• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০, ০৪:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০, ০৪:৫৫ পিএম

মুসল্লিদের ওপর মামলার হুমকি

​​​​​​​ম্যানচেস্টার মসজিদ সম্পাদকের পদত্যাগ

​​​​​​​ম্যানচেস্টার মসজিদ সম্পাদকের পদত্যাগ

যুক্তরাষ্ট্রে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদের সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন আশিকুর রহমান (আশিক)। গত ২৬ জুন  তিন বছর মেয়াদি নতুন কমিটি গঠন করার সময় মসজিদে অপ্রীতিকর ঘটনার পর মসজিদ কমিটির কতিপয় ব্যক্তি নিরীহ মুসল্লিদের ওপর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

মসজিদের বিষয় নিয়ে পুলিশ, উকিল, আদালতে যেতে হবে এজন্য তিনি মসজিদ কমিটিতে আসেননি। একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমান  সদস্যকে মসজিদে আসার জন্য বাধা সৃষ্টিসহ সকল ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্যই মসজিদের সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানান আশিক। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

আশিকুর রহমান বলেন, ১৬ জুলাই ২০ ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদে অপ্রাতিষ্ঠানিক একটি সভা আহ্বান করা হয়। ওইদিন সভাপতি নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না। তবে কমিটির ৭/৮ জন উপস্থিত ছিলেন। সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রহমান তুহিনের হাতে আমার পদত্যাগ পত্রটি জমা দেই। পদত্যাগ পত্রে যথারীতি সকলেই ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে থাকেন। আমি ঠিক তাই করেছি। কিন্তু, প্রকৃত কারণ বা মনের ক্ষোভ সেদিন সভায় উপস্থিত সকলের সামনেই বলে এসেছি।

পদত্যাগের মূল কারণ কি জানতে চাইলে আশিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মসজিদের বিষয় নিয়ে পুলিশ, উকিল আর আদালতে যেতে হবে এজন্য তিনি মসজিদ কমিটিতে আসেননি। তিনি কখনও কোন অন্যায় কাজকে সমর্থন দেননা। তার দ্বারা সমাজের ক্ষতিকর বা অনৈতিক কাজ হোক সেটা তিনি কখনোই চান না। একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমান বা সদস্যকে মসজিদে আসার জন্য বাধা সৃষ্টিসহ সকল ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে চান তিনি। মসজিদ করা হয়েছে মানুষকে মসজিদে আসার জন্য, কাউকে বাধা দেওয়ার জন্য মসজিদ তৈরি করা হয় নাই। মসজিদ নিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এমতাবস্থায় সেখানে সম্পাদক পদে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মসজিদের উন্নয়ণকল্পে তিনি যে পরিমাণ শ্রম দিয়েছেন তা মুসল্লিরা চিরদিন মনে রাখবেন। মসজিদের জন্য নিউ ইয়র্ক এবং কানেকটিকাটের বিভিন্ন শহরে মানুষের দ্বারে দ্বারে  গিয়ে ভিক্ষা করেছি। মসজিদ এখন সম্পূর্ণরুপে তৈরি হয়েছে। কমিটিতে এখন আমি-আপনি না থাকলেও বা কলাগাছ দাঁড় করালেও চলবে। বর্তমানে সদস্য চাঁদাসহ মসজিদের বাৎসরিক আয় ৩০/৩৫ হাজার ডলার। গত রমজান মাসে শবে কদরের রাত প্রায় ৫০ হাজার ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা নাই যে মসজিদের জন্য মহিলারা স্বর্ণের গহনা দান করেছেন। গত রমজানে তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ৫০ হাজার ডলার এবং দুই সেট গহনা তিনি সংগ্রহ করেছেন। দীর্ঘ নয় বছর ধরে রমজান মাসে তিনি কোনদিন পরিবারের সাথে ইফতার করতে পারেননি। কাজ থাকলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজে না গিয়ে মসজিদে গিয়ে সবার সাথে ইফতার করেতেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
  
আশিকুর রহমানের পদত্যাগ এবং তড়িঘড়ি করে আরেকজন সম্পাদক নিয়োগের বিষয়টি এতদিনে কেন মুসল্লিদেরকে না জানিয়ে তা গোপন করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বলেন, কমিটির কেউ পদত্যাগ করলে বিষয়টি সকল সদস্যকে জানানোর দায়িত্ব সভাপতির। কমিটিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কাউকে নিয়োগ করার ব্যাপারে ঠিক একই ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উপযুক্ত ব্যক্তি পাওয়া না গেলে তার সহকারি ততদিনে কাজ চালাবেন। এজন্যই প্রতেকটি পদেই একজন করে সহকারি রাখা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন ২০ শুক্রবার বিকেলে তিন বছর মেয়াদি নতুন কমিটি গঠন করার সময় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে 'শয়তান' বলাকে কেন্দ্র করে কমিটির সদস্য ও মুসল্লিদের মাঝে হট্টগোল ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একই মসজিদে এর আগেও কয়েক দফা অপ্রীতিকর ঘটনাসহ কোষাধ্যক্ষের হাতে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত হবার ঘটনাও ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানান, মসজিদের নতুন কমিটি গঠন করার জন্য ওইদিন সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। বাদ আছর সভা শুরু হলে মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান শান্তিপূর্ণভাবেই সভা পরিচালনা করছিলেন। মাগরিব নামাজের পূর্ব পর্যন্ত কোনপ্রকার সমস্যা দেখা যায়নি। বাদ মাগরিব আবারও সভাকার্য শুরু হয়। মুসল্লিদের পক্ষ থেকে চাঁদা ভিত্তিক (গুড স্টান্ডিং) মসজিদের সদস্য ভোটারের মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১ বছর করে সংবিধানের কিছু নিয়মকানুন পরিবর্তনের দাবি উঠে। এ প্রস্তাবটির পক্ষে উপস্থিত অধিকাংশ মুসল্লি তাদের সমর্থন দিলেও কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদধারী তারেক আম্বিয়া ও তার ভাই তৌফিফুল আম্বিয়ার সমর্থক ও নিকটাত্মীয়রা উক্ত প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। উক্ত সাধারণ সভায় সংবিধান সংশোধন ও সংবিধান বহির্ভুত কাযর্ক্রমের উপর মুসল্লিগণ বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। মুসল্লিগণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তারেক আম্বিয়ার ইশারায় তার চাচাতো ভাই মইনুল, এনাম, নাজমুল প্রশ্নকারিদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে নাজেহাল করে তোলেন। এক পর্যায়ে তারেক আম্বিয়া ও মইনুল ইসলাম কয়েকজন মুস্ললিকে উদ্দেশ্যে করে শয়তান বলেন। তাদের এমন কথায় অন্য সদস্য ও মুসল্লিরা প্রতিবাদ করতে গেলে উপয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। মারমুখি হয়ে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চলে উভয় পক্ষে। এক পর্যায়ে প্রচুর হট্টগোল শুরু হয়।

মসজিদ কমিটির সদস্য ও মুসল্লি হারুন আহমেদ ও সরকার মামুন জানান, কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া ও তৌফিফুল আম্বিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই মইনুল, নাজমুল ও এনাম উক্ত শান্তিপূর্ণ সভায় বিশৃংখলার সৃষ্টি করেন। বাংলা সিনেমার খল নায়কদের মতো দুই দফা মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করেন। এতে মুসল্লিগন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি দেখে তারেক-টিপু তাদের লাঠিয়াল চাচাতো ভাইদেরকে মসজিদ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান হট্টগোল থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে অন্যান্যদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কমিটি গঠনের এ সভা ভুন্ডুল হলেও অধিকাংশ মুসল্লিদের অনুপস্থিতিতেই জোরপুর্বক এবং অবৈধভাবে আগামী ৩ বছরের জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমানের কাছে শুক্রবারের উক্ত ঘটনার বর্ণনা জানতে চাওয়া হলে তিনি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, উক্ত ঘটনার জন্য তিনিই দায়ী। কারণ, পদাধিকার বলে তিনি উক্ত সভাটি পরিচালনা করছিলেন। সভাকার্য চলাকালীন সময় দুই গ্রুপের লোকজনই উপস্থিত ছিলেন। এক সময় মইনুল ইসলাম নামের এক মুসল্লি ও সদস্য বলে ওঠেন এখানে অনেক শয়তানও আছে। এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সদস্য ও মুসল্লি হারুন আহমেদ বলেন শয়তান তোমাদের মধ্যেও রয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয় এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মারমুখি হয়ে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চলে উভয় পক্ষে। এক পর্যায়ে প্রচুর হট্টগোল শুরু হয়। তবে তিনি হট্টগোল থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে নিজেকেই দায়ী মনে করেন।

এদিকে, গত বছর ১২ অক্টোবর ১৯ মসজিদ কমিটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া সাবেক পেশ ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদকে অকারণে লাঞ্ছিত করেন। উক্ত ঘটনাটি কানেকটিকাটসহ উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ মুসলমান কমিউনিটিতে প্রচুর সাড়া পড়ে। অনেকেই এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেন।

২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে বায়তুল মামুর মসজিদের পেশ ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জোবায়ের আহমেদ প্রতি সপ্তাহের ন্যায় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ নিচ্ছিলেন। মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে আসার কথা থাকলেও প্রায় ১৫/২০ মিনিট বিলম্বে নিজ ছেলেকে নিয়ে আসেন মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া। তিনি দরজার কড়া নাড়তে থাকেন। ভেতর ক্লাশ চলছিল তাই কড়ার শব্দ বুঝতে পারেননি ইমাম জোবায়ের আহমেদ। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় ইমামের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারেক। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন ইমামকে। ইমাম তাকে ভদ্রভাবে কথার বলার অনুরোধ করলে তিনি আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, এক পর্যায়ে তারেক ইমামকে পশুর সঙ্গে তুলনা করেন। এর কারণে ইমাম জোবায়ের আহমেদ চরম লাঞ্ছিতবোধ করেন। মনে কষ্ট নিয়ে নিজ বাসায় ফিরে যান ইমাম। ওইদিন থেকে তিনি আর মসজিদে আসেননি। পরে অন্য আরেকজন ইমামকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মসজিদ কমিটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়ার ভাই তৌফিফুল আম্বিয়া টিপু তার একটি ফেসবুক পোষ্টের মাধ্যমে ম্যানচেস্টার প্রবাসী বাংলাদেশি মুসল্লিদেরকে 'শয়তান' বলে গালাগালি করেন। 

জাগরণ/এমএইচ

আরও পড়ুন

  • প্রবাস এর আরও খবর