি প্রায় মৃত। এখানকার লক্ষাধিক মানুষ নদী ব্যবহার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। 

ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে সম্প্রতি রায়পুর শহরে ডাকাতিয়া নদী দখল মুক্ত করে রায়পুর থেকে হাজীমারা পর্যন্ত নৌপথ চালুর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। ঐ কর্মসূচিতে ‘দখল দূষণ মুক্ত প্রবাহমান ডাকাতিয়া নদী, বাঁচবে প্রাণ বাঁচবে প্রকৃতি’ এই শ্লোগান ছিলো মানুষের মুখে মুখে। তারা দখল উচ্ছেদ করে নদীটির স্বাভাবিক গতি ফিরে এনে পরিবেশ রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

রায়পুর উপজেলা কৃষকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, পৌর মেয়রসহ অন্যরা প্রায় ৩০টি বাঁধ দিয়ে নদীতে মাছ চাষ করছে। 

এ বিষয়ে দখলদার কামাল হোসেন কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। 

পৌরসভার মেয়র মো. ইসমাইল হোসেন খোকন জানান, ডাকাতিয়া নদীর এই অংশটি মরা নদী, আমার ব্যাপারে যে অভিযোগ তা সঠিক নয়। পৌরসভার ভিতরে যে অংশটুকু রয়েছে তা আট বছর আগে ইজারা এনেছেন তিনি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা জানান, ডাকাতিয়া নদীর কোন অংশই কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। যারা মাছ চাষ করছে তারা অবৈধ কাজ করছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিল্পী রাণী রায় বলেন, আমরা নদীটি অবৈধ দখল মুক্ত করতে উদ্যোগ নিচ্ছি। 

কেএসটি