• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২১, ০৯:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৪, ২০২১, ০৯:০৭ পিএম

বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত বঙ্গভ্যাক্সের ৫ কর্মকর্তা

বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত বঙ্গভ্যাক্সের ৫ কর্মকর্তা

বাংলাদেশে উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বানর সংগ্রহ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। রোববার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লাঞ্ছনার শিকার হওয়াদের মধ্যে আছেন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেড’র মিডিয়া কনসালটেন্ট মো. আনিছুর রহমান। তিনি জানান, সরকারি অনুমতি নিয়ে তারা বানর ধরতে গিয়েছিলেন। বরমী বাজার এলাকা থেকে ১০টি বানর ধরেন তারা। কিন্তু স্থানীয় কিছু মানুষ বানরের জন্য টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

এসময় স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সাসহ বানরগুলোও ছিনিয়ে নিয়ে যান বলে জানান আনিছুর রহমান। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, সকাল ১০টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বরমী এলাকার স্থানীয় জনগণ বানর ধরার খবরটি আমাকে জানায়। পরে আমি সেখানে গিয়ে কয়েকটি বানর খাঁচায় আবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই এবং এসব বানর ধরার কারণ জানতে চাই। পরে তারা গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের তৈরি করা করোনার ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পুশ করার আগে প্রাণীর দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বানর ধরার কথা জানান। বানর ধরার জন্য বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকার কথা জানান। কিন্তু স্থানীয়রা বানর ধরতে বারণ করার পরও তারা বানর ধরা অব্যাহত রাখায় তারা উত্তেজিত হয়। তাদের শান্ত করে বানর ধরতে আসা লোকজনদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানা পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসেন। তবে তিনি বানরের জন্য টাকা দাবি ও লুটের কথা অস্বীকার করেছেন।

তিনি আরও জানান, কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বরমীর বানর। শত অত্যাচার করে এ বানরগুলো তারপরও তাদের অত্যাচার সহ্য করেও আমরা তাদের খাবার দেই, যত্ন করি। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও প্রত্যেক বাড়ি থেকে খাবার যোগাড় করে দেই। বানরগুলোই বরমী বাজারকে মাতিয়ে রেখেছে। বানরগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে অজ্ঞান করায় তারা উত্তেজিত ও মারমুখী হয়ে উঠেছিল।

এ বিষয়ে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক জানান, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এজন্য গত ২৬ জুন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে তাদের ৫৬টি বানরের প্রয়োজন বলে আবেদন করেন। পর দিন প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর প্রয়োজনীয় সংরক্ষক বানর ধরা ও ব্যবহারের জন্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক পত্র পাঠানো হয়। পরে প্রধান সংরক্ষক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমাকেও দিয়েছেন। 

এর আগে তারা গিনিপিগ ও খরগোসেও এ টিকা প্রয়োগ করেছেন। তবে আরো নিশ্চিত হতে বানরের দেহেও প্রয়োগ করার জন্য তাদের বানর প্রয়োজন। তারা গত ২৯ জুন থেকে তিনদিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছেন। বাকি বানর ধরার জন্য রোববার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বনকর্মকর্তাদের অবগত না করেই তারা শ্রীপুরের বরমী বাজারে গেলে জনরোষে পড়েন। পরে স্থানীয় শ্রীপুর উপজেলা ও থানা পুলিশের ওসি তাদের উদ্ধার করলেও বানর ধরে নিয়ে যেতে পারেননি।

শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। পরে বানর ধরার জন্য তাদের সঙ্গে থাকা মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র তথা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

জাগরণ/এসকে