• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০৯:৩৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০১৯, ০৪:০৬ পিএম

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : নিহত ৭০ জনের অধিকাংশই বাংলাদেশি

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : নিহত ৭০ জনের অধিকাংশই বাংলাদেশি
ইটালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পরে উদ্ধার হওয়া এক শরণার্থী -রয়টার্স

তিউনিশিয়া উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত অন্তত ৭০ জনের অধিকাংশই বাংলাদেশি শরণার্থী। জীবিত উদ্ধার ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ৫ জনের বাড়ি সিলেটে বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দেয়া তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।  

উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন রওনা দিয়েছিলেন ইটালির উদ্দেশে। গভীর সাগরে পৌঁছে বড় নৌকা থেকে থেকে তাদের ছোট একটি নৌকায় তোলা হয়। রবারের তৈরি হাওয়ায় ফোলানো সেই নৌকাটি মিনিট দশের মধ্যেই ডুবে যায়। তিউনিশিয়ার মৎস্যজীবীরা ১৬ জনকে উদ্ধার করতে সমর্থ হন। তাদের মধ্যে ১৪ জনই বাংলাদেশের নাগরিক। শনিবার সকালে তাদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়। তখনও আতঙ্ক কাটেনি তাদের। কোনও মতে কয়েকজন তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানাতে পেরেছেন। বলেছেন, টানা ৮ ঘণ্টা আমরা ঠাণ্ডা সাগরের পানিতে ভেসে ছিলাম।

জাতিসংঘের অভিবাসী সংক্রান্ত সংস্থার ব্রিটিশ শাখা আইওএম জানায়, চলতি বছরের এই কয়েক মাসে ভূমধ্যসাগর পেরোতে গিয়ে ৪৪৩ জন শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিউনিশিয়ার এই দুর্ঘটনাতেই একসঙ্গে এত শরণার্থীর মৃত্যু হল বলে জানায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনারের অফিস (ইউএনএইচসিআর)। উদ্ধার হওয়াদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর বলছে, লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রায় একশ জন।

নৌকাটিতে মোট কত জন যাত্রী ছিলেন, তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারছে না কেউই। উদ্ধার হওয়া লোকজনের কথার ভিত্তিতেই একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকাটিতে অন্তত ৫১ জন বাংলাদেশি ছিলেন। আর ছিলেন ৩ জন মিসরীয় এবং মরক্কো, শাদ ও আফ্রিকার কয়েকজন নাগরিক। এই হিসাব থেকে অনুমান করা হচ্ছে, অন্তত ৩৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। 

তিউনিশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের নৌসেনা এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩ জনের দেহ উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে উদ্ধারের কাজ জোরেসোরে চলছে। 

ত্রিপোলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলি জানান, তারা তিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। 

তিউনিশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তর জানায়, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে যায় তাদের একটি জাহাজ। সেটি পৌঁছে দেখে, মৎস্যজীবীদের একটি নৌকা অভিবাসীদের উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে। 

প্রতি বছরই ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য লিবিয়া থেকে রওনা দেন হাজার হাজার অভিবাসী। বেশির ভাগ সময়েই যে ধরনের নৌকা ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। বহন ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলা হয়। ফলে প্রায়ই মাঝসমুদ্রে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।  

যদিও ২০১৭-র মাঝামাঝি থেকে অভিবাসীদের ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার হার কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কড়া সমালোচনা উপেক্ষা করে লিবিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিবাসী অনুপ্রবেশের উপর নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে ইটালি। ফলে মাঝসমুদ্রে কোনো শরণার্থীদের নৌকা নজরে এলেই সেটিকে আটক করার নির্দেশ রয়েছে লিবিয়ার বাহিনীর কাছে। একবার ধরা পড়লে লিবিয়ায় ফেরার পথও বন্ধ ওই অভিবাসীদের। তা সত্ত্বেও, ২০১৯-এর প্রথম দু’মাসে এই ভূমধ্যসাগর দিয়ে অন্তত ১৫ হাজার ৯০০ জন উদ্বাস্তু ইউরোপে ঢুকেছেন বলে সূত্র জানায়। 

এফসি