• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৯, ১১:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৯, ২০১৯, ১১:৪৯ এএম

দূষণ-দখলে খিরু নদী এখন বিপর্যস্ত 

দূষণ-দখলে খিরু নদী এখন বিপর্যস্ত 
বিপর্যস্ত খিরু নদী- ছবি : জাগরণ 

যৌবনে খিরু নদী ছিল ভালুকার আশীর্বাদ। হরেক রকমের মাছ মিলতো। খিরু‘র বুক চিরে চলাচল করতো লঞ্চ ও পালতুলা নৌকা। খিরু’র পানি ছিল স্বচ্ছ টলমলে। সেচ নির্ভর ছিল এই পানি। নদীর দুপাশের মানুষ গোসল করতো খিরুতে। অবৈধ দখল ও শিল্প কারখানার বর্জ্য সব কেড়ে নিয়েছে। এখন সেই খিরুর বুকজুড়ে শুধুই হাহাকার আর কান্না।  নদীর পানির দিকে তাকানোর জো নেই। পানি এখন দুর্গন্ধযুক্ত, ধারণ করেছে কালচে বিবর্ণ রঙ। খিরু এখন হয়ে উঠেছে ভয়াবহ বিষাক্ত। নদী যেন স্মৃতিময় দীর্ঘশ্বাস। দূষণ-দখলে-বর্জ্যে খিরু হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত। 

খিরুর শাখা প্রশাখার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দেখলে মনে হবে যেন কোনো এঁদো ডোবা। এক সময়ের মিষ্টিপানির নদী বর্তমান অবস্থা এমনই। অবৈধ দখল ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলায় তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। এলাকার কৃষক ‍নিরুপায় হয়ে এ বিষাক্ত পানি দিয়েই চালাচ্ছে চাষাবাদ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীতে মাছ তো দূরের কথা ব্যাঙের দেখা মিলাও দুষ্কর। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীর দিকে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। জবরদখল প্রক্রিয়া থামাতে মাঝেমধ্যে সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় থমকে দাঁড়ায়। প্রভাবশালী দখলবাজরা থাকে অপ্রতিরোধ্য। 
নদীর পাশ দিয়ে গেলেই রাসায়নিক পদার্থের তীব্র কটু গন্ধ নাকে লাগবে যে কারও। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়তে পড়তে নদীর পানি একদম পচে গেছে। বহুদূর পর্যন্ত পানির এ দুর্গন্ধ গিয়ে নাকে লাগে। 

বয়ডা গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নদীপাড়ের বিশাল এলাকার দু-তিন ফসলি জমি এক ফসলি হয়ে গেছে। শুধু বোরো ধান ছাড়া এখানে অন্য কিছু হয় না। কারণ অন্য সময়ের ফসল এ পচা পানি সহ্য করতে পারে না। এ কারণে খিরু নদীর দুই তীরের মানুষের আয় কমে গেছে। তারা আরও জানান, জমিতে বাধ্য হয়েই সেচে নদীর পানি ব্যবহার করতে হয়। তারা এখন জমিতে চাষ করে যে পরিমাণ ফসল পান, কিন্তু যদি পানি ভালো থাকত, তাহলে এখানে দুই গুণ বেশি ফসল পেতেন। পঁচা পানির কারণে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। এ পানি জমিতে বেশি পড়লে চারা গাছ পঁচে যায়। আর পঁচা পানিতে ক্ষেতে কাজ করলে হাত-পা চুলকায়। 

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘পচা পানির কারণে শুষ্ক মৌসুমে খিরু নদীর দু'তীরের ফসল উৎপাদন কম হয়। পানি ভালো থাকলে উৎপাদন ও ফসলের গুণগত মান আরও বাড়ত। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)  রোমেন শর্মা জানান, অবৈধভাবে নদীর দু‘পাশের জমি দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশনা পেয়েছি। অচিরেই আমরা অভিযানে মানবো’।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল জানান, ‘নদীর সীমানা চিহ্নিতের কাজ চলছে, যে কোন সময় আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবো। আর যে সকল শিল্প কারখানা নদীতে বর্জ্যে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে’। 

কেএসটি