• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০১৯, ১০:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৯, ২০১৯, ১০:২৫ পিএম

দুবলার চর, সুন্দরবন ও পশ্চিমবঙ্গে হানা

মধ্যরাতে আঘাত হানছে বুলবুল

মধ্যরাতে আঘাত হানছে বুলবুল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যা-অন্ধ্র প্রদেশ ঘেঁষে সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দিকে বাঁক নিয়েছে অতি ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সেই সঙ্গে তার আকার এবং গতিও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতেই তা আঘাত হানবে স্থলভাগে। বুলবুল কোথায় গিয়ে আছড়ে পড়বে, তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।

ইতিমধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের দুবলার চর এলাকায় আঘাত হেনেছে বুলবুল। রাতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।

এরই মধ্যেই দিঘা ও সাগরদ্বীপের অনেক কাছে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড়টি। দুপুর দুইটার সময় ওই দুই জায়গা থেকে বুলবুল মাত্র ৯৫ কিলোমিটার দূরে ছিল বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। কলকাতা থেকে তার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকেও বুলবুলের দূরত্বও কমে হয়েছে ৪৮৫ কিলোমিটার। বুলবুল আরও কাছে চলে আসায় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আলীপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সমুদ্রে বুলবুলের গতিবেগ বেশি থাকলেও, স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় তার গতি কমবে। কিন্তু যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বুলবুল, তাতে মনে করা হয়েছে স্থলভাগে আছড়ে পড়লেও গতি হবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। শেষ মুহূর্তে যদি শক্তি বৃদ্ধি পায়, তাহলে এটি ১৩৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিতেও পৌঁছে যেতে পারে।

এ অবস্থায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রামকে ৯ নম্বর ও কক্সবাজারকে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

তবে সর্বশেষ শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক আয়েশা খানম জানিয়েছেন, বুলবুলের গতি-ক্ষমতা কমছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’ যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঝড় ও ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‌‌‘বুলবুল’-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সকল সেনানিবাস, ঘাঁটি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় আর্মড ফোর্সেস বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের প্রতি ৮টি নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 
অন্যদিকে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় এফবি তরিকুল নামের মাছ ধরার একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ১৫ জেলেসহ ট্রলারটির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছেন সেন্টমার্টিনের ১২০০ পর্যটক। বুলবুলের কারণে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধ্স ও ঝুপড়ি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ১২ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী লাখো মানুষকে নেয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সুন্দরবনে বুলবুলের প্রভাব

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুপুর ১২টা থেকে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হলেও শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অংশে আঘাত হানতে শুরু করেছে।

একই সঙ্গে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট পানির উচ্চতা। এখন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড, হিরন পয়েন্ট, দুবলারচর, মেহের আলীর চর, অফিসকিল্লা, মাঝেরচর, আলোরকোল, মরণের চরে আছড়ে পড়েছে।

১২০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই বাড়ছে ঝড়ের তীব্রতা। তছনছ করে দিয়েছে দুবলারচরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম এ তথ্য জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে বুলবুলের আঘাত

রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে বুলবুল। সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে স্থলভাগে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঝড়টি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথে রয়েছে সুন্দরবনের বদ্বীপ অঞ্চল।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উপকূলে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৃষ্টি। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকায়। সেসব জায়গায় তৈরি রয়েছে দেশটির বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তারা।

দুবলার চর এলাকায় বুলবুলের আঘাত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যা-অন্ধ্র প্রদেশ ঘেঁষে সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দিকে বাঁক নিয়েছে অতি ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সেই সঙ্গে তার আকার এবং গতিও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্যমতে জানা গেছে, শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। পরবর্তীতে তা সন্ধ্যা নাগাদ বেড়ে ঘণ্টায় ১১৫ কিমি বেগে বাংলাদেশের দুবলার চর এলাকায় আঘাত হেনেছে।

দুবলার চর ফিশার মেন গ্রুপের হিসাব রক্ষক ফরিদ আহমেদ জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে সিডর এভাবেই প্রথমে আঘাত হানে এবং বিকাল থেকে তা প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে দুবলার চরের জেলে পল্লীগুলো তছনছ করে দেয়।

মোংলা-পায়রা বন্দরে ১০, চট্টগ্রামে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর শক্তি আরো বেড়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রামকে ৯ নম্বর ও কক্সবাজারকে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। 

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর।

দেশের সাতটি জেলা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অতিঝুঁকিতে আছে। জেলাগুলো হলো খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলা। ভোলায় ৬৬৮টি, বরগুনায় ৫০৯টি, বাগেরহাটে ২৩৪টি, খুলনায় ৩৩৮টি, সাতক্ষীরায় ২৭০টি, পটুয়াখালীতে ৪০৩টি ও ব‌রিশালে ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল' চলাকালীন ও ঘূর্ণিঝড় শেষে উদ্ধারকাজসহ যেকোনো সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছে কোস্ট গার্ড। জরুরি সহায়তার জন্য নিম্নোক্ত ফোন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে - বরিশাল বিভাগ ০১৭৬৬৬৯০৬০৩, খুলনা বিভাগ ০১৭৬৬৬৯০৩৮৩, চট্টগ্রাম বিভাগ ০১৭৬৬৬৯০১৫৩ এবং অতিরিক্ত ০১৭৬৬৬৯০০৩৩।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ খুলনা ও বরিশালের দিকে ধেয়ে আসছে। তবে শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের কোনো এক সময় আঘাত হানতে পারে।

বুলবুলের গতি-ক্ষমতা কমছে

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রভাগ উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কমেছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছিল। পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪৩৫ ও চট্টগ্রাম থেকে ৪২৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক আয়েশা খানম এ তথ্য তুলে ধরেন।

আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের দিকে এসে আঘাত হানলে এর গতি কমতে থাকবে। সাধারণত ভূখণ্ডে বাধা পেয়ে এর গতি কমে আসে।

ঘূর্ণিঝড়-‌‌পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত সব সেনানিবাস

ঘূর্ণিঝড় ‌‌‘বুলবুল’-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সকল সেনানিবাস, ঘাঁটি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার। শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বুলবুল মোকাবিলায় আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ 

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় আর্মড ফোর্সেস বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায়  আয়োজিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার আশঙ্কায় আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনকে সার্বিক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সিপিপির সকল কর্মকর্তাদের ছুটি ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। 

বুলবুল মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৮ নির্দেশ

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের প্রতি ৮টি নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো :

১. দুর্গত এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের কাজ করতে বলা হয়েছে।

২. দুর্গত জেলাসমূহে ১৫৭৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা।

৩. দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত ৪৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা দেবে।

৪. দুর্গত জেলাগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি মজুত নিশ্চিত করা হয়েছে।

৫. কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওষুধ মজুত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি মজুত রয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু দুর্গত এলাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

৬. দুর্গত এলাকায় গর্ভকালীন ও জরুরি প্রসূতি সেবার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

৭. স্বাস্থ্য অধিদফতরে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, অপারেশন প্ল্যানের জরুরি প্রস্তুতি কর্মসূচি সার্বিক বিষয়ে সমন্বয় করছে।

৮. হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম তদরকি করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং উপদ্রুত জেলাগুলোর কন্ট্রোল রুমগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

দোয়া করবেন ঘূর্ণিঝড়ে যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয় : প্রধানমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’ যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য দেশবাসীকে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঝড় ও ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের ১২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সাগরে ট্রলারসহ ১৫ জেলে নিখোঁজ

বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় এফবি তরিকুল নামের মাছ ধরার একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর থেকে গত দুই দিনে ওই ট্রলারের ১৫ জেলেসহ ট্রলারটির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

শনিবার বাগেরহাট জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে বরগুনার নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন ওই ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ট্রলার মালিক নজরুল ইসলামের বরাত দিয়ে ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি জানান, সুন্দরবন-সংলগ্ন নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় মাছ ধরার সময় হঠাৎ ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পার্শ্ববর্তী এফবি গাজী নামের একটি  ট্রলার ছগির নামে এক জেলেকে উদ্ধার করতে পারলেও বাকি ১৫ জেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি।

উদ্বেগ ও আতঙ্কে সেন্টমার্টিনের ১২০০ পর্যটক, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধসের শঙ্কা

টেকনাফ (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাব নিয়ে কক্সবাজারের উপকূলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সংকেত বাড়তে থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে আটকা পড়েছে প্রায় ১২০০ পর্যটক। জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে প্রায় ১২০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন। বৃহস্পতিবার বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে রাতযাপনের জন্য থেকে যান। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে হঠাৎ সংকেত বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

বুলবুলের তীব্রতা শুরু হলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধ্স ও ঝুপড়ি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি জেলা শহরসহ পাহাড়ি অন্যান্য এলাকাতেও পাহাড়ধসের শঙ্কার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে  দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল।

শনিবার বেলা সোয়া দুইটা থেকে এই রুটগুলোতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। এদিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হলেও চালু রয়েছে এই রুটের ফেরি চলাচল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর আরিচা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, দুটি রুটে মোট ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে ছোট ৮টি লঞ্চ শুক্রবার বিকেল থেকে বন্ধ রয়েছে। বাকি ২৬টি বড় লঞ্চ শনিবার দুপুর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বরিশালের ৬ জেলার ১২ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে

বরিশাল সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার উপকূলের মানুষকে। এরই মধ্যে বিভাগের ৬ জেলার প্রায় ১২ লাখের বেশি মানুষ সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

এছাড়া ২০ লাখের বেশি গবাদিপশু নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং বিভাগের ৬টি জেলার জেলা প্রশাসকগণ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।

জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার সাইক্লোন শেল্টারসহ অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী লাখো মানুষকে নেয়া হলো আশ্রয়কেন্দ্রে

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ফলে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের লাখো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকূলবর্তী অঞ্চলের এসব মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।

শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহিনুর ইসলাম জানান, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়ন দুটি অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালী ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নও ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এসব এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। তারা বাড়িতেই থাকতে চায়। কেউ কেউ তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, বিকাল পর্যন্ত উপকূলের লাখের অধিক মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমি দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী চেয়েছি। অলরেডি সেনাবাহিনী মাঠে নেমে গেছে। প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে কাজ করছেন। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে।

এনআই

আরও পড়ুন