• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২১, ২০১৯, ০২:৪৯ পিএম

পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজ্যপাল

২১ এর ভোটে মমতার কাঁটা হতে পারেন ধনকড়

২১ এর ভোটে মমতার কাঁটা হতে পারেন ধনকড়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়


ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজ্যপাল হলেন জগদীশ ধনকড়। আর তিন দিন পর বর্তমান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আরএসএস-ঘনিষ্ঠ কেশরীনাথের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল না। সেই কারণে অনেকের মনে হয়েছিল, কেশরীনাথকেই হয়ত রাজ্যপাল করে রেখে দেবেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। কিন্তু তা হলো না, প্রবীণ কেশরীনাথকে সরেই যেতে হলো।

কে এই জগদীশ ধনকড়? আদতে রাজস্থানের বাসিন্দা জগদীশ সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রবীণ আইনজীবী। পেশার বাইরে একসময় কংগ্রেস করতেন। পরে জনতা দলে যোগ দিয়ে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের সরকারের মন্ত্রী হন। ২০০৩ সালে পাকাপাকিভাবে যোগ দেন বিজেপিতে। ৬৮ বছর বয়সী জগদীশের সঙ্গে আরএসএস-এর যোগাযোগ রয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এই পরিবর্তন জানাই ছিল। তাছাড়া নতুন রাজ্যপাল খুব কট্টর বিজেপি’র লোক। এমন কোনও তথ্যও নেই। তাই হয়ত মুখ্যমন্ত্রী ধনকড়কে স্বাগত জানিয়েছেন। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও রাজ্যে রাজ্যপাল নিয়োগ কেন্দ্রের একচেটিয়া অধিকার। কিন্তু রীতি হল, এমন নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তা হয়নি। তবু কট্টর বিজেপি-সমালোচক মমতা এই নিয়ে টু শব্দটি করেননি। বরং নতুনকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকের মতে, নতুন রাজ্যপাল কি ভূমিকা পালন করেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন হয়, সে সব না দেখে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মমতা। সাদা কথায়, তিনি জল মেপে পরে বলবেন।

বিজেপি অবশ্য ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা ভোটে নতুন রাজ্যপাল বড় ভূমিকা নেবেন বলে মনে করছে। লোকসভায় গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের পর তৃণমূলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের মত রাজ্য দখল করতে মরিয়া গেরুয়া বাহিনী। আর সেই লক্ষ্যে তৃণমূলে আরও বড় ধরনের ভাঙ্গন ধরাতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন বিজেপি নেতারা। রাজ্যের বহু মানুষও মনে করেন, ২০২১-এ রাজ্যে পরিবর্তন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। আর এখানেই একটা বড় ভূমিকা রয়েছে রাজ্যপালের। এমনিতে রাজ্যপালের কোনও ক্ষমতা নেই। কিন্তু খাতে-কলমে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে তিনি চাইলে কোনও সরকারকে জেরবার করে দিতে পারেন। অন্যভাবে বললে, সরকারের মাথায় রাজ্যপাল থাকায় তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টাইট দিতে  বিজেপি-র হয়ে কাজ করবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।

রাজ্য বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সরকার বহু নিয়ম-বহির্ভূত কাজ করে। সদ্য পেরোনো লোকসভা ভোট, তার আগের পঞ্চায়েত ও বিধানসভার ভোট নিয়ে এমন অনেক নজির রয়েছে। ২০২১-এর ভোটের আগেও সেই চেষ্টা হবে। নতুন রাজ্যপাল আইনজীবী হওয়ায় তিনি তাতে বাধা দিতে পারবেন। তাছাড়াও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কেন্দ্রীয় বাহিনী, কল্পতরু হয়ে প্রকল্প ঘোষণার মতো যে বিষয়গুলো ভোটের আগে সামনে আসে, সেখানে কোনও অনিয়ম দেখলে সরব হতে পারবেন রাজ্যপাল।

রাজনৈতিক মহলের মতে, মোদী-শাহ জুটি পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে মরিয়া। সেই কারণে তাঁরা সবরকম চেষ্টা করবেন। তাই রাজ্যপাল এমন একজনকে করা হল, যিনি পুরোপুরি কেন্দ্রের কথায় চলবেন, প্রয়োজনে কঠোর হবেন, রাজনীতির ময়দানে জগদীশ ধনকড় তেমন কোনও নাম নয়। দিল্লির পাওয়ার সেন্টারেও তাঁর তেমন দর নেই। বলা যায়, লো-প্রোফাইল মানুষ। হতে পারে, এমন একজন লো-প্রফাইল লোকের মত কাঁটা দিয়েই মোদী-শাহ জুটি মমতা নামক কাঁটা তোলার চেষ্টা করবেন। তেমনই অঙ্ক কষে পাঠিয়েছেন তাঁকে। শেষ পর্যন্ত কি হয়, সেটাই দেখার।

আরআই