• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০১৯, ০৮:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৩, ২০১৯, ০৮:৩১ পিএম

৭ জেলায় বজ্রপাতে নিহত ১৫

৭ জেলায় বজ্রপাতে নিহত ১৫
চুয়াডাঙ্গায় বজ্রপাতে নিহতদের স্বজনের আহাজারি - ছবি : জাগরণ

বজ্রপাতে সারা দেশের ৭ জেলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৩ জুলাই) দিনব্যাপী এই বজ্রপাত হয়। এর মধ্যে পাবনার বেড়ায় ৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৩ জন, ময়মনসিংহে ৩ জন, সুনামগঞ্জে দুজন এবং নেত্রকোনা, মাগুরা ও রাজশাহীতে ১ জন করে নিহত হয়েছেন।

দৈনিক জাগরণের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :

পাবনায় একই পরিবারের ৩ জনসহ নিহত ৪
পাবনা সংবাদদাতা জানান, পাবনার বেড়া উপজেলায় বজ্রপাতে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৩ জুলাই) বেলা তিনটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামের মুতালেব সরদার (৫৫), তার দুই ছেলে ফরিদ সরদার (২২) ও শরিফ সরদার (১৮) এবং একই গ্রামের রহম আলী (৫৫)। বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার সময় তারা পাচুরিয়া স্কুলমাঠের পাশে ডোবায় পাট জাগ দিচ্ছিলেন। এ সময় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে তাদের ওপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চুয়াডাঙ্গায় ৩ দিনমজুরের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা
জানান, চুয়াডাঙ্গায় বজ্রপাতে তিন দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও চারজন। শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খোরদ গ্রামে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আলামিন (৩০), গোলাম রসুলের ছেলে হুদা (৩২) ও একই গ্রামের বরকত আলীর ছেলে হামিদুল ইসলাম (৩০)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার খোরদ গ্রামে ৭-৮ জন দিনমজুর শনিবার সকাল থেকেই ট্রাকে কলাভর্তির কাজ করছিলেন। দুপুরের পর ওই এলাকায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। প্রত্যক্ষদর্শী লিয়াকত আলী নামের এক কৃষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ওই এলাকায় বৃষ্টির সাথে সাথে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি এড়াতে কলাভর্তিরত দিনমজুররা ট্রাকের কাছেই অবস্থান নেন। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে গুরুতর জখম হন ৭ দিনমজুর। তাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সোনিয়া আহম্মেদ তাদের তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। একই ঘটনায় আহত চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভারী বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির মধ্যে অসতর্কভাবে কাজ করার সময় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ময়মনসিংহে ৩ জনের মৃত্যু
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা
জানান, ময়মনসিংহে বজ্রপাতে কৃষক, জেলেসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়ায় শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ফুলপুরের বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে সোহাগ মিয়া (২৫), পয়ারী গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে জামাল উদ্দিন (৪০) ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেইট গ্রামের মলিন বর্মণের ছেলে চৈইত বর্মণ (২২)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের হাঁস খামারি সোহাগ মিয়া শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে হাঁস চড়ানোর সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের পয়ারী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন দুপুরে বাড়ির পাশে জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরির সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যদিকে শনিবার দুপুরে উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বড়বিলা বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে চৈইত বর্মণ নামের এক  জেলে নিহত হন। নিহতের পরিবার জানায়, দুপুরে বড়বিলা বিলে বুচনা (বাইর) দিয়ে মাছ ধরতে যান দুই ভাই মনু বর্মণ ও চৈইত  বর্মণ। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে ছোট ভাই চৈইত বর্মণ পানিতে ঢলে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বড় ভাইয়ের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে বিল থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরাত হোসেন গাজী ও ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
 

সুনামগঞ্জে বাবা-ছেলের মৃত্যু
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বৌলাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামে বৌলাই নদীতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মৃত মিরাজ আলীর ছেলে হারিদুল (৪৫) ও হারিদুলের ছেলে তারা মিয়া (১০)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে ডিঙি নৌকা নিয়ে হারিদুল তার ১০ বছরের ছেলে তারা মিয়াসহ নদীতে মাছ ধরতে যান। মাছ ধরার একপর্যায়ে বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজনেরই মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা পানি থেকে বাবা ও ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য শাহাব উদ্দিন বলেন, বাবা-ছেলে মিলে গ্রামের পাশের বৌলাই নদীতে মাছ ধরতে যান। এ সময় বজ্রপাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। তাহিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ রব্বানী বলেন, সকালের দিকে বাবা-ছেলে নদীতে মাছ ধরতে যান। পরে বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।

নেত্রকোনায় যুবক নিহত
নেত্রকোনা সংবাদদাতা
জানান, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় গ্রামের পাশে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এনামুল হক (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এনামুল ওই গ্রামের  মোহাম্মদ আলীর ছেলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ওই যুবক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হন এনামুল। পরে তাকে কলমাকান্দা উপজেলা কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এনামুলকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে বজ্রপাতে এনামুলের সাথে থাকা গরুটির কোনো ক্ষতি হয়নি বলেও জানান তিনি।

মাগুরায় নিহত ১
মাগুরা সংবাদদাতা
জানান, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ধোয়াইল গ্রামে শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে মাজেদ মণ্ডল (৪৫) নামের এক ব্যক্তি বজ্র্রপাতে নিহত হয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের দরবেশ মণ্ডলের ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে মাজেদ মণ্ডল বাড়ির পাশে পাটক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হঠাৎ আঘাত হানলে তিনি গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

রাজশাহীতে কৃষকের মৃত্যু
রাজশাহী সংবাদদাতা
জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বজ্রপাতে দুরুল হুদা (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আজম বলেন, শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে মাঠে ধান লাগানোর কাজে যান দুরুল। বিকেলে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান।

এনআই

আরও পড়ুন