• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২০, ০৩:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০২০, ০৩:৪৬ এএম

যেভাবে ঘুর্ণিঝড়ের নাম হলো ‘আম্ফান‍‍’

যেভাবে ঘুর্ণিঝড়ের নাম হলো ‘আম্ফান‍‍’
স্যাটেলাইট ইমেজে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সম্ভাব্য গতিপথ- ছবি: সংগৃহিত

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আরও গতি ও শক্তির সঞ্চার করে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে জানা গেছে, শক্তি সঞ্চার করে বর্তমানে সেটি সুপার সাইক্লনে রূপ নিয়েছে। এরইমধ্যে ‘আম্ফান’ নাম নিয়ে কৌতুহল দেখা দিয়েছে জনমনে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল মহাসেন, সিডর, আইলা, নার্গিস, ফণি ও বুলবুল ইত্যাদি। এর ধারাবাহিকতায় এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘আম্ফান’।

সোমবার (১৮ মে) আবহাওয়াবিদ রাশেদুর রহমান বলেন, ‘আম্ফান’ ঝড়ের নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড। 'আম্ফান' শব্দের অর্থ 'আসমান' বা 'আকাশ'।

♦ সাইক্লোন সমূহের নামকরণ
শেষ খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৯ মে) শেষ রাতে অথবা বুধবার (২০ মে) বিকেল বা সন্ধ্যায় খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে ঝড়টি। এ সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলায় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ভবিষ্যতে আসন্ন ১৬৯ টি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের নামের একটি তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)। প্রতিটি সাইক্লোনই বঙ্গোপসাগর অথবা আরব সাগরে আবির্ভূত হবে।
পৃথিবীর যে কোনও মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের নামকরণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ছ’টি আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র যার মধ্যেই আইএমডি এবং আরো ৫টি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সতর্কতা কেন্দ্র।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরসহ ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগে যেসব সাইক্লোন দেখা দেয়, সেগুলির নামকরণ করে আইএমডি। এর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। এছাড়াও এই অঞ্চলের ১২টি দেশকে সাইক্লোন বা অন্যান্য ঝড়ের আগমনবার্তা এবং সে সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার দায়ভার ন্যস্ত হয়েছে আইএমডি-র উপর।

♦ কীভাবে হয় সাইক্লোনের নামকরণ?
আজ থেকে দুই দশক আগে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিওএমও) এবং এসক্যাপ-এর অধীনস্থ আটটি দেশ – ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, এবং থাইল্যান্ড – সিদ্ধান্ত নেয় যে এই অঞ্চলের সাইক্লোনের নামকরণ করবে তারা। প্রতিটি দেশ তাদের নামের তালিকা পাঠানোর পর তা চূড়ান্ত করে একটি ডব্লিওএমও/এসক্যাপের প্যানেল, যার পোশাকি নাম প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। ২০১৮ সালে এ দলে প্রবেশ করে আরও পাঁচটি দেশ – ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন।
গতমাসে ১৬৯টি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে আইএমডি – ১৩টি দেশ থেকে ১৩টি করে নাম। নতুন তালিকায় ঢোকানো হয় পূর্ববর্তী তালিকার একটিমাত্র নাম– আম্ফান। কারণ নতুন তালিকা প্রকাশের সময় পর্যন্ত অব্যবহৃত ছিল এই নামটি। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগর সংলগ্ন এলাকায় ঘনীভূত হতে থাকা এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জন্যই বর্তমানে সতর্কবার্তা জারি করেছে আইএমডি।

♦ সাইক্লোনের নামকরণ জরুরি কেন? কী প্রক্রিয়া তার?
নম্বর বা পরিভাষা ব্যবহার করার বদলে সাইক্লোনের নাম রাখলে শুধু যে জনসাধারণ সহজে মনে রাখতে পারে তাই নয়, সাহায্য হয় বিজ্ঞানী, মিডিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা দল প্রভৃতিরও। নির্দিষ্ট নাম ব্যবহার করলে সাইক্লোনের বর্তমান অবস্থান এবং তীব্রতা নির্ধারণ, দ্রুত সতর্কীকরণ, এবং একই অঞ্চলে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূরীকরণের কাজে সুবিধা হয়।

সাইক্লোনের নামকরণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি মেনে চলতে হয়:
* প্রস্তাবিত নামগুলি রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, ধর্মীয় ভাবনা, বিশেষ সংস্কৃতি, অথবা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হবে
* এমনভাবে নাম বাছতে হবে যাতে পৃথিবীর কোনও জনগোষ্ঠী বা সমষ্টির ভাবনায় আঘাত না লাগে
* নামের মধ্যে রুক্ষতা বা নির্মমতা প্রকাশ পেলে চলবে না
* নাম হবে সংক্ষিপ্ত, সহজে উচ্চারণ করা যায় এমন, এবং সকল সদস্য দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য
* নামের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য আট অক্ষরের বেশি হবে না
* প্রস্তাবিত নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা এবং ভয়েস ওভার দিতে হবে
* ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামের পুনরাবৃত্তি হবে না। একবার ব্যবহার করলে আর ব্যবহার করা যাবে না।

আরও পড়ুন