• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯, ০৯:৪৪ এএম

প্রমত্তা বেতনা নদী খনন, টিআরএম পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি

প্রমত্তা বেতনা নদী খনন, টিআরএম পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি
বেতনা নদীর ময়লা, আবর্জনা ও শেওলা পঁচে দুষিত হচ্ছে কলারোয়া পৌর সদরের পরিবেশ

 

ভূমি দস্যুদের বেপরোয়া দখল ও দীর্ঘদিন খনন না করায় কলারোয়ার প্রমত্তা বেতনা নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নদীর জোয়ার-ভাটা। নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। এছাড়া আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নদী খনন না করা হলে আবাসিক এলাকা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত ও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপজেলার সচেতন মহল। তাদের দাবি, নদী খনন না করায় একদিকে এলাকার পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে দ্রুত দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ নদীটি।

সাতক্ষীরা পানি কমিটি ও বেতনা নদী বাচাঁও আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ভূমি দস্যুদের কবল থেকে নদী রক্ষা, নদীতে জমা পলি দ্রুত খনন ও নদীতে জোয়ার ভাটায় টিআরএম পদ্ধতি চালু করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন করলেও সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোনো ব্যাবস্থা গ্রহন করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলারোয়া পৌরসদরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত বেতনা নদী দিয়ে ২৫/ ৩০ বছর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যাতায়াত করতো। এর ফলে কলারোয়া উপজেলা সদর, ঝাউডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, পাটকেলঘাটা, তালাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা-বানিজ্যকেন্দ্রিক অনেক বন্দর গড়ে উঠেছিলো। তাছাড়া উপকুলবর্তী উপজেলাগুলো থেকে পাইকারী ব্যাবসায়ীরা বড় বড় নৌকায় এ নদী পথে মালামাল কেনা-বেচা করতে আসত। সে সময় বেতনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে নদী বন্দর গড়ে উঠায় এলাকার সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু আজ এ নদীতে পলী জমে ও ভূমি দস্যুদের অবৈধ্য দখলের কারণে জোয়ার-ভাটাহীন মরা খালে পরিনত হয়েছে। আর নদীতে ফেলা ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নষ্ট হচ্ছে উপজেলার পরিবেশ। তাছাড়া, কলারোয়া উপজেলাসহ সাতক্ষীরা জেলায় প্রতি নিয়ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হচ্ছে।

    কলারোয়া পৌর সদরের মুরারীকাটি এলাকায় নদী দখল করে পাকাবাড়ি ও দোকানঘর নির্মান

কলারোয়া পৌরসদরের বাসিন্দা শহিদ আলী জানান, গত ১৫/১৬ বছর যাবত নদীটি পুনঃখনন করার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু আজো নদী খননের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে পলি মাটি জমে নদীটি নাব্য হারিয়ে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আর এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে নদীর মাঝে বাধ দিয়ে মাছ চাষ, নদী তীরবর্তী চর অবৈধ্যভাবে দখল করে পাকা বাড়ি-ঘর, দোকান নির্মান করছে। তাছাড়া চর দখল করে তারা অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে বেতনা নদী এখন সংকুচিত হয়ে স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মল, আবর্জনাসহ বিভিন্ন নষ্ট জিনিষ ফেলায় সেগুলি পচে দূর্গন্ধ চড়াচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এদিকে নদীটির তীরবর্তী বাসিন্দাদের দাবি, নদী খনন করে আবারো আগের মত স্রোত ধারায় ফিরিয়ে না আনার ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি উপচে পড়ে বন্যা ও স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে উপজেলার কৃষক, মৎস্য চাষি ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এসব বাসিন্দারা এ নদী খননসহ বন্যা ও জলাবদ্ধতা দুর করা এবং অবৈধ্য দখলদারদের উচ্ছেদ করার জোর দাবি জানান।

সাতক্ষীরা বেতনা নদী বাচাঁও আন্দোলন কমিটির নেতা ইয়ারব হোসেন জানান, জীব বৈচিত্রসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও দখলদার মুক্ত করার জন্য সাতক্ষীরা জেলায় বেতনা নদী বাচাঁও সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ কমিটির মাধ্যমে মাববন্ধন, সাংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু কতৃপক্ষ কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহন করছে না।

তিনি আরো জানান, বেতনা নদী এক সময় সাতক্ষীরা জেলার ব্যবসা-বানিজ্যের অন্যতম যাতায়াত মাধ্যম ছিলো। এ নদীর কারণে কলারোয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিক বন্দর গড়ে উঠেছিলো। কিন্তু কালক্রমে সে নদীতেপলি জমে ভরাট হয়ে যায়। তার সাথে অবৈধ দখলদারদের কারণে নদীতি আজ মরতে বসেছে। পানির ধারন ক্ষমতা না থাকায় নদিতে এখন জোয়ার-ভাটা নেই। নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে মিল, কল-কারখানা, বাড়িঘর, ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি সাতক্ষীরা জেলায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, পরিবেশ দূষণ রোধ, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসন, কৃষি ও ব্যবসায়িক উন্নয়নে অবিলম্বে এ নদীটি খননসহ টিআরএম পদ্ধতি চালু করার জন্য সরকারের ঊর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এসসি/