• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৪:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৬:০৭ পিএম

করোনা ভাইরাস আতঙ্ক

উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের আকুতি

উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের আকুতি

বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। এদিকে চীনে অবস্থানরত বিদেশী শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের নিয়ে উদ্বেগ চরমে পৌঁছেছে সে সব
দেশের দূতাবাসগুলোর। চীনে পড়তে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের এরইমধ্যে সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রামন সম্পর্কে সতর্ক করেছেন চীনের
প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।

এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান শহরে গত দুদিন ধরে আটকে পড়েছেন অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রবাসী নাগরিক।
এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অনেকেই দেশে ফিরে আসার আকুতি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছেন।

উহানে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা জানান, উহানের অধিকাংশ দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে তাদের মজুতকৃত খাবারও ফুরিয়ে আসছে। ফলে খুব শীঘ্রই তারা খাবারের
সংকটে পড়বেন।

হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ সৌরভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে জানান, ভাইরাসটি যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে
পড়তে না পারে, সেজন্য উহানের আশেপাশের আরো ১০টি শহরেও একইভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এ শহরে আটকা পড়েছেন
বলে জানান তিনি।

তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে এমন নিউজ বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রচার করা হলেও এ খবর ভিত্তিহীন। আমাদের এখন পর্যন্ত
কোনো প্রকার খোঁজ নেয়া হয়নি। আমরা সবাই কঠিন মুহূর্ত পার করছি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন। একই দাবি করেছেন শামীমা আক্তারসহ
আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি।

হানিফ মিয়া এক বাংলাদেশি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, হে প্রভু! শক্তি দাও… এক ভয়ংকর ট্রমার মধ্যে বসবাস, চারিদিক থেকে যেন সব কিছু সংকুচিত হয়ে আসছে, না পারছি
শারীরিকভাবে দাঁড়াতে, না পারছি মানসিকভাবে… “তুমি কি দোষেরই ফলে, এদশা ঘটালে, লালন বলে দু:খ সহে না যে আর…..

ইমশিয়াত শরিফ নামের পিএইডি করতে যাওয়া এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছে। স্থানীয় সরকার বাস, ট্রেন,
বিমান সব বন্ধ করে দিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এদিকে ইউনিভার্সিটিতে চলছে শীতকালীন ছুটি। ফলে ক্যাস্পাস ফাঁকা, উহান শহরটা একদম
জনশূন্য। আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবুও থেমে নেই জীবন। চলছি চলার মতো করে।’

প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হলো জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি। অসুখ আরও বাড়লে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। করোনাভাইরাস মরণব্যাধি। সবচেয়ে উদ্বেগের
বিষয় হলো এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান শহরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীসহ সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কেউ যদি ভাইরাসে আক্রান্তহ হয়ে দেশে ফেরে সেক্ষেত্রে
সংক্রমণ দেশে ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা রয়েছে । এদিকে চীন থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের বিমানবন্দরেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রবেশের জন্য সতর্ক অবস্থানে আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার
চীন থেকে আসা ১৭৮৩ যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ভাইরাসে এখনও কেউ শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে ন। যুক্তরাজ্যের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস
ডিজিস অ্যানালাইসিসের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীনের ভেতরে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।

তারা বলছেন, ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, যেটি এই ভাইরাসের এত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারার 'একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা।'
একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে আড়াইজন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে।

সংস্থাটি চীনা কর্তৃপক্ষের প্রয়াসের প্রশংসা করেছে, কিন্তু এরকম আশঙ্কাও প্রকাশ করছে যে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ছড়িয়ে পড়ার হার ৬০% কমাতে হবে। তবে বিজ্ঞানীদের
মতে এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করা সহজ নয়।

অন্যদিকে, ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী এবছরে ১১ হাজার মানুষ করোনা
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের অনুমান সত্যি হলে এই সংখ্যা সার্স'এ আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ভাইরাস এর আগে কখনো দেখা যায়নি, তাই এটিকে বলা হচ্ছে ২০১৯-এনকভ, অথবা 'নভেল করোনাভাইরাস'। পশু থেকে মানুষে মাঝে ছড়িয়ে পড়া পর
নতুন ভাইরাস মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এরইমধ্যে বিশ্বের ১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ভাইরাসের সংক্রামনের ফলে আতঙ্ক বেড়েছে বাংলাদেশে। করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত দেশগুলো হচ্ছে ১. ভারত  ২. কানাডা ৩.  ফ্রান্স ৪. অস্ট্রেলিয়া ৫. মালয়েশিয়া ৬. নেপাল ৭. সিঙ্গাপুর ৮. দক্ষিণ কোরিয়া ৯. তাইওয়ান ১০. থাইল্যান্ড ১১. যুক্তরাষ্ট্র ১২.
ভিয়েতনাম ১৩. ম্যাকাও ১৪. জাপান ১৫. ইসরায়েল।

এসকে

  • প্রবাস এর আরও খবর