• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ৬, ২০১৯, ০৮:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৬, ২০১৯, ০৮:১১ পিএম

রমজানে খাদ্যপণ্যে ভেজাল রোধে ব্যবস্থা নিন

রমজানে খাদ্যপণ্যে ভেজাল রোধে ব্যবস্থা নিন

পবিত্র রমজান মাসে নানা ধরনের ইফতারির পসরা নিয়ে বসবে বিভিন্ন ব্যবসায়ি। ইফতারিসহ সব ধরনের খাদ্যে ভরে উঠবে ফুটপাত থেকে ছোট বড় হোটেল। খাদ্য ভেজালমুক্ত হোক এমন দাবিও সবার কিন্তু তা কতটুকু কার্যকর হবে?  প্রথমে যদি ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন (২০১৫)  দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলি বা যদি জনগনের দাবির কথাই বলি এই দাবি  পূরণ জরুরি। তার ফলাফল কি হবে?  সিটি করপোরেশন বা সরকারের দায়িত্বশীল মহল কি এ ব্যাপার জানে না?

সবাই জানেন কিন্তু কারো কোন উদ্যোগ খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে পারেনি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন (২০০৯) কঠোরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারলে হয়তো কাজ হতো ।কিন্তু কে করবে এ কাজ?  খাদ্যে ভেজাল দেয় যারা্ সেব অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও সব খাবারে ভেজাল মনে হয় এমন অবস্থায় থাকতো না।  সরকারি পদক্ষেপ রয়েছে। মোবাইল কোর্ট একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে অনেক কাজই সম্ভব হতো। ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারক ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর ২৫(গ) ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয় মাঝে মধ্যে। গণমাধ্যমে সেসব চিত্র দেখাও যায়।

কিন্তু এসব কি আসলে কোন কাজে আসছে?  দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষ ও ভেজালমুক্ত এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তার কোন অংশ বাস্তবায়নে ভুক্তভোগী জনগনের কোন প্রতিনিধি থাকে না। আমলাতান্ত্রিক কাঠামো দিয়ে এসবের বাস্তবায়ন ঘটালে যা হয় তাই হচ্ছে। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না ঠিকমতো। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে দেশের  আপামর জনগণ। যার ব্যর্থতার প্রচ্ছন্ন দায়ভার এসে পড়ছে সরকারের ওপরই। এতে যেমন এক শ্রেণির মুনাফাখোর ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে। তেমনি ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন নিরাপদ খাদ্যের অধিকার থেকে।

আমরা ভিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবরে দেখি বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যেই এখন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। ফরমালিনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল নামের নীরব ঘাতক বিষ মেশানো হচ্ছে ।  প্রিয় খাবার হয়ে উঠছে প্রানঘাতী খাবার। উৎপাদনের স্থল  থেকে বাজার প্রতিটি জায়গায় খাদ্যপন্যের সাথে মেশানো হচ্ছে ব্ষি। মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই মুনাফার কাছে। ফলে বাড়ছে সব দুরারোগ্য ব্যাধি। ক্যান্সার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব মহামারী আকার ধারন করেছে। ইফতারের অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন মুড়ি, খেজুর, ফলসহ বিভিন্ন  পণ্যে কেমিক্যাল দেয়া হয় অসহনীয় মাত্রায়। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, মুড়ি উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে সোডিয়াম হাইড্রো সালফায়েড, যা হাইড্রোজ হিসেবে পরিচিত।  চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, চিনি ও মেডিসিন দিয়ে তৈরি হয়েছে এসব।

যতই আগ্রহ নিয়ে ভেজালবিরোধী অভিযানের কথা বলা হোক না কেন, প্রকৃত অর্থে ছোটখাটো অভিযান ও সামান্য জেল-জরিমানায় বড় বড় এসব অসাধু ব্যবসায়ীর যে তেমন কিছু হয় না, তা আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ দেখে আসছি। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা ছাড়াও ১৪ বছরের জেলের বিধান থাকলেও এগুলো কার্যত খাতা-কলমে রয়ে গেছে। অন্যদিকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এক গবেষণায় বলছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। পরিসংখ্যান যে তথ্য আমাদের সামনে হাজির করছে তা নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। আমরা যদি এখনই এই ভেজালের লাগাম টেনে ধরতে না পারি, তবে ভবিষ্যতে নানা ধরনের অসুখ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে শংকার কথা বারবার গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। মানুষেরও সব কিভাবে যেন গা সওয়া হয়ে গেছে।

 রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পরে এসব ভেজাল খাবার সবচে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিৎ বাজার নিয়ন্ত্রনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। নতুবা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে সুস্থ থাকার কোন পথ নেই। এজন্য যেমন দরকার গণসচেতনতা তেমনি সরকারের নজরদারি। নতুবা এই মৃত্যু খেলা কোনভাবে রোধ করা সম্ভব না।