• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২০, ১০:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০২০, ১০:৩৩ পিএম

লড়াইয়ে নামছে দুর্যোগের কাণ্ডারি

আম্ফান মোকাবিলায় প্রস্তুত সশস্ত্র বাহিনী

আম্ফান মোকাবিলায় প্রস্তুত সশস্ত্র বাহিনী
প্রতীকী ছবি

প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়া সুপার সাইক্লোন আম্ফান পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগের নেতৃত্বে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৯ মে) রাত ৯টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সাথে দুর্যোগ পূর্ববর্তী কার্যক্রমের সমন্বয় এরইমধ্যে করেছে। নিজস্ব উৎস থেকে ১৮,৪০০টি ত্রাণের প্যাকেট তৈরি করেছে এবং ৭১টি ছোট মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। ১৪৫টি ছোট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম বিশেষ সরঞ্জামাদিসহ সংক্ষিপ্ত নোটিশে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।'

এ ছাড়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের রক্ষায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভূমিধস বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম।

প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩১৩টি স্পিডবোট, ১৫টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, ২৩৯ আউট বোর্ড মোটর, ৪টি জাপানিস উদ্ধার বোর্ড, ৬ টি ফাইবার গ্লাস বোর্ড, ১১৫ টি শার্ক বোর্ড, এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি ও ল্যান্ডিং ক্রাফট যান। উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে আর্মি এভিয়েশন।

এদিকে, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান পরবর্তী জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনস্তরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

এরইমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা নৌঅঞ্চলে নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কাজের জন্য নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট এবং দুটি হেলিকপ্টার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

সেইসাথে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় দুর্গত এলাকাগুলোতে মোতায়েনের জন্য নৌ কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রথমে নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও দুটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নৌবাহিনী জাহাজগুলো উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সহায়তা কার্য পরিচালনা করবে।

প্রাথমিকভাবে এ উদ্ধার কাজের জন্য বানৌজা সমুদ্রজয় ও সমুদ্র অভিযান কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায়, বানৌজা গোমতি মোংলা ও তৎসংলগ্ন সাগর তীরবর্তী এলাকায় নিয়োজিত থাকবে। অন্যদিকে বানৌজা সুরভি চট্টগ্রামের বহিঃনোঙর থেকে মহেশখালী এলাকায়, বানৌজা বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, প্রত্যয়, সংগ্রাম ও প্রত্যাশা বহিঃনোঙর থেকে চট্টগ্রামের পোতাশ্রয় এলাকায়, বানৌজা দুর্জয়, নির্মূল ও শাপলা চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায়, বানৌজা অতন্দ্র সন্দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায়, বানৌজা অপরাজেয় হাতিয়া এলাকায় নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে কাপ্তাই নৌঘাটি বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জম হতে বোট নিয়োজিত থাকবে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, নোয়াখালি, ফেনী ও লক্ষিপুরে নৌবাহিনীর এলসিইউ-১ এবং এলসিইউ-২, বরিশাল ও আশপাশের এলাকায় বানৌজা হাতিয়া, সন্দ্বীপ, শাহপরাণ এবং শাহ মখদুম, বরগুনা, বরিশাল, সাতক্ষিরা ও ঝালকাঠির অভ্যন্তরীণ রুটে নৌবাহিনীর এলসিটি-১০৪ এবং এলসিটি-১০৫ এবং কর্ণফুলী চ্যানেলে বানৌজা খাদেম নিয়োজিত থাকবে।

এ ছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্যালাইন ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবে।

ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে খুলনা নৌঅঞ্চলের দুটি জাহাজ সাতক্ষীরা ও দুবলার চর গমনের উদ্দেশ্যে খুলনা নৌ জেটি ত্যাগ করেছে। সেইসাথে সড়কপথে ৫ সদস্যের একটি মেডিকেল টিমসহ ২৪ জন নৌসদস্যের একটি টিম দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে গমন করেছে। এ ছাড়া বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে টহলরত তিনটি জাহাজকে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রাথমিক রেসপন্স জাহাজ হিসেবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা ও আঘাতের প্রকোপ পর্যবেক্ষণের পর নৌবাহিনীর আরও পাঁচটি জাহাজ বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ চিকিৎসা ও উদ্ধার অভিযানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমানবাহিনীর সব এয়ারক্রাফট। বিমান বহিনীর এয়ারক্রাফটগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি পরিবহন বিমান ও ২২টি হেলিকপ্টার।

এসকে

আরও পড়ুন