• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৯, ১০:০০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১০, ২০১৯, ১২:৫৯ পিএম

আঘাত হেনে দুর্বল হচ্ছে বুলবুল, নিহত ৫

আঘাত হেনে দুর্বল হচ্ছে বুলবুল, নিহত ৫

দুর্বল হয়ে আঘাত হানলেও ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ থাবা বসিয়েছে উপকূলীয় এলাকায়। প্রচণ্ড ঝড়ো-হাওয়ায় বাড়িঘর ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসছে ক্ষয়ক্ষতির সংবাদও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বুলবুলের আঘাতে খুলনা ও পটুয়াখালীতে ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ভারতে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

'বুলবুল' ক্রমশ দুর্বল হয়ে রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে পুরোপুরি প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এটি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হওয়া বইছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই দিনের মতো সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বুলবুলের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মেদিনিপুর, কলকাতা এবং ওড়িষ্যা রাজ্যের উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় বহু গাছ উপড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বাতাসের গতি নিয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে বুলবুল। এরপর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঝড়টি পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ দুর্বল হতে হতে পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে।

বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল ভারতের ‘সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্কের’ ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। রোববার ভোররাত সোয়া ৩টার দিকে ‘বুলবুল’ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা উপকূল অতিক্রম করে। এসময় বৃষ্টি ও হালকা দমকা হাওয়া বয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভোর ৫টায় সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। 

খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাফর রানা বলেন, মূল ঝড়ের আঘাত ভোররাত সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়। এতে কয়রা উপজেলার অনেক ঘরবাড়ি ভেঙেছে, গাছপালা উপড়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট বেশি ছিল। এছাড়া খুলনা সদরে গাছপালা ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পটুয়াখালীর মির্জাগ‌ঞ্জের উত্তর রামপুরা গ্রা‌মে হামেদ ফকির (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। ভোরে ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান বলে জানা গেছে।

খুলনায় ঘরচাপা পড়ে প্রমিলা মণ্ডল (৫২) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে দাকোপ উপজেলার দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের এই ঘটনা ঘটে। নিহত প্রমিলা মণ্ডল দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের সুভাষ মণ্ডলের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, প্রমিলা মণ্ডল সাইক্লোন শেল্টার থেকে দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে আসেন। তিনি ঘরে ঢোকার পর গাছ ঘরে ভেঙে পড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। 

ভেঙে পড়া গাছের ডালপালা সরাতে গিয়ে তা চাপা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সকালে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তার নাম আলমগীর হোসেন (৩০)। তিনি কাটানীপাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শফি মিস্ত্রির ছেলে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও পিটিআই জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ ও বকখালি এবং পূর্ব মেদিনিপুরের খেজুরি, নন্দগ্রাম, নয়াচর ও রামনগর এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলীয় এসব এলাকায় ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েছে, অনেক ঘরের চাল উড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট। অনেক এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে কলকাতা শহরের একটি নামকরা ক্লাবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ওড়িষ্যায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ের কারণে কলকাতা বিমাবন্দরের সব কার্যক্রম ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৬৫ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘণ্টায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ সারাদিন বৃষ্টিপাত হবে।

সাগর উত্তাল থাকায় মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও এই মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে বাংলাদেশের মোংলা, চট্টগ্রামসহ সব সমুদ্রবন্দরে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলেছে অভ্যন্তরীণ নৌপ‌রিবহন কর্তৃপ‌ক্ষ। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ হাজার ৫৮৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জন লোককে নেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধার ও জরুরি ত্রাণ তৎপরতার জন্য। পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ২০০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকে এবং ২২টি কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করছে।

উপকূলীয় ১৩ জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব জেলার সব কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গঠন করা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭টি মেডিকেল টিম।

ঝড় এগিয়ে আসায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে শনিবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। শনিবার আরেক ঘোষণায় সোমবারের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবারের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। 

এফসি

আরও পড়ুন